<p>দেশে করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে সরকারি বিধি-নিষেধের মেয়াদ আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এ নিয়ে গতকাল সোমবার (৩ আগস্ট) একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।</p> <p>প্রজ্ঞাপনে বাড়ির বাইরে বের হলেই মাস্ক পরা, পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার স্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কেউ এই নিয়ম অমান্য করলে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে। এ ছাড়া রাত ১০টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে বের হতে নিষেধ করা হয়েছে।</p> <p>এখানে জরুরি প্রয়োজন বলতে বোঝানো হয়েছে, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিংবা ওষুধ কেনা, কর্মস্থল, জরুরি পরিষেবার চলাচল, চিকিৎসাসেবা এবং মৃতদেহ দাফন বা সৎকারের কাজে যাতায়াত। প্রতিটি সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, বেসরকারি অফিস, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, শিল্প-কারখানা, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখা গেলেও ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সব স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। তবে ঝুঁকিপূর্ণ, অসুস্থ কর্মচারী ও গর্ভবতী নারীদের কর্মস্থলে উপস্থিত হওয়া থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।</p> <p>হাটবাজার, দোকানপাট ও শপিং মলগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, প্রবেশমুখে সবার তাপমাত্রা পরিমাপের পাশাপাশি হাত ধোয়া বা স্যানিটাইজ করার ব্যবস্থা রাখতে। পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রাখার পাশাপাশি শপিং মলে আসা যানবাহনগুলোকে জীবাণুমুক্ত করার ব্যবস্থা অব্যাহত রাখতেও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।</p> <p>গণপরিবহনগুলো ৩১ আগস্ট পর্যন্ত পারস্পরিক দূরত্বসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাচল করতে পারবে। এই সময়ের মধ্যে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলবে না। সভা-সমাবেশ, অনুষ্ঠান আয়োজন করা যাবে না।</p> <p>কিন্তু এ ধরনের বিধি-নিষেধগুলো বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ থাকছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলছেন, স্বাস্থ্যবিধি না মানলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হলেও বাস্তবে এর প্রয়োগ এখন আর তেমন দেখা যায় না। এ কারণে এই বিধি-নিষেধগুলো মানতে জনসম্পৃক্ততা তৈরি করা যাচ্ছে না বলে জানান জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বে-নজির আহমেদ।</p> <p>বে-নজির আহমেদ বলেন, 'যদি জনসম্পৃক্ততা নিশ্চিত করা না যায়, তাহলে কাগজে-কলমে এসব নিয়ম জারির কোনো মানে নেই।</p> <p>বিধি-নিষেধ জারি করলেও সেগুলো কার্যকর করার ক্ষেত্রে নীতিনির্ধারকদের কিছুটা ঘাটতি রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যদি জেলা-উপজেলা পর্যায়ে দায়িত্বশীলদের মধ্যে দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হয়, তাহলে ছোট-বড় প্রতিটি এলাকায় স্থানীয় মানুষদের সম্পৃক্ত করা সম্ভব হবে।</p> <p>বে-নজির আহমেদ আরো বলেন, 'যদি সমন্বিত ব্যবস্থা না হয়, তাহলে এগুলো কথার কথাই থাকবে। করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে খুব একটা সহায়ক হবে না। কারণ নীতিনির্ধারকদের ওপরই নির্ভর করবে জনগণ মানবে কি মানবে না।'</p> <p>করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার শুরুতে জনসচেতনতা দেখা গেলেও এখন তাতে কিছুটা ভাটা পড়েছে। তার উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, এবার বিপুলসংখ্যক মানুষ বিশেষত ঈদের আগে গণপরিবহনে কোনো সামাজিক দূরত্ব বজায় না রেখেই গাদাগাদি করে এক জেলা থেকে আরেক জেলায় ভ্রমণ করেছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়াও অনেকেই বাড়ির বাইরে বেরিয়ে আসছে।</p> <p>এমন পরিস্থিতিতে জনসচেতনতার ওপরই বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র আয়েশা আক্তার। তিনি বলেন, 'গত রোজার ঈদে মানুষ চলাচলের কারণে কিন্তু আক্রান্তের সংখ্যা হঠাৎ করে বেড়ে গিয়েছিল। এবারও মানুষ যেভাবে চলাচল করেছে, এই সংখ্যা আবারও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থেকেই যায়। এ জন্য বিধি-নিষেধের যেমন প্রয়োজন আছে, তেমনি জনসচেতনতারও প্রয়োজন।'</p> <p>করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঈদ-পরবর্তী সময়ে বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থেকে এই বিধি-নিষেধ জোরদার করা জরুরি বলে মনে করছেন তিনি।</p> <p>সংক্রামক ব্যাধি আইন অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি না মানলে জেল-জরিমানার কথা বলা হলেও এই আইন সবার ওপর, বিশেষ করে নিম্নবিত্তের মানুষের ওপর প্রয়োগ করা কঠিন বলে তিনি উল্লেখ করেন। সে ক্ষেত্রে কিছু ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হচ্ছে বলে জানান আয়েশা আক্তার। তিনি বলেন, 'এই ভাইরাসটা নতুন। অনেকেই এ বিষয়ে পুরোপুরি জানে না। এ জন্য আমরা আইন প্রয়োগের চেয়ে আগে তাদের সচেতন করার ওপরই বেশি জোর দিচ্ছি। যদি বারবার বোঝানোর পরও না মানে, তাহলে আইন প্রয়োগ করা হবে।'</p> <p>সূত্র : বিবিসি বাংলা।  </p>