<p><img alt="" src="https://www.kalerkantho.comhttp://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/ckfinder/innerfiles/images/Print%20Version%20Online/print%20/2022/12.December/31-12-2022/1/kalerkantho-ft-5a.jpg" style="float:left" />বিদায়ি বছর ২০২২ সালের শেষ সূর্যাস্ত আজ। কাল ভোরে সূর্যোদয়ে শুরু হবে নতুন বছর ২০২৩ সাল। দেশের যোগাযোগ খাতে অবকাঠামো উন্নয়নে বড় দুটি সাফল্য এসেছে এই বছর। একটি হলো বছরের মাঝামাঝি সময়ে স্বপ্নের পদ্মা সেতুর উদ্বোধন। আরেকটি বছরের শেষ প্রান্তে দেশে প্রথমবারের মতো দ্রুতগতির মেট্রো রেল চালু।</p> <p>নানা প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি, সাফল্য-ব্যর্থতা, অনাকাঙ্ক্ষিত রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বজুড়ে নেতিবাচক প্রভাব, দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে কিছু উত্তাপ, অনেক মৃত্যু-জন্ম, প্রতিশ্রুতি ও সম্ভাবনার সাক্ষী হয়ে বিদায় নিচ্ছে ২০২২ সাল।</p> <p>নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার এবং আগামী দিনগুলোতে সমৃদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাংলাদেশ গড়ে তোলার শপথ নেওয়ার বছরও ২০২২ সাল। জাতিরাষ্ট্র গঠনে বাঙালির বিজয়ের ৫১ বছর পূর্তির দিন গত ১৬ ডিসেম্বর এই শপথ নেওয়া হয়।</p> <p style="text-align: center;"><img alt="" src="https://www.kalerkantho.comhttp://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/ckfinder/innerfiles/images/Print%20Version%20Online/print%20/2022/12.December/31-12-2022/1/kalerkantho-ft-5b.jpg" /></p> <p><strong>উন্নয়নের মাইলফলক :</strong> ২০২২ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের তথা বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং নির্মাণ প্রকল্প পদ্মা সেতু বা পদ্মা বহুমুখী সেতু। ৬.১৫ কিলোমিটারের এই সেতু দেশের দীর্ঘতম এবং বিশ্বের গভীরতম পাইলের সেতু। ২০২২ সালের ২৫ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাওয়া প্রান্ত দিয়ে টোল দিয়ে প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে পদ্মা সেতুতে পা রাখেন এবং এর মাধ্যমে সেতুটি উন্মুক্ত করা হয়। পদ্মা নদীর ওপর নির্মিত এই বহুমুখী সেতু মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের সঙ্গে শরীয়তপুর ও মাদারীপুর জেলাকে এবং একই সঙ্গে দেশের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ এলাকাকে সরাসরি স্থলপথে যুক্ত করেছে। পদ্মা সেতুর এই সুবিধা পাচ্ছে সারা দেশের মানুষ।</p> <p>দেশের যোগাযোগব্যবস্থার আরেকটি মাইলফলক স্থাপিত হয় বছরের শেষ প্রান্তে, ২৮ ডিসেম্বর। এদিন যানজটের শহর হিসেবে খ্যাত ঢাকায় প্রথমবারের মতো আংশিকভাবে চালু হয় মেট্রো রেল। উত্তরার দিয়াবাড়ী থেকে আগারগাঁও অংশ ২৮ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেন। একই সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম যাত্রার অংশ নেন তিনি। পরের দিন ২৯ ডিসেম্বর জনসাধারণের চলাচলের জন্য এটি খুলে দেওয়া হয়।</p> <p>এর আগে ৭ নভেম্বর দেশের ২৫ জেলায় নবনির্মিত ১০০ সেতু এবং গত ২১ ডিসেম্বর দেশের ৫০টি জেলায় ২০২১.৫৬ কিলোমিটার সম্মিলিত দৈর্ঘ্যের ১০০টি সড়ক ও মহাসড়ক উদ্বোধন দেশের যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নে নতুন মাত্রা যোগ করে।