<p>উন্নয়ন আর সংস্কারের নামে রাজধানী ঢাকার প্রায় সর্বত্র চলছে নির্বিচার রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি। কোথাও খুঁড়ছে ওয়াসা, কোথাও বা বিটিসিএল। সরকারি সংস্থা দুটির এক্সকাভেটরের কোপ পড়ছে সদ্য নির্মিত সড়কেও। কোথাও কোনো সমন্বয় নেই। সড়ক কাটা-ছেঁড়ার এই মহাযজ্ঞে জনদুর্ভোগের বিষয়টি মোটেই আমল পাচ্ছে না। পাত্তা দেওয়া হচ্ছে না সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলরদেরও।</p> <p>ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে (ডিএসসিসি) নগর ভবনের সামনেই কয়েক মাস ধরে খুঁড়ে রাখা হয়েছে রাস্তা। খোঁড়া গর্তের পাশেই পড়ে আছে ওয়াসার বিশাল বিশাল পাইপ।</p> <p>সড়ক খোঁড়াখুঁড়িতে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) উত্তরার ১ ও ৫১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দারা। ওই দুটি ওয়ার্ডের প্রায় প্রতিটি সড়ক ও অলিগলিতে চলছে দেদার খোঁড়াখুঁড়ি। সরেজমিনে দেখা গেছে, উত্তরার ৫১ নম্বর ওয়ার্ডের ১৩ নম্বর সেক্টরের ১০ নম্বর সড়কটি মাত্র দুই মাস আগে নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছে। তিন থেকে চার মাস আগে এই ওয়ার্ডে নির্মাণ হয়েছে এমন ১০টি সড়ক খুঁড়ে ওয়াসা ও বিটিসিএল কাজ শুরু করেছে।</p> <p>স্থানীয় বাসিন্দা আবদুস সালাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘প্রায় চার বছর ভাঙাচোরা অবস্থায় পড়ে থাকার পর মাত্র দুই মাস আগে সড়কটি নির্মাণ করা হয়েছে। এরই মধ্যে শুরু হয়েছে রাস্তা কাটাকাটি। জানি না আবার কত বছর পর সড়কটি নির্মাণ করা হবে।’</p> <p>দীর্ঘদিন বেহাল অবস্থায় পড়ে উত্তরার ১২ নম্বর সেক্টরের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বি ও সি সড়ক, ৩ নম্বর সড়ক, কবরস্থান সড়ক, শাহ মখদুম এভিনিউ, সোনারগাঁ জনপদ সড়ক। গুরুত্বপূর্ণ এসব সড়কে অবশেষে নির্মাণ ও সংস্কারকাজ প্রায় ৯০ শতাংশ শেষ হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে এই সংস্কারকাজ শেষ হওয়ার পর্যায়ে এসে এখানে নতুন করে খোঁড়াখুঁড়ি শুরু করেছে ওয়াসা ও বিটিসিএল।</p> <p>ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোহাম্মাদ শরিফুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বিটিসিএল থেকে রাস্তা খোঁড়ার একটি চিঠির কপি আমাকে দেওয়া হয়েছিল। তাতে বলা হয়েছিল, জুনের প্রথম থেকে রাস্তা খোঁড়া হবে। তাদের উল্লেখ করা সময়ে খোঁড়াখুঁড়ি শুরু হলেও প্রায় ৯০ শতাংশ কাজ শেষ হওয়া সড়কগুলো হয়তো বেঁচে যেত। এখন যেসব রাস্তা কাটা হলো তা সংস্কারে তিন বছরের আগে টেন্ডার হওয়ার সম্ভাবনা নেই। এ দীর্ঘ সময় জনগণকে ভুগতে হবে।’</p> <p>উত্তরার ১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আফসার উদ্দিন খান বলেন, ‘সদ্য নির্মিত রাস্তাগুলো কেটে আবার বেহাল অবস্থায় ফেলে দিচ্ছে ওয়াসা ও বিটিসিএল। তারা এ কাজগুলোর বিষয়ে আমাদের মতামত নিলে খোঁড়াখুঁড়ির উপযুক্ত সময় আমরা বলে দিতে পারতাম। এখন রাস্তা খারাপ হলে জনগণ তো আমাদেরই দোষারোপ করবে।’</p> <p>অন্যদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের গুরুত্বপূর্ণ এলাকা রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত জিরো পয়েন্ট, সচিবালয়ের দক্ষিণ পাশের সড়ক, গুলিস্তানে পীর ইয়ামেনী মার্কেটের সামনে ও নগর ভবনের সামনে রাস্তা খুঁড়ে ফেলে রাখা হয়েছে। এখানে পানির লাইন বসানোর কাজ করছে ওয়াসা।