<p>হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতা ‘কুরআনের নূর, পাওয়ার্ড বাই বসুন্ধরা গ্রুপ’ প্রথম আসরে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন ঢাকা উত্তরের মারকাজুল ফয়জুল কোরআন মাদরাসার শিক্ষার্থী হাফেজ নুরুদ্দীন মোহাম্মদ জাকারিয়া। পুরস্কার হিসেবে তার হাতে তুলে দেওয়া হয় ১০ লাখ টাকা।</p> <p>গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) অনুষ্ঠিত হয় প্রতিযোগিতার সমাপনী অনুষ্ঠান ও ইসলামিক সম্মেলন। অনুষ্ঠানে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কারের নগদ অর্থ ও সনদপত্র তুলে দেওয়া হয়।</p> <p>বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ মুসল্লি কমিটির এই আয়োজনে পৃষ্ঠপোষকতা করে দেশের শীর্ষ শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপ। পবিত্র রমজান মাসজুড়ে বেসরকারি টেলিভিশন নিউজটোয়েন্টিফোরে হাফেজদের এই প্রতিযোগিতা সম্প্রচারিত হয়।</p> <p><img alt="হাফেজ" height="167" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/Harun/May-2023/21-05-2023/Skin-01.jpg" style="float:left" width="400" />প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় বিজয়ী ঢাকা উত্তরের মো. শাহরিয়ার নাফিস সালমান পেয়েছে সাত লাখ টাকা। তৃতীয় কুমিল্লার শামসুল উলুম তাহফিজুল হিফজ কোরআন মাদরাসার মো. মোশাররফ হোসাইন পেয়েছে পাঁচ লাখ টাকা।</p> <p>চতুর্থ ও পঞ্চম হয়েছে ঢাকা দক্ষিণের মারকাজুত তাহফিজ মাদরাসার মো. নাসরুল্লাহ আনাছ ও মোহাম্মদ বশীর আহমদ। পুরস্কার হিসেবে তারা পেয়েছে দুই লাখ টাকা করে। সেরা আটের বাকি তিনজন ময়মনসিংহের মো. লাবিব আল হাসান, সিলেটের মো. আবু তালহা আনহার ও ঢাকা দক্ষিণের আবদুল্লাহ আল মারুফ পেয়েছে এক লাখ টাকা করে। অর্থ পুরস্কারের পাশাপাশি বিজয়ীদের বিশেষ সম্মাননা ও সনদপত্র দেওয়া হয়।</p> <p>পরবর্তী সময়ে তারা বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে মা-বাবাসহ পবিত্র ওমরাহ পালনের সুযোগ পাবে। প্রতিযোগিতার ৯ম থেকে ৪৫তম স্থান অধিকারীরাও পেয়েছে আর্থিক সম্মাননা।</p> <p>গতকাল সমাপনী অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান। বক্তব্যকালে তিনি একটি ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আগ্রহের কথা ব্যক্ত করেন। এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিলে তিনি জমি দান করবেন বলে জানান।</p> <p>তিনি বলেন, বাংলাদেশের হাফেজদের কণ্ঠ যাতে সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে, বসুন্ধরা গ্রুপ সেই উদ্যোগ নেবে। তিনি প্রতিবছর এই প্রতিযোগিতা আয়োজনের পাশাপাশি আটজন থেকে বাড়িয়ে ১৫ জনকে পুরস্কৃত করার পরামর্শ দেন। হাফেজরা যাতে আরবির পাশাপাশি বাংলায়ও পবিত্র কোরআনকে ধারণ করে সে পরামর্শও দেন তিনি।</p> <p>আহমেদ আকবর সোবহান আরো বলেন, ‘আমরা বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ১০৫ বিঘা জমিতে একটি কবরস্থান করছি। মক্কা-মদিনার কবরস্থানের আদলে যেন আমরা এটি পরিচালনা করতে পারি।’</p> <p>অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি সায়্যিদ মুফতি আফফান মানসুরপুরী বলেন, ‘সৌদি, দুবাইয়ের মতো বাংলাদেশেও কোরআনের হাফেজদের নিয়ে প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠান হচ্ছে। এর কারণ হলো—বসুন্ধরা গ্রুপের মতো খাদেমে কোরআন এ দেশে রয়েছে। কোরআনের পথে অর্থ ব্যয়ের সৌভাগ্য সবার হয় না। আল্লাহ যাকে পছন্দ করেন, তাকেই এ সৌভাগ্য দিয়ে থাকেন।’</p> <p>তিনি আরো বলেন, ‘ইজ্জত চাইলে, নাজাত চাইলে ও সফলতা চাইলে পবিত্র কোরআনের সঙ্গে যুক্ত থাকতে হবে। কোরআন থেকে দূরে গিয়ে ইজ্জত পাওয়া যাবে না। সফলতা পাওয়া যাবে না।’</p> <p>অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ মুসল্লি কমিটির প্রধান উপদেষ্টা সায়েম সোবহান আনভীর। তিনি বলেন, ‘ইসলামের আদর্শ এবং পবিত্র কোরআনের বাণী বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দিতে আমি আপ্রাণ চেষ্টা করব।’ এই প্রতিযোগিতাকে ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিকীকরণের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন তিনি।</p> <p>মিসর থেকে আসা কারি ড. আহমাদ আহমাদ নাইনা মনোমুগ্ধকর তেলাওয়াতের মাধ্যমে পুরো অনুষ্ঠানস্থল বিমোহিত করেন। এর আগে বিশ্বজয়ী হাফেজ সালেহ আহমদ তাকরীমের তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় মূল অনুষ্ঠান। ইসলামের কল্যাণে বসুন্ধরা গ্রুপ—এই শিরোনামে অডিও-ভিজ্যুয়ালও প্রদর্শিত হয়।</p> <p>বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব মাওলানা মুফতি রুহুল আমিন বলেন, ‘কুরআনকে যাঁরা মর্যাদা করেছেন আল্লাহ যেন তাঁদের কেয়ামতের দিন আরশের আশপাশের জায়গায় রাখেন।’</p> <p>বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম মুফতি মুহিব্বুল্লাহিল বাকী আন নদভী বলেন, এই প্রতিযোগিতার বিষয়ে বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীরকে জানালে তিনি পরিধি বৃদ্ধির পরামর্শ দেন।</p> <p>তিনি আরো বলেন, বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি ইসলামিক ইকোনমিকস রিসার্স সেন্টার স্থাপনের জন্য জায়গা দিয়েছেন। গরিব-সামর্থ্যহীনরা যাতে হাফেজ হতে পারে, এ জন্য একটি ট্রাস্ট করার আশ্বাসও দিয়েছেন।</p> <p>বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ মুসল্লি কমিটির সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা হাজি মো. ইয়াকুব আলী বলেন, ‘সারা দেশে হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতার পরিকল্পনা ছিল জাতীয় মসজিদ মুসল্লি কমিটির। কিন্তু অর্থাভাবে তা করা যাচ্ছিল না। পরিকল্পনার কথা সায়েম সোবহান আনভীর সাহেবকে জানাই। তিনি আমাদের পাশে এসে দাঁড়ান।’</p> <p>চট্টগ্রামের হাটহাজারীর দারুল উলুম মুইনুল ইসলাম মাদরাসার মুহতামিম আল্লামা মুহাম্মদ ইয়াহহিয়া ও  শাইখুল হাদিস আল্লামা শেখ আহমদ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। কারি শায়খ আহমদ বিন ইউসুফ আযহারীও গতকাল কোরআন তেলাওয়াত করেন।</p>