</p> <p>বিদায়ি বছরে দেশের উন্নয়নের ক্ষেত্রে আরেকটি মাইলফলক ছিল পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র। কয়লাভিত্তিক এই কেন্দ্রে প্রথমবারের মতো ব্যবহার করা হয়েছে আলট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তি। প্রধানমন্ত্রী গত ২১ মার্চ এই বিদ্যুৎকেন্দ্র উদ্বোধন করেন।  </p> <p><strong>বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতির ঢেউ দেশেও :</strong> বিদায়ি বছরের ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে আন্তর্জাতিক বাজারে সব পণ্যের সরবরাহ কমে গিয়ে দাম বাড়তে শুরু করে। মার্চে তা আরো বেড়ে যায়। এতে বিশ্বজুড়ে মূল্যস্ফীতির হারও বাড়তে থাকে। এর ঢেউ লাগে দেশেও। আমদানিজনিত মূল্যস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণে এবং ডলারের সংকট মোকাবেলায় এপ্রিল থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক সীমিত আকারে এলসি মার্জিন আরোপ করে। জুলাইয়ের শুরুতে তা আরো বাড়িয়ে বিলাসী পণ্যে শতভাগ এলসি মার্জিন আরোপ করে। এসব পদক্ষেপের ফলে সেপ্টেম্বর থেকে মূল্যস্ফীতির হার কমতে থাকে।</p> <p>২০২২ সালের এপ্রিল মাসেই দেশে মূল্যস্ফীতির অঙ্ক ৬ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়। মে, জুন, জুলাই মাসে তা ক্রমাগতভাবে বেড়ে আগস্টে গিয়ে পৌঁছে ৯.৫২ শতাংশে, যা ছিল গত ১১ বছরের মধ্যে দেশের সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি। তবে অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে এই মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমতির দিকে থাকলেও তা এখনো ৮.৫ শতাংশের ওপরে। এর মধ্যে খাদ্যে ৮.১৪ শতাংশ এবং খাদ্যবহির্ভূত খাতে ৯.৯৮ শতাংশ।</p> <p><strong>জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি ও লোড শেডিং :</strong> শতভাগ বিদ্যুতায়নের ঘোষণার পর দেশে বিদায়ি বছরে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত বেশি আলোচিত ছিল। জ্বালানি তেল ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি জীবনযাপনের ব্যয় বাড়িয়ে দেয়। বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়ায় জুলাই থেকে স্পট মার্কেট (খোলাবাজার) থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি বন্ধ করে দেয় সরকার। এতে বেশ কিছু গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হয়ে যায়। পাশাপাশি জ্বালানি সাশ্রয়ে ব্যয়বহুল তেলভিত্তিক কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রাখে সরকার। এতে বছরের টানা পাঁচ-ছয় মাস দেশ লোড শেডিংয়ে বিপর্যস্ত ছিল। রাজধানীতে গড়ে পাঁচ-ছয় ঘণ্টা, বিভাগীয় ও জেলা শহরে আট থেকে ১০ ঘণ্টা লোড শেডিং ছিল। গ্রাম পর্যায়ে লোড শেডিংয়ের প্রভাব আরো ভয়াবহ ছিল। লোড শেডিংয়ের ফলে শিল্প-কারখানার উৎপাদনও ব্যাহত হয়। যদিও বছর শেষে শীতের কারণে চাহিদা কমায় লোড শেডিং তেমন ছিল না।</p> <p><strong>ডেঙ্গু ও করোনা : </strong>২০২২ সালের ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয় ৬২ হাজার ৩২১ জন। মৃত্যু হয় ২৮১ জনের। এর মধ্যে নভেম্বরে মৃত্যু হয় ১১৩ জনের, যা দেশের ইতিহাসে কোনো একক মাস হিসেবে সবচেয়ে বেশি।