<p>দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এগিয়ে যাচ্ছে সমাজের মানুষ। আধুনিক বিজ্ঞান ও তথ্য-প্রযুক্তির বদান্যতায় প্রতিটি ক্ষেত্রই হচ্ছে গতিশীল। প্রতিদিন প্রতিটি মানুষই ছাড়িয়ে যাচ্ছে নিজেকে। উন্নয়নের এই অগ্রযাত্রায় যেন আলেমরাও পিছিয়ে না থাকে সে জন্য আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন নিয়েছে এক প্রশংসনীয় উদ্যোগ। আলেমদের কর্মদক্ষতা বাড়াতে বিশেষ প্রশিক্ষণ কোর্সের আয়োজন করেছে তারা। ১১ নভেম্বর ২০২২ শুরু হয়েছে আলেমদের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধির বিষয়ক প্রথম কোর্স।</p> <p>কোর্সের প্রথম ব্যাচে ৪০ জন আলেম অংশগ্রহণ করেছেন। তাঁরা কওমি মাদরাসা থেকে তাকমিল অথবা আলিয়া মাদরাসা থেকে ফাজিল-কামিল সম্পন্ন করেছেন। তিন মাসের এই আবাসিক কোর্সে কম্পিউটারের বেসিক ধারণা, প্রয়োজনীয় ইংরেজি ভাষা শিক্ষা, অ্যাকাউন্টিং, অফিস ম্যানেজমেন্ট বা অ্যাডমিনের কার্যাবলি শিক্ষা দেওয়া হবে। প্রশিক্ষণার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে তাদেরই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে, যারা কোনো প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টিংয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত আছে অথবা এ দায়িত্বে নিয়োজিত হতে চায়। আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের প্রকাশনা বিভাগের সম্পাদক আবুল কাসেম আদিল কালের কণ্ঠকে এসব তথ্য জানিয়েছেন।</p> <p><img alt="" src="http://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/ckfinder/innerfiles/images/sunnah.jpg" style="height:483px; width:800px" /><em>আলেমদের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি বিষয়ক কোর্সের প্রথম ব্যাচে ৪০ জন আলেম অংশগ্রহণ করেছেন।</em></p> <p>এই কোর্সের উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে চাইলে আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেন, ইমাম, মুয়াজ্জিন ও আলেমদের কর্ম-দক্ষতা বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য কোর্সটি পরিচালিত হচ্ছে, যাতে আলেমরা মাদরাসা-মসজিদ ছাড়াও সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ে নিজেদের যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখতে পারেন। আর আলেমদের মসজিদ-মাদরাসায় সীমাবদ্ধ থাকতে হবে, এমনটাও আমরা মনে করি না; বরং সমাজের বিভিন্ন স্তরে আলেমদের পৌঁছে যাওয়া জরুরি।</p> <p>কর্মদক্ষতা বৃদ্ধির প্রয়োজন তো সবারই আছে। সমাজে বিপুল পরিমাণ মানুষ এখনো দক্ষতার অভাবে কর্মক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে আলেমদের বেছে নেওয়ার কারণ কী? উত্তরে শায়খ বলেন, শুধু আলেমদের বেছে নিয়েছি, ব্যাপারটা এমন নয়। আমরা আলেম ও সাধারণ শিক্ষিত এমনকি অশিক্ষিত-স্বল্প শিক্ষিতদের জন্যও বিভিন্ন দক্ষতা বৃদ্ধিমূলক আয়োজন করব। আলেমদের একটা কোর্সের মাধ্যমে শুরু হলো মাত্র। পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের জন্য কারিগরি প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হবে। ইনশাআল্লাহ!</p> <p>তিনি আরো বলেন, কর্মদক্ষতা ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের মৌলিক কর্মসূচিগুলোর একটি। এরই মধ্যে আমরা জাকাতের ফান্ড থেকে নয় শতাধিক ব্যক্তিকে প্রশিক্ষণ দিয়ে উপার্জন উপরকণ কিনে দিয়েছি। কভিডে ক্ষতিগ্রস্ত নারীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদেরও উপার্জন উপকরণ কিনে দেওয়া হয়েছে।</p> <p><img alt="" src="http://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/ckfinder/innerfiles/images/sunnn.jpg" style="height:483px; width:800px" /><em>কথা বলছেন আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শায়খ আহমাদুল্লাহ।</em></p> <p>কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি বিষয়ে আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের পরিকল্পনা তুলে ধরে প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা আবুল কাসেম আদিল বলেন, তরুণদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য আস-সুন্নাহ স্কিল ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ইনস্টিটিউটের জন্য এরই মধ্যে একটি কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। এ ছাড়া রয়েছে ৮০ আসনের ধারণ ক্ষতাসম্পন্ন আধুনিক সুবিধাসংবলিত অডিটরিয়াম কাম ক্লাসরুম। এই ইনস্টিটিউটের আওতায় পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন কারিগরি প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে। যেমন ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ, মেয়েদের জন্য সেলাই ও ব্লক-বাটিক ইত্যাদি। আমরা আশা করি, সবার আন্তরিক সহযোগিতায় এই বিশাল পরিকল্পনা তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে।</p> <p>কোর্সটি উপভোগ করছেন প্রশিক্ষণার্থীরাও। প্রতিদিনের প্রতিটি ক্লাস তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে তুলছে। স্বপ্ন দেখাচ্ছে সুন্দর ভবিষ্যতের। কোর্সে অংশগ্রহণকারী মাওলানা শামীম আহমদ নোমান বলেন, ‘কোর্সটি আমার কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ মনে হচ্ছে। আমি এখানে শিখছি এবং উপভোগ করছি। আমি নতুন একটা জগতের সঙ্গে পরিচিত হচ্ছি। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, কোর্সটি সম্পন্ন করে নিজে নতুন কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারব। নিজেকে উদ্যোক্তা এবং আত্মনির্ভরশীল হিসেবে গড়ে তুলতে পারব ইনশাআল্লাহ। ’</p> <p>গত ১১ নভেম্বর ২০২২ কোর্সটি শুরু হয়। এখন পর্যন্ত প্রশিক্ষক, প্রশিক্ষণার্থী ও আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন সবাই কোর্সের ব্যাপারে আশাবাদী। আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন মনে করছে, কোর্সটি সম্পন্ন করার পর শিক্ষার্থীরা যেকোনো প্রতিষ্ঠানে মানবসম্পদ বিভাগের দায়িত্ব গ্রহণ করতে পারবে, অ্যাডমিন হিসেবে নিয়োজিত হতে পারবে। নিজে প্রতিষ্ঠান করলে তা যথাযথভাবে পরিচালনা করতে পারবে। এ ছাড়া যেকোনো প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্ট সেকশনে নিয়োগলাভের সুযোগ পাবে। তবে এ জন্য প্রয়োজন শিক্ষার্থীদের অধ্যবসায়, উচ্চাশা ও দৃঢ় মনোবল। শায়খ আহমাদুল্লাহর ভাষায়—নিজের মনকে প্রশস্ত করতে হবে। সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ে হালাল পেশায় নিজেকে নিয়োজিত করার মানসিকতা লালন করতে হবে। আগামীর পৃথিবী প্রতিভাবানরাই শাসন করবে, দক্ষ ব্যক্তিদের হাতেই পৃথিবী শাসিত হবে। সুতরাং সবাইকে এক বা একাধিক বিষয়ে দক্ষ হতে হবে।</p>