<p>কাগজে-কলমে দেশের অভ্যন্তরে নদ-নদীর সংখ্যা ৪০৫টি হলেও বর্তমানে এর অনেকগুলোই মূলত একই নদ-নদীর শাখা-প্রশাখা। ফলে মূল নদ-নদীর সংখ্যা উল্লেখ করা নদ-নদীর অর্ধেকের চেয়েও কম বলে জানান গবেষকরা। আর আন্তর্দেশীয় সংযোগ নদী রয়েছে ৫৭টি। বর্তমানে এসব নদ-নদী রক্ষা করাই বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের নীতিনির্ধারক ও গবেষকদের কাছে।</p> <p>তাঁরা বলছেন, নদ-নদীর প্রাণশক্তি-অবাধ পানিপ্রবাহ ও গতিপথ। যেখানে এর ব্যত্যয় ঘটে সেখানেই বিপত্তি। বাধা পেলে আশপাশ ভেঙেচুরে নিজের প্রাণ রক্ষার চেষ্টা করে নদ-নদী। সেটা সম্ভব না হলে ভেতরে জমে ওঠা পলির স্তরের নিচে চাপা পড়ে মারা যায়। নদ-নদী বাঁচানোর মূল রক্ষাকবচ নদীর প্রবাহ ও গতিপথ ঠিক রেখে উন্নয়ন এগিয়ে নেওয়ার কৌশল। সেই কৌশলে অনেকটা পিছিয়ে বাংলাদেশ। ফলে মরে যাচ্ছে নদী। কমে যাচ্ছে নৌপথ। আর ক্রমাগত বাড়ছে নদীকেন্দ্রিক দুর্যোগ।</p> <p>জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালের কণ্ঠকে বলেন, কেবল নদীর অবৈধ দখল, অবৈধভাবে ভরাট কিংবা দূষণ করাই নয়, এর সঙ্গে অনেক প্রকল্পের আওতায় নদীর গতিপথ অপরিকল্পিতভাবে ব্যাহত করা, পলিপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণে সঠিকভাবে কাজ না করাও নদীর মৃত্যু ডেকে আনে। জাতীয় নদী কমিশন এই বিষয়গুলো নিয়েও কাজ করছে।</p> <p>বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী (ড্রেজিং) আব্দুল মতিন কালের কণ্ঠকে বলেন, নদ-নদীর নাব্যতা বজায় রাখা বড় চ্যালেঞ্জ। সব সময় কোনো না কোনো নদীতে ড্রেজিং চলছে। অনেক নদীতে স্রোতের সঙ্গে প্রচুর পলিপ্রবাহ জমে। এ অবস্থায় একদিক থেকে ড্রেজিং করে যেতে না যেতেই আবার তা ভরাট হয়ে যাচ্ছে।</p> <p>তিনি বলেন, ‘আমরা কেবল নৌ রুট সংরক্ষণের জন্য ২০১৪ সাল থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ৯৭৯.১৬ লাখ ঘনমিটার খনন করেছি। এ ছাড়া বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় এক হাজার ৫০২ লাখ ঘনমিটার মাটি খনন করে তিন হাজার ১৯৯ কিলোমিটার নৌপথের নাব্যতা ফিরিয়ে আনা হয়েছে। এখনো দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অনেকগুলো খনন প্রকল্পের কাজ চলছে। নদ-নদীর প্রাণ বাঁচিয়ে রাখতে সরকারের নির্দেশনা ধরেই আমরা কাজ করছি।’</p> <p>একই প্রতিষ্ঠানের পরিচালক (সংরক্ষণ ও পরিচালন) মো. শাহজাহান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘দেশের নৌপথ কমে যাওয়ার বড় উদাহরণ হচ্ছে, মাত্র ১০ বছর আগেও আমাদের নৌ রুট ছিল প্রায় দেড় শটি। এখন তা কমে হয়েছে ৯৫টি। অবশ্য আমরা ড্রেজিং করে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি নৌপথগুলো বাঁচিয়ে রাখতে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে বড় তিনটি চ্যালেঞ্জ রয়েছে। একটি হচ্ছে সড়ক পথের উন্নয়ন, দ্বিতীয়টি হচ্ছে পলিপ্রবাহ ঠেকাতে না পারা, আর তৃতীয়টি হচ্ছে গতিপথ ঠিক রাখতে না পারা। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় ব্যাপকভাবে স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে কাজ চলছে।’</p> <p>বিআইডাব্লিউটিএর হাইড্রোগ্রাফি বিভাগের পরিচালক সামসুন নাহার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের দেশ প্রাকৃতিকভাবে তিনটি ডেল্টা প্লেটে রয়েছে। এগুলো হলো বার্মিজ প্লেট, হিমালয় প্লেট ও ভারতীয় প্লেট। এর ফলে উজান থেকে সহজেই প্রবল পলিবাহিত স্রোত নিচে নেমে আসে। আবার মাঝেমধ্যে নিচে থেকে পলিপ্রবাহ উল্টো দিকে যায়। এ অবস্থায় নদীর গতিপথ যেখানে বাধাগ্রস্ত হয় সেখানে ভরাট হয়ে চর জেগে ওঠে।’</p>