<p>অস্ত্র মামলা থেকে রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহেদ ওরফে সাহেদ করিমকে খালাস দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিচারিক আদালত সাহেদকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছিলেন। এ রায়ের বিরুদ্ধে সাহেদের আপিল মঞ্জুর করে বৃহস্পতিবার বিচারপতি আশীষ রঞ্জন দাস ও বিচারপতি মো. রিয়াজ উদ্দিন খানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন। </p> <p>আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সারওয়ার হোসেন বাপ্পী। সাহেদের আপিলের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস এম শাহজাহান ও শাহ মঞ্জুরুল হক।</p> <p>আইনজীবী এস এম শাহজাহান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘অস্ত্রটি উদ্ধার করা হয়েছিল একটি পরিত্যক্ত গাড়ির ভেতর থেকে। সাহেদ তখন গোয়েন্দা পুলিশের হেফাজতে রিমান্ডে ছিলেন। উদ্ধারকৃত অস্ত্রটি তাঁর ছিল না। আর যে গাড়ি থেকে অস্ত্রটি উদ্ধার করা হয়েছিল, সে গাড়িটিও তাঁর না। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ- বিআরটিএ থেকে গাড়ির রেজিস্ট্রেশন নাম্বারসহ যেসব কাগজপত্র আনা হয়েছে, তাতে দেখা গেছে ওই গাড়ির মালিকের নাম সাহেদ হলেও ঠিকানা ভিন্ন। ফলে এই গাড়ি এবং অস্ত্র কখনোই সাহেদের ছিল না। এসব যুক্তিতে খালাস চেয়েছিলাম। আদালত আমাদের যুক্তি গ্রহণ করে তাঁকে খালাস দিয়েছেন।’</p> <p>আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক বলেন, ‘গাড়িটি ছিল উত্তরায়। গাড়ির চাবি উদ্ধার দেখানো হয়েছে ঢাকার ডিবি কার্যালয় থেকে। আর অস্ত্র উদ্ধার দেখানো হয়েছে গাড়ি থেকে। পড়ে মামলার যে জব্দ তালিকা করা হয়েছে সেটি যথাযথভাবে করা হয়নি। এর থেকে প্রমাণ হয় গাড়ি, অস্ত্র কোনোটাই সাহেদের ছিল না। মোটকথা রাষ্ট্রপক্ষ ঘটনাটি প্রমাণ করতে পারেননি। তাই আদালত তাঁর আপিল মঞ্জুর করে খালাস দিয়েছেন।’</p> <p>২০২০ সালের ৭ জুলাই রাজধানীর উত্তরার রিজেন্ট হাসপাতালে অভিযান চালায় র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‍্যাব) ভ্রাম্যমাণ আদালত। হাসপাতাল থেকে ভুয়া করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় র‍্যাব বাদী হয়ে সাহেদসহ ১৭ জনের নামে উত্তরা পশ্চিম থানায় মামলা করে। মামলার ৯ দিনের মাথায় ১৫ জুলাই সাহেদকে সাতক্ষীরা থেকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। পরদিন ১৬ জুলাই সাহেদের ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) সাহেদকে নিয়ে ১৮ জুলাই উত্তরা পশ্চিম থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে একটি পিস্তল ও মাদক উদ্ধার করে। পরদিন উত্তরা পশ্চিম থানায় ১৮৭৮ সালের অস্ত্র আইনে মামলা করে র‌্যাব। মামলার পর ১২ দিনের মাথায় ৩০ জুলাই এ মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। ১৯ আগস্ট অভিযোগপত্র আমলে নেন আদালত। </p> <p>অভিযোগপত্রে বলা হয়, সাহেদের স্বভাব-চরিত্র ভালো নয়। নিশান গাড়ির ভেতরে লুকিয়ে রাখা অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। পড়ে ২০২০ সালের ২৭ আগস্ট সাহেদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে ১৪ জন সাক্ষীর মধ্যে ১১ জনকে আদালতে হাজির করা হয়। ওই বছর ১৫ সেপ্টেম্বর এই মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়। পড়ে আসামি ও রাষ্ট্রপক্ষ থেকে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে আদালত ২৮ সেপ্টেম্বর রায় দেন। রায়ে সাহেদকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন ঢাকা মহানগরের ১ নম্বর বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক কে এম ইমরুল কায়েশ। অস্ত্র আইনের ১৯ (ক) ধারায় যাবজ্জীবন ও (চ) ধারায় সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। দুই ধারার সাজা একসঙ্গে চলবে বলে দেওয়া হয় রায়ে। এছাড়া উদ্ধার করা অস্ত্রটি বাজেয়াপ্ত করা হয়। আর যে গাড়ি থেকে অস্ত্রটি উদ্ধার করা হয়েছিল, সে গাড়ির মালিকানা যাচাই করে পরবর্তী পদক্ষেপ নিতেও বলে দেওয়া হয় রায়ে। পড়ে যাবজ্জীবনের সাজা থেকে খালাস চেয়ে হাইকোর্টে আপিল করেন সাহেদ। সে আপিল মঞ্জুর করে খালাসের রায় দিলেন উচ্চ আদালত।</p>