ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের বিকাশে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে জমি বরাদ্দ চান এই শিল্পের উদ্যোক্তারা। বিশেষ করে চট্টগ্রামে শিল্প স্থাপনের উপযোগী জমির উচ্চমূল্য এবং গ্যাস সংযোগ ও অবকাঠামো উন্নয়ণের অপ্রতুলতায় সংকটে ভোগা খাতটির অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে ‘এসএমই জোন’ স্থাপন জরুরি হয়ে উঠেছে। এ সংক্রান্ত চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের একটা প্রস্তাবনাও আছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) বরাবর। চট্টগ্রাম অঞ্চলের এসএমই খাতের বিকাশে গত বছরের আগস্ট মাসে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে ৫০০ একর জমি বরাদ্দের জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) কাছে আবেদন করেছে। তবে গত এক বছর ধরে সিদ্ধান্তহীনতায় ঝুলে আছে বরাদ্দ প্রক্রিয়া।
দেশে কাজুবাদাম প্রক্রিয়াজাত করার প্রথম সমন্বিত কারখানা গড়ে তোলেন উদ্যোক্তা শাকিল আহমেদ তানভীর। চট্টগ্রামের পতেঙ্গার ডেইলপাড়ায় ২০১৫ সালে প্রায় ১ একর জায়গায় তিনি গড়ে তোলেন গ্রিনগ্রেইন কেশিও প্রসেসিং ইন্ডাস্ট্রি। তবে অন্যের জমিতে গড়ে তোলা কারখানায় বিনিয়োগের অনিশ্চয়তায় থাকতে হয়। শাকিল আহমেদের ভাষায়, ‘আমি যখন পতেঙ্গার ডেইলপাড়ায় কারখানা স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিলাম তখন এখানে রাস্তা ছিল সরু, বিদ্যুতের ট্রান্সফারমার ছিল না। নানা সীমাবদ্ধতার মাঝেও আমি কারখানাটিকে একটি পর্যায়ে নিয়ে এসেছি। কিন্তু এরপরেও নিজের জমি না বলে বিনিয়োগ নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় থাকতে হয়।’
এই অনিশ্চয়তা দূর করতে মিরসরাইয়ের বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কিন্তু সেখানেও শুরুতেই হতবাক হতে হলো কারণ কমপক্ষে ১০ একর জমি নিতে হবে যার জন্য ব্যয় হবে ১০ কোটি টাকা। শাকিল আহমেদ বলেন, ‘আমার ১ একর জমি হলেই চলবে। সেখানে ১০ একর জমিতে এক সাথে এত টাকা বিনিয়োগ করা মুশকিল। আমাদের মতো তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য সহজ শর্তে একটি আলাদা জোন করে ছোট ছোট প্লট করে ব্যবসায়ীক পরিবেশ সৃষ্টি করা উচিত বেজার।’
ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের সাথে জড়িত একাধিক উদ্যোক্তার সাথে কথা বলে জানা যায়, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উদ্যোক্তারা (এসএমই) সবক্ষেত্রেই অবহেলিত। ৩০ হাজার একরের বিশাল বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে দেশি-বিদেশি বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান যেমন বরাদ্দ পাচ্ছে তেমনি দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্যও বিশেষ বরাদ্দ রাখতে হবে।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম চেম্বারের ৮ হাজারের বেশি সদস্যের অধিকাংশ ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা। সদস্যদের সমস্যা লাঘবের দায়বদ্ধতা থেকে চেম্বার বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে জমি বরাদ্দে উদ্যোগী হয়েছে।
চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মূলত ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যক্তাদের প্রমোট করতেই চেম্বারের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে ৫০০ একর জমি বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। কারণ দেশে শিল্পের বিকাশে এসএমই উদ্যোক্তাদের অগ্রাহ্য করার সুযোগ নেই। বিসিক পুরনো ধারণা। চীন ও ভিয়েতনামে দেশের এসএমই উদ্যোগকে সাজাতে হবে। খোঁজ নিয়ে দেখবেন সেখানে ছোট ও মাঝারি শিল্পে প্রবৃদ্ধি অপেক্ষাকৃত বেশি। চট্টগ্রামেও ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের বিদ্যমান সমস্যা দূর করে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিয়ে বিকশিত করার সুযোগ দিতে হবে।’
চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বেজা থেকে ৫০০ একর জমি বরাদ্দ চেয়েছি মূলত আমাদের সদস্যদের দেওয়ার জন্য বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা যারা বিনিয়োগের জন্য জমি সংকটে ভুগছে। কারণ চট্টগ্রামের মতো জায়গায় উচ্চমূল্যের জমি কিনতেই বিনিয়োগ শেষ হয়ে যায়। গ্যাস সংযোগ, পানি আর অবকাঠামো একসাথে পাওয়া সম্ভব নয়। তাছাড়া ভবিষ্যতে জোনের বাইরে সরকার শিল্প কারখানার জন্য জমি বরাদ্দ দিবে না। তাই এসএমই খাতের উদ্যোক্তাদের সমস্যার একটি স্থায়ী সমাধানের জন্য উদ্যোগ নিয়েছে চট্টগ্রাম চেম্বার।’ আগামীকাল শনিবার চট্টগ্রাম চেম্বারের একটি অনুষ্ঠানে বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরীর উপস্থিতিতে বিষয়টি আবার উত্থাপণ করা হবে বলে তিনি নিশ্চিত করেন।
মন্তব্য