<p>মানি লন্ডারিংসহ বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তাধীন থাকায় এনসিসি ব্যাংকের এমডি হিসেবে মোসলেহ উদ্দিন আহমেদের পুনর্নিয়োগ পুনর্বিবেচনার আবেদনও নাকচ করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত সোমবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে এসংক্রান্ত চিঠি ব্যাংকটিতে পাঠানো হয়েছে। ফলে এনসিসি ব্যাংককে বিদায় জানাতেই হলো মোসলেহ উদ্দিন আহমেদকে। গত ৩০ জুলাই ছিল তাঁর প্রথম মেয়াদের শেষ দিন। এর আগে একই কারণে পুনর্নিয়োগের আবেদনও নাকচ করে দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। এদিকে এনসিসি ব্যাংকের সাবেক এমডি মোসলেহ উদ্দিন আহমেদের নগদ অর্থ ও স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ খতিয়ে দেখছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদক থেকে সম্প্রতি মোসলেহ উদ্দিন ও তাঁর স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নামে পরিচালিত অ্যাকাউন্ট থেকে বিপুল পরিমাণে নগদ অর্থ উত্তোলনের গ্রহণযোগ্য কারণ জানতে চেয়ে বাংলাদেশ ফিন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে।</p> <p>বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক আবু ফরাহ মো. নাছের কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মোসলেহ উদ্দিনের পুনর্নিয়োগ পুনর্বিবেচনার আবেদন নাকচ করা হয়েছে। এসংক্রান্ত চিঠি সোমবার ব্যাংকটিতে পাঠানো হয়েছে।’</p> <p>চিঠিতে বলা হয়েছে, মোসলেহ উদ্দিন আহমেদের বিষয় যেহেতু তদন্তাধীন, এসংক্রান্ত তদন্ত রিপোর্ট এবং চূড়ান্ত ফলাফল বাংলাদেশ ব্যাংকের হাতে এসে না পৌঁছায় আর নিয়োগ দেওয়া গেল না।</p> <p>যমুনা ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) পদ থেকে ২০১৫ সালের ৯ ডিসেম্বর এনসিসি ব্যাংকে অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এএমডি) পদে যোগ দেন মোসলেহ উদ্দিন। ২০১৭ সালের জুলাইয়ে তিনি এমডির দায়িত্ব পান। এনসিসি ব্যাংকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত সোমবার থেকে ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত এমডির দায়িত্ব পালন করছেন ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ ডিএমডি নাঈমুল কবির। তবে ব্যাংকটির ওয়েবসাইটে গতকাল মঙ্গলবারও এমডি হিসেবে মোসলেহ উদ্দিনের নাম দেখা গেছে।</p> <p>গত বছর এপ্রিল মাসে বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও শেয়ারবাজারে মোসলেহ উদ্দিন ও তাঁর স্ত্রীর স্বার্থসংশ্লিষ্ট ১৪টি ব্যাংক হিসাব, আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ছয়টি মেয়াদি আমানত, সীমাতিরিক্ত সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ এবং শেয়ারবাজারে চারটি বিও হিসাব পরিচালিত হওয়ার তথ্য পায় বিএফআইইউ। এতে মোট ৩৪ কোটি ৭৯ লাখ টাকার (মার্কিন ডলার বাদে) অস্বাভাবিক লেনদেনের তথ্য উদ্ঘাটিত হয়।</p> <p>বিএফআইইউয়ের পর্যালোচনায় বলা হয়, মোসলেহ উদ্দিন কয়েকটি ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা থাকাকালে নৈতিক স্খলন, ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি ও কর ফাঁকির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অবৈধ অর্থের মালিক হয়েছেন, যা মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০১২-এর ২(শ)(১) এবং ২(শ)(১৯)-এ বর্ণিত অপরাধ।</p> <p>জানা যায়, ওই সময় মোসলেহ উদ্দিনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বিএফআইইউ থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও দুর্নীতি দমন কমিশনে চিঠি দেওয়া হয়। কিন্তু এ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংক কিংবা দুর্নীতি দমন কমিশন থেকে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ফলে ব্যাপক দুর্নীতি করেও গত ১৫ মাসের বেশি সময় স্বপদে বহাল ছিলেন তিনি।</p> <p>এদিকে গত ২৬ জুলাই বিএফআইইউ প্রধানের কাছে পাঠনো দুদকের চিঠিতে বলা হয়েছে, মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ এবং তাঁর স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নামে পরিচালিত হিসাবগুলোর লেনদেনের ওপর একটি গোয়েন্দা প্রতিবেদন আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বিএফআইইউ থেকে দুর্নীতি দমন কমিশনে পাঠানো হয়। দুর্নীতি দমন কমিশন গোয়েন্দা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু করে। পরে দাখিল করা ওই অনুন্ধান প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, মোসলেহ উদ্দিন আহমেদের নিট সম্পদ রয়েছে ১৮ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। অন্যদিকে বিএফআইইউয়ের পাঠানো গোয়েন্দা প্রতিবেদনে ২০১৯ সাল পর্যন্ত জমা করা অর্থের পরিমাণ ৩৪ কোটি ৭৮ লাখ টাকা উল্লেখ করা হয়েছে। এ অবস্থায় সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে অভিযোগসংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ব্যাংক হিসাবে জমা ও উত্তোলনের ক্ষেত্রে দ্বৈত গণনা হয়েছে কি না তা যাচাই করা প্রয়োজন।</p>