<p>রাতের খাবারের গুরুত্ব অপরিসীম। ইসলাম ও আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানে এ ব্যাপারে অনেক সতর্কবাণীর দেখা মেলে।  জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘রাতের আহার ত্যাগ কোরো না, যদিও তা এক মুঠো খেজুরও হয়। কারণ রাতের আহার ত্যাগ মানুষকে বৃদ্ধ করে দেয়।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৩৫৫; তিরমিজি, হাদিস : ১৮৫৬)</p> <p>বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, রাতের খাবার গ্রহণ না করার অর্থ হলো, শরীরে পুষ্টির ঘাটতি তৈরি হওয়া। বিশেষ করে মাইক্রো-নিউটিশিয়ানের ঘাটতি। আমাদের শরীরে ম্যাগনেশিয়াম, ভিটামিন বি১২ ও ডি থ্রি অতীব প্রয়োজন। আর যদি কেউ নিয়মিত রাতের খাবার যথাসময়ে গ্রহণ না করে তাহলে তার মধ্যে এসব ভিটামিন ও পুষ্টির ঘাটটি দেখা দেবে।</p> <p>রাতের খাবার গ্রহণের জন্য উপযুক্ত সময় হচ্ছে রাতের প্রথম প্রহরের সূচনা। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এটিকে আরো পরিষ্কার করে বলেন যে ‘শারীরিক সুস্থতার প্রশ্নে একজন মানুষকে অবশ্যই রাত ৮টা থেকে সাড়ে ৮টার মধ্যে রাতের খাবার গ্রহণ করা উচিত। এরপর কিছুতেই কোনো ধরনের ভারী খাদ্য গ্রহণ করা যাবে না।’</p> <p>আবার কোনো কোনো গবেষক চিকিৎসক মন্তব্য করেছেন যে রাতে ঘুমানোর অন্তত ২ ঘণ্টা আগে অবশ্যই রাতের খাদ্য গ্রহণ করে নেওয়া উচিত। কারণ খাদ্য গ্রহণের পর তা আস্তে আস্তে পেট থেকে ছোট অন্ত্রের দিকে চলে যায় এবং  ক্রমান্বয়ে হজমের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে। এতে বুক জ্বালা ও অনিদ্রার মতো সমস্যা তৈরি হয় না। আর খেয়ে সঙ্গে সঙ্গে শুতে গেলে সেসব খাবার মানবদেহ যথাযথ প্রক্রিয়াকরণ সম্পন্ন করতে সক্ষম হয় না। ফলে আমাদের শরীরে দেখা দেয় নানাবিধ অসুস্থতা। বিশেষজ্ঞদের মতে, এতে বদহজম, বুকজ্বালা, এসিডিটি, ওজন বৃদ্ধি, এমনকি স্ট্রোক পর্যন্ত হতে পারে।</p> <p>আর এসব বিষয়েরই সমর্থন আমরা দেখতে পাই রহমাতাল্লিল আলামিন রাসুলে আরাবি (সা.)-এর বাণীতেও। কারণ অসংখ্য হাদিস এমন আছে, যেগুলো রাতের খাবার এশার নামাজের আগে বা সঙ্গে সঙ্গেই সেরে নিতে তিনি উদ্বুদ্ধ করেছেন। যেমন—ইমাম বুখারি (রহ.) তাঁর গ্রন্থে ‘রাতের খাবার পরিবেশন করা হলে তা রেখে অন্য কাজে ত্বরা করবে না’ শিরোনামে একটি অধ্যায়ই নিয়ে এসেছেন, সেখানে তিনি আয়েশা (রা.) সূত্রে নবী (সা.) থেকে বর্ণনা করেছেন যে মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যখন নামাজের (এশার) ইকামত দেওয়া হয় এবং রাতের খাবারও উপস্থিত হয়ে যায়, তাহলে তোমরা আগে আহার করে নেবে।’ (বুখারি, হাদিস : ৫০৬৯)</p> <p>এসব হাদিস ও চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষ্য আমাদের সামনে স্পষ্ট করে দেয় যে রাতের খাবার অবশ্যই সন্ধ্যা ঘনিয়ে রাতের সূচনার পরপরই সেরে নেওয়া অধিকতর নিরাপদ।</p>