</p> <p>ধানমণ্ডি এলাকায় দীর্ঘদিন ধরেই চলছে সড়ক ও অলিগলি খোঁড়াখুঁড়ি। কোথাও স্যুয়ারেজ লাইন সংস্কার ও নতুন লাইন নির্মাণ, আবার কোথাও রাস্তা ও ফুটপাত সংস্কার বা অন্য কোনো কাজের নামে এই কাটাকাটি চলছে। গতকাল সোমবার দুপুরে ধানমণ্ডির বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এই চিত্র পাওয়া গেছে। ওই সব এলাকার কোথাও কোথাও স্যুয়ারেজ লাইনের কাজ শেষ হয়েছে তিন মাস আগে। লাইনের ওপর নতুন ঢাকনাও লাগানো হয়েছে। কিন্তু রাস্তাটি আর সংস্কার হয়নি। খানাখন্দে ভরা রাস্তায় চলতে গিয়ে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছে মানুষ। বৃষ্টি হলেই কাদা জমছে সড়কগুলোয়। এতে পথচারীদের পাশাপাশি রাস্তার দুই পাশের বাসিন্দাদেরও দুর্ভোগ চরমে উঠেছে।</p> <p>সায়েন্স ল্যাবরেটরির বিপরীত পাশে ধানমণ্ডি ৩ নম্বর সড়কের প্রবেশমুখে ব্যারিকেড দিয়ে পাইপলাইন বসানোর কাজ করছে ওয়াসা। একই কাজ চলছে ২ নম্বর সড়কেও। ফুটপাত সংস্কারের কাজ চলছে সাতমসজিদ রোডের জিগাতলা থেকে ধানমণ্ডি শংকর মোড় পর্যন্ত। মাঝখানে ধানমণ্ডি ১০, ১১ ও ১২ নম্বর সড়কে স্যুয়ারেজ লাইনে সদ্যই ঢালাই দেওয়া হয়েছে। রবীন্দ্রসরোবর এলাকায় রাস্তায় বহুদিন ধরে নির্মাণসামগ্রী ফেলে রাখা হয়েছে। সেখানে ফুটপাতের পাশাপাশি রাস্তা সংস্কারের কাজ চলছে ঢিমেতালে। বিভিন্ন অলিগলিতেও একই চিত্র।</p> <p>ধানমণ্ডি ১৫ নম্বর সড়কের মোড়ে কাকলি স্কুলের পাশে স্যুয়ারেজ লাইন সংস্কারকাজে কর্মরত শ্রমিক মহিবুল ইসলাম জানালেন, কাজ শেষ হতে আরো কমপক্ষে দুই মাস লাগবে। তবে তাঁরা শুধু ফুটপাতের পাশে লাইন বসানোর কাজ করবেন। বাকি কাজের দায়িত্ব অন্যদের।</p> <p>আজিমপুর লালবাগ এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ওয়াসার পাইপলাইন বসানোর কাজ চলায় বিভিন্ন সড়কের করুণ অবস্থা। খোঁড়াখুঁড়ির কারণে সামান্য বৃষ্টিতেই রাস্তায় পানি জমে যাচ্ছে। কাদা পানিতে একাকার হয়ে চলাচলে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে মানুষকে।</p> <p>ডিএসসিসির ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হাসিবুর রহমান মানিক বলেন, ‘উন্নয়নকাজ দ্রুত শেষ করতে না পারলে সমস্যা। আবার ওয়াসার কাজ শেষ হলেও কাটাকাটি করা রাস্তা শিগগিরই আর সংস্কার করা হয় না। ফলে জনদুর্ভোগ আরো বাড়ে।’</p> <p>সমন্বয়হীনভাবে দেদার রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির বিষয়ে ঢাকা ওয়াসার পরিচালক (কারিগরি) শহীদউদ্দিন আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা কাজের টেন্ডার করি, আমাদের গতিতে কাজ হয়। এখন আমরা কিভাবে বুঝব যে কোন সড়ক সদ্য নির্মিত হয়েছে? সংশ্লিষ্ট সংস্থা সড়ক নির্মাণের ব্যাপারে আমাদের আগেভাগে জানালে একসঙ্গে দুটি কাজ হতে পারে। আমাদেরও অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করতে হয় না। আমাদের কাজের স্বার্থে যে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি করা হয় তা সংস্কারের টাকা সংশ্লিষ্টদের পরিশোধ করেই তো আমরা কাজ শুরু করি।’</p> <p>বিটিসিএলের মহাব্যবস্থাপক ড. রফিকুল মতিন বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকে বেশির ভাগ রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি হয় মেরামতকাজের জন্য। আর এটা তো আগে থেকে বলা মুশকিল যে কখন কোন স্থানে ভূগর্ভস্থ লাইন খারাপ হবে। ওয়াসা বা অন্যান্য সংস্থা কাজ করার সময়ও আমাদের লাইন কাটা পড়ে, মেরামত করতে হয়। এ ছাড়া আমাদের কিছু উন্নয়নকাজের স্বার্থেও রাস্তা খোঁড়ার প্রয়োজন পড়ে। তবে নগরে রাস্তা খোঁড়া ও সংস্কার নিয়ে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের উদ্যোগ চলছে। আমি মনে করি তা সম্ভব হবে।’</p>