পেট মোটা পুলিশ অদ্ভুত ভঙ্গিমায় পান চিবায়, রস গড়িয়ে পড়ে থুতনি বেয়ে- এমন চরিত্র প্রায়ই দেখা যায় সিনেমা বা নাটকে। কোনো কোনো সিনেমা-নাটকে দেখা যায়, অভিনেতার পরনে কনস্টেবল বা সাব ইনস্পেক্টরের পোশাক, অথচ বোঝানোর চেষ্টা করা হচ্ছে চরিত্রটি এসপি বা ডিআইজির। কখনো বেঁটে ও লম্বা চুলওয়ালা শিল্পীকে পুলিশ হিসেবে দেখানো হয় অথচ তা বাস্তবসম্মত নয়। পুলিশ বলছে, এসব 'ড্রেস রুল'-এর লঙ্ঘন।
বিজ্ঞাপন
এটা দণ্ডনীয় অপরাধ। দীর্ঘদিন ধরে এভাবেই চলছে; দেখার কেউ ছিল না। এবার বিষয়গুলোর দিকে দৃষ্টি দিতে যাচ্ছে পুলিশ। পুলিশের পোশাক ব্যবহার ও পুলিশের চরিত্রে অভিনয়ের ক্ষেত্রে কিছু বিধিনিষেধ মেনে চলার জন্য নির্মাতাদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। নাটক-সিনেমায় পুলিশের চরিত্র দেখাতে হলে পুলিশ কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি নিতে হবে। বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেল, চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি, চলচ্চিত্র প্রযোজক ও পরিবেশক সমিতিতে গতকাল এ-সংক্রান্ত চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন বিভাগের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (এডিসি) এস এন জাহাঙ্গীর আলম সরকার।
নির্মাতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাঁরা নাটক-সিনেমায় পুলিশ চরিত্রে অভিনয় করানোর জন্য অনুমতি নিতেন না। নতুন করে যদি অনুমতি নেওয়ার নিয়ম করা হয় তা হলে সেটি বিড়ম্বনার সৃষ্টি করতে পারে। তবে তাঁরা এ কথাও বলেছেন, নাটক-সিনেমায় পুলিশকে পুলিশের মতো করেই উপস্থাপন করা উচিত। না হলে পুলিশের বিষয়ে জনমনে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হবে। পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, প্রায়ই নাটক ও সিনেমায় পুলিশের পোশাক পরে অভিনেতা-অভিনেত্রীরা অভিনয় করেন। ক্ষেত্রবিশেষে পুলিশের পদবির সঙ্গে পরিহিত পোশাকের সাযুজ্য দেখা যায় না। আবার নির্মাতারা পুলিশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের
কাছ থেকে কোনো অনুমতি নেন না। পুলিশের পদবির সঙ্গে পোশাক ব্যবহারের বিষয়ে সরকার অনুমোদিত একটি 'ড্রেস রুল' রয়েছে। ড্রেস রুল অনুযায়ী পুলিশ সদস্যরা র্যাংক ব্যাজ ব্যবহার করে পোশাক পরেন। পূর্বানুমতি ছাড়া অভিনয়ের জন্য পুলিশের পোশাক ব্যবহার আইন ভঙ্গের শামিল এবং এটি দণ্ডনীয় অপরাধ। পুলিশ একটি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান। অথচ নাটক-সিনেমায় পুলিশের চরিত্রকে প্রায়ই নেতিবাচক ও হাস্যরসাত্মক হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। আবার এমন ব্যক্তিকে পুলিশের ভূমিকায় নির্বাচন করা হয় যার শারীরিক সক্ষমতা বা যোগ্যতা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দেয়। চুল বড় রেখেও পুলিশের চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায়। এতে জনমনে পুলিশ সম্পর্কে ভুল ধারণা জন্ম নেয়। এতে পুলিশ সদস্যদের কর্মস্পৃহা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
যাচাই-বাছাই ছাড়াই পুলিশকে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন অপরাধীদের উৎসাহিত করে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। এ ধরনের বিরূপ প্রচার জনগণকে পুলিশের ওপর আস্থাহীন করে তুলতে সহায়তা করে। তাঁরা মনে করেন, পুলিশের মতো কার্যকর একটি রাষ্ট্রীয় সংগঠনকে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করলে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা বাধাগ্রস্ত হয়। পুলিশের তরফ থেকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, 'আমরা আশা করব, নাটক ও সিনেমায় পুলিশের পোশাক ব্যবহারের ক্ষেত্রে যথাযথ কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি গ্রহণ করা হবে। পুলিশের ভূমিকা নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করা হবে না, যাতে পুলিশের প্রতি জনগণের বিরূপ ধারণা হয়। এ বিষয়ে আমরা সবার সহযোগিতা চাই। ' কার কাছ থেকে নির্মাতারা অনুমতি নেবেন জানতে চাইলে ঊর্ধ্বতন এক পুলিশ কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, 'পুলিশ সদর দপ্তরে অনুমতি চাইতে পারবেন। '
চলচ্চিত্র নির্মাতা কাজী হায়াৎ কালের কণ্ঠকে বলেন, 'প্রায় প্রতিটি ছবিতেই কোনো না কোনোভাবে পুলিশের উপস্থিতি থাকে। সেন্সর বোর্ডে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা থাকেন। তিনিই তো ধরতে পারেন কোন ছবিতে পুলিশকে হেয় করে দেখানো হচ্ছে বা পোশাক ঠিকমতো পরানো হয়নি। ' তিনি বলেন, 'আগের সিনেমাগুলোতে বেশি করা হতো। বর্তমানে যেসব সিনেমা হচ্ছে সেগুলোতে পুলিশকে বাজেভাবে দেখানো হয় না। ' তিনি আরো বলেন, 'যাঁরা সিনেমা নির্মাণ করেন তাঁদের পুলিশের পোশাক ব্যবহার করার সময় জেনে করাই উচিত। কনস্টেবলের পোশাক দিয়ে ডিআইজি চরিত্র করালে যাঁরা বিষয়গুলো বোঝেন তাঁদের কাছে দৃষ্টিকটু লাগবে- এটিই স্বাভাবিক। নির্মাতার যোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন উঠবে। তিনি বলেন, আমি কোনো সিনেমা নির্মাণ করতে গিয়ে পুলিশের অনুমতি নেইনি। এখন যদি এ ব্যবস্থা করা হয়, তাহলে বিড়ম্বনার সৃষ্টি হবে।
টিভি নাটক নির্মাতা ও অভিনেত্রী ফাল্গুনী হামিদ কালের কণ্ঠকে বলেন, 'পুলিশ জনগণের বন্ধু। তাকে কখনোই নাটকে খারাপ চরিত্রে উপস্থাপন করা উচিত নয়। যদি পুলিশের অনুমতি নেওয়ার নিয়ম করা হয়, তাহলে বিড়ম্বনার সৃষ্টি হবে- এটা ঠিক। তবে এটাও ঠিক, পুলিশ তখন জানতে পারবে কোন নির্মাতা কিভাবে তাদের উপস্থাপন করতে যাচ্ছে।