১৯৮২-এর বিশ্বকাপ খেলা না হলে তিনি আর দশটা শীর্ষ ফুটবলারের একজনই হয়ে থাকতেন। সেই বিশ্বকাপে তিনি না-ই থাকতে পারতেন। কিন্তু ঈশ্বরের অন্য ইশারা ছিল, কে জানত! পাওলো রসি খেললেন আর লিখলেন রূপকথা। ‘কোয়ার্টার ফাইনাল’ থেকে ফাইনাল পর্যন্ত একা হাতে জেতালেন ইতালিকে। জিকো, সক্রেতিসের ব্রাজিলের পতন হলো তাঁর হাতে। ইতালিয়ান রূপকথার সেই নায়ক কাল অনেকটা কাউকে জানান না দিয়েই পাড়ি জমিয়েছেন অজানার দেশে।
বাংলাদেশ সময় সকাল ৭টায় রসির স্ত্রী ফেদেরিকা কাপেলেত্তি ইনস্টাগ্রামে দুজনের ছবিতে ‘ফরএভার’ লিখে যখন পোস্ট দেন তখনই সবাই জানতে পারেন, রসি আর নেই। পরে কাপেলেত্তি ফেসবুকে লেখেন, ‘তোমার মতো আর কেউ আসবে না—অনন্য, অসাধারণ। তোমাকে ছাড়া আর কিছুই আসলে নেই।’ ৬৪ বছর বয়স হয়েছিল রসির। ডিয়েগো ম্যারাডোনার প্রয়াণের মাত্র সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যেই পৃথিবী ছাড়লেন ’৮৬-র ঠিক আগের বিশ্বকাপটারই নায়ক। ১৯৭৮-এ আর্জেন্টিনার শিরোপা জয়ের আসরেও ছিলেন চতুর্থ হওয়া ইতালির দলটায়। পরে ক্লাব পেরুজিয়ায় ম্যাচ পাতানোর কেলেঙ্কারিতে নিষিদ্ধ হওয়ার পর খেলতে পারেননি ঘরের মাঠে ১৯৮০-র ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে। নিজেকে যদিও সব সময়ই নির্দোষ বলে আসছিলেন তিনি, সেই সুবাদে তিন বছরের নিষেধাজ্ঞা দুই বছরে নেমে এলে ১৯৮১-৮২ মৌসুমের শেষটা পান তিনি, জুভেন্টাসের হয়ে সিরি ‘এ’ শিরোপা জেতেন। আর বিশ্বকাপে লেখেন রূপকথা। সেবার তিন ড্রয়ে খুঁড়িয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠে ইতালি। সেখান থেকে সেমিফাইনালে উঠতে হলে শেষ ম্যাচে ব্রাজিলকে হারাতে হতো। রসি ওই ম্যাচেই আসরের প্রথম গোল শুধু নয়, হ্যাটট্রিক করে ৩-২ ব্যবধানের এক অনবদ্য ম্যাচ জিতে দলকে শেষ চারে তোলার পর পোল্যান্ডের বিপক্ষে করেন জোড়া গোল। ফাইনালে পশ্চিম জার্মানির বিপক্ষেও প্রথম গোলটি তাঁরই। আসরের সর্বোচ্চ গোলদাতা, সেরা খেলোয়াড় রসি সে বছরের ব্যালন ডি’অরও জেতেন। জুভেন্টাসের হয়ে এরপর ক্লাব ফুটবলে দারুণ সময় পার করে বুট জোড়া তুলে রাখেন ১৯৮৭-তে। কাল জীবন থেকেই বিদায় নিলেন, ইতালিয়ান মিডিয়া লিখেছে ‘দুরারোগ্য রোগে ভুগছিলেন তিনি’।
ইতালির প্রধানমন্ত্রী জুজুপ্পে কোন্তে তাঁকে শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেছেন, ‘রসি চিরদিন বেঁচে থাকবেন। ’৮২-র আসরে তাঁর একেকটা গোল গোটা প্রজন্মকে নতুন স্বপ্ন দেখিয়েছে।’ মিলান কিংবদন্তি ফ্রাংকো বারেসিও টুইটারে লিখেছেন সে কথা, ‘তুমিই ইতালিয়ানদের স্বপ্নটা ধারণ করেছিলে, আর ভালোবাসায় জায়গা করে নিয়েছিলে আমাদের বুকে। তোমার তাই মৃত্যু নেই।’ ’৮২-র স্পেন বিশ্বকাপে রসির সঙ্গেই অসাধারণ খেলা দিনো জফ ৭৮ বছর বয়সে দাঁড়িয়ে বন্ধুকে স্মরণ করেছেন, ‘অসাধারণ ফুটবলার ছিল রসি, চমৎকার একজন সতীর্থ আর দারুণ বন্ধু। আমাদের গ্রুপ থেকে তাকে আলাদা করা যাবে না কিছুতেই। নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে যখন ফিরল, ওকে নিয়ে কোনো দ্বিধাই ছিল না আমাদের। কারণ আমরা জানতাম কী অসাধারণ ফুটবলার সে।’
রূপকথা তো অসাধারণের হাতেই লেখা হয়!
মন্তব্য