</p> <p>একই সময় পর্যন্ত করোনাভাইরাস শনাক্ত হয় চার লাখ ৬০ হাজার ৮০৬ জনের। মারা যায় এক হাজার ৪৫৮ জন। তবে আগের বছরের তুলনায় বিদায়ি বছরে সংক্রমণ ও মৃত্যু কম ছিল।</p> <p><strong>চট্টগ্রামে বিএম ডিপোতে আগুন :</strong> বিদায়ি বছরে অগ্নিকাণ্ডের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা ছিল চট্টগ্রামের বিএম কনটেইনার ডিপোর অগ্নিকাণ্ড। গত ৪ জুন রাতে সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ি ইউনিয়নের কেশবপুর গ্রামে এই কনটেইনার ডিপোতে আগুনের ঘটনায় একের পর এক বিস্ফোরিত হয় ৪০০ কনটেইনার। ডিপোতে থাকা রাসায়নিকের কারণে দ্রুত ছড়িয়ে পড়া ওই আগুন ৮৬ ঘণ্টা পর বিভিন্ন বাহিনীর চেষ্টায় নেভানো হয়। এ দুর্ঘটনায় ৫১ জনের মৃত্যু হয়। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের ১৩ জন সদস্যও রয়েছেন। অন্যদের প্রাণ বাঁচাতে গিয়ে তাঁরা মারা যান। মারা যাওয়া ব্যক্তিরা প্রায় সবাই শ্রমিক ও ডিপোর কর্মকর্তা-কর্মচারী। এর বাইরে এ দুর্ঘটনায় আহত হয় সংশ্লিষ্ট এলাকার দুই শতাধিক মানুষ। এ দুর্ঘটনায় অব্যবস্থাপনা ও গাফিলতির অভিযোগ এনে বেসরকারি এ টার্মিনালের আটজনকে আসামি করে মামলা করে পুলিশ।</p> <p><strong>ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং :</strong> ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং ছিল বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট একটি ক্রান্তীয়-গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঘূর্ণিঝড়। গত ২৪-২৫ অক্টোবর এই ঘূর্ণিঝড় বাংলাদেশকে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির দিকে ঠেলে দেয়। এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে দেশে ১৬ জেলায় দুই পুলিশ সদস্যসহ অন্ত ৩৫ জনের মৃত্যু হয়। সবচেয়ে বেশি প্রাণহানির ঘটনা ঘটে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে। দেশের ৪১৯টি ইউনিয়নে ১০ হাজারে বেশি ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় ছয় হাজার হেক্টর ফসলি জমি এবং এক হাজার মাছের ঘের। বিভিন্ন স্থানে বেশ কিছু গাছপালা ও বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়ে। সারা দেশের ৮০ লাখের বেশি গ্রাহক দীর্ঘ সময় ধরে বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন ছিল। মোবাইল ফোন সেবাও ব্যাহত হয়।  </p> <p><strong>অন্যান্য আলোচিত ঘটনা : </strong>গত ১৯ সেপ্টেম্বর ছিল ক্রীড়ায় সাফল্যের ক্ষেত্রে দেশবাসীর জন্য একটি গর্বের দিন। এদিন সাফ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপ প্রতিযোগিতার ফাইনালে বাংলাদেশ ও নেপাল মুখোমুখি হয়। এতে বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা ফুটবল দল নেপালকে ৩-১ গোলের ব্যবধানে পরাজিত করে তাদের প্রথম শিরোপা অর্জন করে।  </p> <p>বিদায়ি বছরের আলোচিত অন্যান্য ঘটনার মধ্যে রয়েছে গত ২৫ সেপ্টেম্বর পঞ্চগড়ের বোদায় করতোয়া নদীতে নৌকাডুবির ঘটনায় ৬০ জনের বেশি যাত্রীর মৃত্যু। মহালয়া উপলক্ষে ওই দিন প্রতিবছরের মতো বরদ্বেশ্বরী মন্দিরে ধর্মসভায় যোগ দিতে নৌকাযোগে অন্য পারে যাচ্ছিল যাত্রীরা। নদীর মাঝপথে অতিরিক্ত যাত্রীর কারণে নৌকাটি ডুবে গেলে এই বিয়োগান্তক দুর্ঘটনা ঘটে।</p> <p>বিদায়ি বছরের শেষ দিকে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সভা-সমাবেশ, গণমিছিল, শান্তি সমাবেশ রাজনৈতিক ক্ষেত্রে উত্তাপ ছড়ায়।</p>