সিলেটে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবির মুখেও ভাইস চ্যান্সেলরের ভূমিকার কঠোর সমালোচনা করেছেন মাহমুদুর রহমান মান্না। আজ রবিবার দুপুরে এক আলোচনাসভায় নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি তুলে ধরে এই মন্তব্য করেন। জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে আসাদ পরিষদের উদ্যোগে শহীদ আসাদের স্মরণে এই আলোচনাসভা হয়।
মান্না বলেন, ‘শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অনশন ধর্মঘট করছে।
বিজ্ঞাপন
মান্না আরো বলেন, 'আমি পদত্যাগ করতে পারি যদি সরকার বলে। ভাবতে পারেন! কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির ক্ষমতা নাই সরকারের অনুমতি ব্যতিরেকে এমনকি পদত্যাগ করতে। ওইখানে যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা তাঁর অসদাচরণের কারণে, তাঁর দুর্নীতির কারণে তাঁকে পথের মধ্যে, রোদের মধ্যে দাঁড় করিয়ে রাখে ২৪ ঘণ্টা, তার পরও তিনি বলতে পারেন না আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি থাকতে পারব না। এতই দাসের দাস। ’
দেশের শিক্ষাব্যবস্থার প্রসঙ্গ টেনে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘শিক্ষাকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে? আমাদের এখানে তিনটা থার্ড ডিভিশন, তিনটা থার্ড ক্লাস পাওয়ার পরও বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি পাচ্ছেন, ইউনিভার্সিটির শিক্ষক হচ্ছেন। এই সচিবালয়ে ঢুকে দেখেন সচিবালয়ে সচিব আছেন যিনি তিনটা থার্ডক্লাস পেয়েছেন। মেধার কি কোনো বিকল্প আছে? যাঁর যেখানে যোগ্যতা তিনি সেখানে যাবেন তবেই তো দেশ বলেন, সমাজ বলেন, রাষ্ট্র বলেন সেটা গড়ে উঠবে। না হলে তো হবে না। ’
‘আর আমাদের এমনি অসাধারণ যোগ্যতাসম্পন্ন এক শ মানুষ খুঁজে নেন কেবল তাঁকেই ভোট দিতে পারে- এই দুটো লোক সবচেয়ে অযোগ্য, এই দুটো লোক সবচেয়ে দুর্নীতিবাজ, এই দুটো সবচেয়ে দালালিতে এক্সপার্ট তাকে নিয়ে মন্ত্রী বানিয়ে দিতে পারবেন। মন্ত্রীগুলোর চেহারা দেখছেন না। পুরো দেশকে এইভাবে নৈতিকভাবে ধ্বংস করে দিয়েছে তারা। প্রশাসনের কোনো যোগ্যতা নাই, তাদের কোনো নৈতিকতা নাই, তাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য নাই, তাদের কোনো কাজ করবার ক্ষমতা নাই। তারা দেশকে সামনের দিকে নিয়ে যাবেন কী রকম করে?’
এই অবস্থা থেকে পরিবর্তন আসবে উল্লেখ করে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘আজ হোক, কাল হোক সে তো যাবেই। যাওয়ার পরে কে আসবে? মানুষ তো জানতে চাইতেই পারে। ওই ছাত্র-ছাত্রীরা অনশন করছে কিংবা অনশন করেছে কোটা সংস্কারের জন্য, যারা এখন পর্যন্ত নিরাপদ সড়কের আন্দোলন করে, যারা ৩২ পুলিশের চাকরির জন্য আন্দোলন করে…। একেবারে তাদেরকে নিশ্চয়তা দিতে হবে আমরা যদি ক্ষমতায় যাই তাহলে এসব করব। আপনারা বলেছেন কী- আপনারা কী করবেন?’
‘দুই বছরের করোনায় সাড়ে তিন কোটি লোক দরিদ্র হয়েছে। এই দরিদ্র হ্রাসের জন্য আপনারা কী করবেন? আমি নিজের কথা বলি। আমি যদি ক্ষমতায় যাই ৬ কোটি মানুষকে একদম নিচে থেকে শুরু করে এক হাজার টাকা করে প্রতি মাসে দেব। ভয় পেয়ে গেলেন নাকি? ৬ কোটি মানুষকে এক হাজার টাকা করে দিলে ৬ হাজার কোটি টাকা, বছরে লাগবে ৭২ হাজার কোটি টাকা। নাই আমার। বছরে সরকারি হিসাবে ব্যাংক এবং ফিন্যানশিয়াল ইনস্টিটিউশনের মধ্যমে যে টাকাটা বিদেশ চলে যায়, সেটা ৭০ হাজার কোটি টাকার কম নয়। আমি দরিদ্র জনগোষ্ঠীর শিক্ষা, চিকিৎসা বিনা পয়সায় দেবে। রাষ্ট্র ও সরকারের টপ প্রায়রিটি হতে হবে জনগণের কল্যাণ। আপনাদের এই বিষয়গুলো জনগণের সামনে তুলে ধরতে হবে। বিএনপি ক্ষমতায় যাবে বলে আশা করে তারা বলুক জনকল্যাণে এগুলো আমরা করব। ’
আসাদ পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক মাহবুবউল্লাহর সভাপতিত্বে ও ডাকসুর সাবেক জিএস খায়রুল কবির খোকনের পরিচালনায় আলোচনাসভায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য জহির উদ্দিন স্বপন, গণ-অধিকার পরিষদের সদস্যসচিব নুরুল হক নুর, সাবেক ছাত্রনেতা মনিরুজ্জামান প্রমুখ বক্তব্য দেন।