<article> <p style="text-align: justify;">সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে ২০১২ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ‘নিরাপদ সড়ক চাই’। সম্প্রতি সংগঠনটি জানিয়েছে তারা আর প্রতিবেদন প্রকাশ করবে না। এ নিয়ে সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সজিব ঘোষ </p> <p style="text-align: justify;"><strong>কালের কণ্ঠ :</strong> সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা প্রকাশের সংস্কৃতি আপনার সংগঠন থেকেই শুরু। হঠাৎ করে প্রতিবেদন প্রকাশ না করার সিদ্ধান্ত কেন নিলেন? </p> <p style="text-align: justify;"><strong>ইলিয়াস কাঞ্চন :</strong> আমরা যখন থেকে শুরু করি তখন থেকেই প্রতিবেদনের শুরুতেই বলে এসেছি, আমরা যে প্রতিবেদন দিচ্ছি এটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন নয়। আমরা যেভাবে যে পদ্ধতিতে তথ্য সংগ্রহ করছি, সেটাও পূর্ণাঙ্গ নয়। সংবাদমাধ্যম থেকে আমরা তথ্য সংগ্রহ করতাম। সড়ক দুর্ঘটনার সব তথ্য পত্র-পত্রিকায় আসে না। প্রতিদিনের সংবাদের গুরুত্ব অনুযায়ী, আপনারা পত্রিকার কার্যক্রম পরিচালনা করেন।</p> </article> <p style="text-align: justify;">অনেক সময়ে দুর্ঘটনায় এক-দুজন মারা গেলে পত্রিকায় গুরুত্ব পায় না। এখানে বিশাল একটি শূন্যতা থেকে যায়। আমাদের পক্ষ থেকে আসলে হাসপাতালের তথ্য প্রতিবেদনে দেওয়া সম্ভব হয় না।</p> <article> <p style="text-align: justify;"><strong>কালের কণ্ঠ :</strong> কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতার কারণে আপনারা পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দিতে পারতেন না?</p> <p style="text-align: justify;"><strong>ইলিয়াস কাঞ্চন :</strong> আমাদের প্রতিবেদন পুরো ঠিক না, তা-ও আমরা কাজটি করতাম, কারণ কেউ করত না। এমনকি সরকারও করত না। এটি কঠিন কাজ; অর্থনৈতিক বিষয় জড়িত, এখন আধুনিক প্রযুক্তির ব্যাপার আছে, তথ্য সংগ্রহ করার ক্ষেত্রে জনবলের বিষয় আছে—এগুলো সব সময় আমরা বলে আসছি। আমাদের যদি সরকার পর্যাপ্ত সহযোগিতা করে তাহলে এটি আমরা সঠিকভাবে করতে পারব। আর যদি আমাদের সহযোগিতা না করে তাহলে সরকারকে নিজেই করতে হবে। সরকারের লক্ষ্য ছিল দুর্ঘটনা অর্ধেকে নামিয়ে আনা।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">এখন আপনি যদি সংখ্যাই না জানেন তাহলে কমাবেন কিভাবে! প্রথমেই তো জানতে হবে কত দুর্ঘটনায় কত মানুষ মারা যায়, আহত হয়। আমরা এভাবে করে হলেও মোটামুটি একটা চেষ্টা করতাম। </p> <p style="text-align: justify;"><strong>কালের কণ্ঠ :</strong> প্রতিবেদন প্রকাশ না করার সিদ্ধান্ত সম্প্রতি আমাদের জানিয়েছেন। আপনি এই সিদ্ধান্ত কবে নিয়েছেন?</p> <p style="text-align: justify;"><strong>ইলিয়াস কাঞ্চন : </strong>এ বছরই নিয়েছি।</p> <p style="text-align: justify;"><strong>কালের কণ্ঠ :</strong> বেসরকারি একাধিক সংগঠনের পাশাপাশি সরকারি প্রতিষ্ঠান বিআরটিএ ও পুলিশের তথ্যভাণ্ডার রয়েছে। তাদের তথ্য ও প্রক্রিয়া সম্পর্কে আপনার পর্যবেক্ষণ কী?