<p>বিয়ে ও বাসরের পর সামর্থ্য অনুযায়ী অলিমা করা সুন্নত। এটি আনন্দ ভাগাভাগি করার একটি উপলক্ষ। বিয়ের পর ছেলের পক্ষে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও গরিব-মিসকিনদের সাধ্যমতো আপ্যায়ন করাকে অলিমা বলা হয়। বাংলায় অলিমাকে ‘বউভাত’ বলা হয়। বিয়ের পরদিন বা পরবর্তী সময়ে অলিমা করা যায়। তবে তিন দিনের মধ্যে করা উত্তম। অলিমা একটি ইবাদত। এক দিন অলিমা করা সুন্নত, দুই দিন অলিমা করা মুস্তাহাব, তিন দিন অলিমা করা জায়েজ। মহানবী (সা.) নিজে অলিমা করেছেন এবং সাহাবিদের করতে বলেছেন। মহানবী (সা.) জয়নব বিনতে জাহাশ (রা.)-কে বিয়ে করার পরদিন অলিমা অনুষ্ঠান করেছিলেন। (বুখারি, হাদিস : ৫১৭০)</p> <p>আর তিনি সাফিয়াহ (রা.)-কে বিয়ের পর তিন দিন পর্যন্ত অলিমা খাইয়েছিলেন। (মুসনাদে আবু ইয়ালা, হাদিস : ৩৮৩৪)</p> <p><strong>অলিমা সংশ্লিষ্ট কিছু বিষয়</strong></p> <p>এক. সমাজে অলিমার নামে বড়লোকদের মিলনমেলা বসে, যেখানে বরের বা অভিভাবকদের লক্ষ্য থাকে উপহারের দিকে। ওই সব অনুষ্ঠান থেকে দরিদ্র লোকজন বঞ্চিত হয়। অথচ অলিমার দাওয়াতে উপহার আদান-প্রদান রাসুল (সা.)-এর সুন্নাত নয়, বরং সুন্নাত হলো সৎ ব্যক্তিদের দাওয়াত দেওয়া। তাঁরা দাওয়াত গ্রহণ করে অলিমায় আসবেন ও নবদম্পতির মঙ্গলের জন্য দোয়া করবেন। বেছে বেছে শুধু বড়লোকদের অলিমায় দাওয়াত দেওয়া হলে ওই খাদ্যকে রাসুল (সা.) নিকৃষ্ট খাবার বলেছেন। তিনি বলেন, ‘খাদ্যের মধ্যে নিকৃষ্ট খাবার ওই অলিমার খাবার, যাতে শুধু ধনীদের দাওয়াত দেওয়া হয় এবং দরিদ্রদের ত্যাগ করা হয়। আর অলিমার দাওয়াত যে কবুল করল না, সে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের বিরোধিতা করল।’ (বুখারি, হাদিস : ৫১৭৭)</p> <p>দুই. অলিমার দাওয়াত দিলে প্রত্যেক মুসলমানের জন্য দাওয়াত কবুল করা ওয়াজিব। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কাউকে অলিমার দাওয়াত করা হলে সে যেন তাতে অংশগ্রহণ করে।’ (বুখারি, হাদিস : ৫১৭৩)</p> <p>তিন. অলিমা অনুষ্ঠান বাস্তবায়নের জন্য অন্যরাও সাহায্য করতে পারে। আনাস (রা.) নবী করিম (সা.)-এর স্ত্রী সাফিয়া (রা.)-এর ঘটনা সম্পর্কে বলেন, যখন রাসুল (সা.) রাস্তায় ছিলেন উম্মে সুলাইম সাফিয়া (রা.)-কে তাঁর জন্য প্রস্তুত করলেন-অর্থাৎ সাজালেন এবং তাঁকে রাতে তাঁর কাছে পাঠিয়ে দিলেন। নবী করিম (সা.) বাসর ঘরেই সকাল করলেন। এরপর তিনি বলেন, ‘যার কাছে যে খাবার আছে সে যেন তা নিয়ে আসে। অন্য বর্ণনায় আছে, যার কাছে অতিরিক্ত খাবার আছে সে যেন তা আমাদের কাছে নিয়ে আসে।’ আনাস (রা.) বলেন, তিনি একটি দস্তরখানা বিছালেন। তখন কেউ পনির নিলে এলো, কেউ খেজুর নিয়ে এলো, আবার কেউ ঘি নিয়ে এলো। সব দিয়ে তারা হাইস (খাদ্যবিশেষ) তৈরি করল। তারা (আমন্ত্রিত লোকেরা) হাইস খেতে লাগল এবং তাদের পাশের হাউস থেকে বৃষ্টির পানি পান করতে লাগল। আর এটাই ছিল রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর অলিমা। (বুখারি, হাদিস : ৩৭১)</p> <p>এ হাদিস থেকে প্রমাণিত হয়, অলিমা অনুষ্ঠানের জন্য অন্যরাও সহযোগিতা করতে পারে।</p>