<p>করোনার বিস্তার মোকাবেলায় দেশজুড়ে আরোপ করা কঠোর বিধি-নিষেধের চতুর্থ দিনে গতকাল শনিবার রাজধানীর প্রধান সড়কে অনেক অটোরিকশা চলতে দেখা গেছে, গত তিন দিনে যা দেখা যায়নি। বেড়েছে ব্যক্তিগত গাড়িও। রিকশাও ছিল আগের দিনগুলোর চেয়ে বেশি। ভাড়ায় চলা মোটরসাইকেলও চলেছে যাত্রী নিয়ে। এ কারণে কোনো কোনো মোড়ে ট্রাফিক পুলিশকে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করতে হয়েছে।</p> <p>গতকাল সরেজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন চিত্রের পাশাপাশি পুলিশকেও দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে। তল্লাশিচৌকিগুলোতে শুরুর দিকের মতো এত কঠোর হতে দেখা যায়নি পুলিশকে।</p> <p>জরুরি কিছু সেবা ছাড়া অন্যান্য ক্ষেত্রে কোনো কাজে বের হতে লোকজনকে মুভমেন্ট পাস নিতে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। গত ১৪ এপ্রিল আট দিনের ‘লকডাউন’ শুরুর দিন পুলিশকে কঠোর ভূমিকায় দেখা গেছে। কিন্তু পরের দিন কিছুটা হলেও ঢিলেঢালা ছিল বিধি-নিষেধ। তৃতীয় সরকারি ছুটির দিনে সড়কে যানবাহন ও লোক চলাচল কম দেখা গেছে। কিন্তু গতকাল সরকারি ছুটির দিনে ছিল অন্য চিত্র।</p> <p>রাস্তায় চলাচলকারী অনেকের মুখে মাস্ক ছিল না। পাড়া-মহল্লায় দোকানপাট নির্ধারিত সময়ের চেয়ে বেশি সময় খোলা রাখা ও মোড়ে মোড়ে, চায়ের দোকানে লোকজনের আড্ডাও ছিল।</p> <p>কয়েকটি তল্লাশিচৌকিতে অকারণে বের হওয়া লোকজনকে জরিমানা করা হয়েছে বলে জানা যায়। তবে সেটা ছিল হাতে গোনা।</p> <p>মগবাজার তল্লাশিচৌকিতে দায়িত্বরত সার্জেন্ট রেজাউল করিম রেজা কালের কণ্ঠকে বলেন, সকাল থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত সেখানে একজনকে তিন হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। তিনি ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে বের হয়েছিলেন। তবে বের হওয়ার মতো কোনো যৌক্তিক কারণ তিনি দেখাতে পারেননি। চলাচলের জন্য তাঁর কোনো পাসও ছিল না।’</p> <p>বনানীতে পুলিশের উপস্থিতি দেখে কিছুটা আগে ১১ নম্বর সড়ক ডানে রেখে কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ হয়ে গুলশানের সড়কে ঢোকেন এক মোটরসাইকেল আরোহী। রফিকুল ইসলাম নামের ওই আরোহী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমার মুভমেন্ট পাস নেই। সে কারণে চেকপোস্ট ফাঁকি দিয়ে অলিগলি ধরে চলছি।’</p> <p>পরীবাগে দাঁড়িয়ে থাকা নাইমুল নামের একজন যাত্রী বললেন তিনি টঙ্গী যাবেন। কিভাবে যাবেন জানতে চাইলে বললেন, ‘একটু অপেক্ষা করুন, দেখুন কিভাবে যাই।’</p> <p>মিনিট ১৫ পর একটা পিকআপ ভ্যান এসে অপেক্ষমাণ লোকজনের পাশ ঘেঁষে দাঁড়ায়। দ্রুত কিছু লোক পিকআপ ভ্যানে চড়ে বসে।</p> <p>শাহবাগ মোড়ে কথা হয় রিজভী নামের এক যুবকের সঙ্গে। তিনি যাবেন শনির আখড়া। আমিনবাজার থেকে একাধিক রিকশা পাল্টে শাহবাগ পর্যন্ত আসতে তাঁর খরচ হয়েছে ৪০০ টাকা।</p> <p>দুপুর ১টার দিকে পুরান ঢাকার দয়াগঞ্জ মোড় এলাকায় দেখা গেছে প্রাইভেট কার, রিকশা, অটোরিকশাসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহন চলাচল করছে। শুধু কয়েকটি রিকশা পুলিশ বক্সের সামনে উল্টে রাখতে দেখা যায়।</p> <p>দয়াগঞ্জ মোড়ে যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করছিলেন রিকশাচালক হেদায়েত হোসেন। তিনি কালের কণ্ঠকে জানান, সকালেই বের হয়েছেন তিনি। স্বাভাবিক দিনে দুপুর পর্যন্ত তিন-চার শ টাকা আয় করতে পারেন। কিন্তু আজ (শনিবার) মাত্র দেড় শ টাকা ভাড়া পেয়েছেন। পুলিশের জেরার মুখে পড়তে হয়নি তাঁকে।</p> <p>দুপুর ২টার দিকে টিকাটুলী এলাকায় পুলিশের সামনে দিয়েও বিভিন্ন যানবাহন চলাচল করতে দেখা যায়। কিন্তু কোনো পুলিশকে গাড়ি থামাতে দেখা যায়নি। জানতে চাইলে সেখানে দায়িত্ব পালনকারী এক পুলিশ সদস্য কালের কণ্ঠকে জানান, গাড়িগুলোতে প্রতিষ্ঠানের স্টিকার দেখার পর সেগুলো আটকানো হচ্ছে না।</p> <p>দয়াগঞ্জের দিক থেকে রাজধানী মার্কেটের দিকে যাওয়া রাস্তার এক পাশ আটকে দিয়ে কিশোর-যুবকদের ক্রিকেট খেলতে দেখা যায়। দুপুর সোয়া ২টার দিকে একজন সেখানে মোবাইল ফোনে খেলার দৃশ্য ভিডিও করতে চাইলে তেড়ে যান যুবকরা।</p> <p>দুপুর আড়াইটার দিকে মতিঝিল এলাকায় দেখা গেছে, বিভিন্ন ধরনের যানবাহন চলছে। এই এলাকায় কোনো তল্লাশিচৌকি দেখা যায়নি। কিছুটা এগিয়ে আরমবাগ এলাকায় পুলিশের তল্লাশিচৌকি ছিল।</p> <p>লোক চলাচল ও যানবাহন বাড়ার কারণ জানতে চাইলে বংশাল থানার ওসি শাহীন ফকির কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মানুষ সচেতন না হওয়ার কারণে বাইরে বের হচ্ছে। রিকশা ও অটোরিকশাও বেড়েছে। আমরা তাদের বোঝানোর চেষ্টা করছি অপ্রয়োজনে ঘর থেকে বের না হওয়ার জন্য।’ তিনি আরো বলেন, ‘চেকপোস্টে আটকানোর পর একেকজন এমন কারণ দেখান যে তাঁর বের হওয়াটা জরুরি। আমরা তাঁদের সঙ্গে রূঢ় আচরণ করছি না।’</p> <p>এক প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, ‘আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছি সরকারি বিধি-নিষেধ মানানোর জন্য।’</p>