</p> <p style="text-align: justify;"><strong>ইলিয়াস কাঞ্চন :</strong> দেখুন, সরকারকে আমরা সব সময় বলে এসেছি, তারা হয় আমাদের দিয়ে করাক বা তারাই সঠিকভাবে করুক। পুলিশের তথ্য এতটাই অগ্রহণযোগ্য, যেটা বলার মতো না। যেখানে জাতিসংঘ বলে ২১ হাজার, ২৪ হাজার; সেখানে পুলিশ তথ্য দেয় আড়াই হাজার, পৌনে তিন হাজার। এ নিয়ে সরকারের সঙ্গে বহুবার কথা হয়েছে। সরকারি সংস্থাগুলো জাতিসংঘের তথ্যকে গ্রহণ করতে চায় না।</p> <p style="text-align: justify;">আবার আমাদের দেখাদেখি অন্য সংগঠনগুলো প্রতিবেদন প্রকাশ শুরু করল। কিন্তু কারো তথ্যই সঠিক না। এটা পূর্ণাঙ্গ না, যে পদ্ধতিতে করছি সেটা সঠিক না। এ কথাগুলো কিন্তু আমরা শুরু থেকেই বলে আসছি। কিন্তু অন্য সংগঠনগুলো এমন কথা বলছে না। তারা যে তথ্য দিচ্ছে, তারা বলছে তাদেরটাই ঠিক। প্রত্যেকেই বলছে তাদের তথ্য সঠিক। আমরা বেসরকারি পর্যায়ে যেভাবে তথ্য সংগ্রহ করেছি, সরকারও এবার একইভাবে তথ্য সংগ্রহ করেছে। সরকারও সংবাদমাধ্যমকে ভিত্তি করেছে, হাসপাতালের তথ্য নেয়নি। জাতিসংঘ তথ্য পায় কিভাবে? তারা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে তথ্য নেয়। সরকারের তিন মন্ত্রণালয় স্বাস্থ্য, স্বরাষ্ট্র ও সড়কের তথ্যের কোনো মিল নেই! </p> <p style="text-align: justify;"><strong>কালের কণ্ঠ :</strong> কারো তথ্যের সঙ্গেই কারো তথ্যের কোনো মিল নেই। এর সমাধান কী করে সম্ভব?</p> <p style="text-align: justify;"><strong>ইলিয়াস কাঞ্চন :</strong> একটি সেল গঠন করতে হবে। সেখানে সরকার চাইলে আমাদেরও অন্তর্ভুক্ত করতে পারে। তিনটি মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি বিশেষজ্ঞদের নিয়ে সেই সেলের কার্যক্রম পরিচালনা করা হলে এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। এতে ঘটনার সঠিক চিত্র আসবে বলে মনে করি।</p> <p style="text-align: justify;"><strong>কালের কণ্ঠ :</strong> এখন তাহলে আপনাদের সাংগঠনিক কার্যক্রমে পরিবর্তন আসবে। কেননা প্রতিবেদন করতে সারা বছর নিয়মিত এক ধরনের কর্মকাণ্ড পরিচালিত হতো। </p> <p style="text-align: justify;"><strong>ইলিয়াস কাঞ্চন : </strong>হয়তো আর প্রতিবেদন প্রকাশ করব না। কিন্তু আমাদের কার্যক্রম চলতে থাকবে। যত দিন আমাদের মনে হবে সরকার সঠিক তথ্য প্রকাশ করতে পারছে না তত দিন আমরা আমাদের গবেষণার জন্য হলেও অভ্যন্তরীণ কার্যক্রম পরিচালনা করব। তবে আমাদের গবেষণার ফল প্রতিবেদন আকারে প্রকাশ করা হবে না। আমাদের নিজেদের দেখার বিষয় আছে, তাই যতটুকুই হোক সেকেন্ডারি তথ্য দিয়ে হলেও আমরা আমাদের মতো করে গবেষণা চালিয়ে যাব। কিন্তু প্রকাশ করব না, কারণ এটা দিয়ে উপকার হবে না।</p> <p style="text-align: justify;"><strong>কালের কণ্ঠ : </strong>প্রতিবেদন প্রকাশ না করার ঘোষণার পর থেকেই এক ধরনের আলোচনা চলছে, সেটা অনেকটা এ রকম—সরকারের থেকে কোনো ধরনের সুবিধা পাওয়ার আশায় বা সরকারের চাপে আপনারা এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কী?</p> <p style="text-align: justify;"><strong>ইলিয়াস কাঞ্চন : </strong>এই ধরনের প্রশ্নে আমি লজ্জা বোধ করি। আয়নায় যার চেহারা যেমন সে সেই ধরনের চিন্তা করে। যারা এ ধরনের ভাবনা ভাবছে তারা আমাদের সম্পর্কে খুব বেশি কিছু জানে না। তাই তারা হয়তো আমাদের সে রকম ভাবে।</p> </article>