<p>বিশ্ব মুসলিমের ভালোবাসার কেন্দ্রবিন্দু রহমাতুল্লিল আলামিন মুহাম্মদ (সা.)। তাঁর পদচিহ্নের বরকতে মদিনা শহর হয়ে উঠেছে সোনার মদিনা। পবিত্র এই মসজিদ ছিল মদিনায় নবীজি (সা.)-এর সব কর্মকাণ্ডের প্রাণকেন্দ্র। এই মসজিদের নির্মাণকাজে তিনি সশরীরে অংশগ্রহণ করেন এবং মসজিদ-ই-নববীর প্রাঙ্গণেই তিনি এখনো শুয়ে আছেন। রাসুল (সা.) দোয়া করতেন, হে আল্লাহ, তুমি মদিনাকে আমাদের কাছে প্রিয় করে দাও, যেভাবে প্রিয় করেছ মক্কাকে; বরং তার চেয়েও বেশি প্রিয় করো। (বুখারি, হাদিস : ১৮৮৯)</p> <p>অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে,  ইবনে ওমর (রা.) বলেন, আমার এ মসজিদে এক সালাত আদায় করা মসজিদে হারাম ছাড়া অন্যান্য মসজিদে এক হাজার সালাত আদায় করার চেয়েও উত্তম। (বুখারি, হাদিস : ১১৯০)</p> <p>তাই গভীর শ্রদ্ধা ও ভক্তি নিয়ে মহানবী (সা.)-এর প্রিয় শহর মদিনা দেখতে বিশ্বের আনাচ-কানাচ থেকে ছুটে আসে বহু মুসল্লি। বিশ্বের যে তিনটি মসজিদ সওয়াবের উদ্দেশ্যে জিয়ারতের সুযোগ আগে, তন্মধ্যে এই মোবারক মসজিদ একটি। বিশ্বনবী (সা.) বলেন, তিনটি মসজিদ ছাড়া অন্য কোথাও (সওয়াবের আশায়) সফর করা জায়েজ নেই : মসজিদুল হারাম, আমার এ মসজিদ ও মসজিদুল আকসা। (বুখারি, হাদিস : ১১৮৯)</p> <p>প্রতিটি মুসলমানের হৃদয়ের বাসনা থাকে, প্রিয় নবীজির রওজার পাশে দাঁড়িয়ে তাঁর প্রতি দরুদ সালাম প্রেরণ করা। এখন হজের মৌসুম হওয়ায় মুসল্লিদের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এত মানুষের ভিড়েও মহান আল্লাহর রহমতে হাজিরা খুব বেশি কষ্ট ছাড়াই রওজা জিয়ারতের সুযোগ পাচ্ছেন। হাজিদের ভিড় ও জটলা যাতে না হয়, তাই তাদের নিরাপত্তারক্ষীরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। ফলে রওজা মোবারকের সামনে কয়েক সেকেন্ডের বেশি দাঁড়ানো কঠিন হয়ে যায়।</p> <p>এর মধ্যেও নবিপ্রেমী মুসলিমরা নবীজির রওজা মোবারকে সালাম পৌঁছানোর জন্য তাঁর ভালোবাসায় মগ্ন হয়ে দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকেন। তবে হঠাৎ হঠাৎ মানুষের চাপ কম থাকলে কিছুটা বিলম্ব করার সুযোগ তৈরি হয়। তবে যখন-তখন গেলেই রিয়াজুল জান্নায় প্রবেশ সম্ভব নয়। কিছু নির্দিষ্ট সময়ে নারী-পুরুষের জন্য আলাদা আলাদা প্রবেশের ব্যবস্থা থাকে। উল্লেখ্য, রিয়াজুল জান্নাত সম্পর্কে মহানবী (সা.) বলেন, আমার ঘর ও মিম্বারের মধ্যবর্তী স্থান জান্নাতের বাগানগুলোর একটি বাগান আর আমার মিম্বার অবস্থিত আমার হাউজ (কাউসার)-এর ওপরে। (বুখারি, হাদিস : ১১৯৬)</p> <p>আমরা নবীজির রওজা মোবারকে সালাম পৌঁছানোর পর রিয়াজুল জান্নাতে প্রবেশের দরজা খুঁজছিলাম, কিন্তু মসজিদ-ই-নববীতে দায়িত্বরত একজন ভারতীয় আমাদের জানালেন, ফজরের পর থেকে জোহর পর্যন্ত এটি নারীদের জন্য উন্মুক্ত থাকে। তখন পুরুষদের প্রবেশের কোনো সুযোগ নেই। পুরুষদের প্রবেশের সময় হলো জোহরের পর থেকে বিকেল ৩টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত। আর রাতে ১২টা থেকে ২টা ৩০ পর্যন্ত।</p> <p>এ ছাড়া পবিত্র রওজা ও এর আশপাশে অনেক গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন রয়েছে। এসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—পূর্ব দিকে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর হুজরা। তার পশ্চিম দিকের দেয়ালের মধ্যখানে তাঁর মিহরাব এবং পশ্চিমে মিম্বার। এখানে বেশ কিছু পাথরের খুঁটি রয়েছে। যেসবের সঙ্গে জড়িয়ে আছে হাদিস ও ইতিহাসের কিতাবে বর্ণিত অনেক গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন ও স্মৃতি। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর যুগে এসব খুঁটি ছিল খেজুরগাছের। এগুলো ছিল—</p> <p>১.   উসতুওয়ানা আয়েশা বা আয়েশা (রা.)-এর খুঁটি।</p> <p>২.   উসতুওয়ানাতুল-উফুদ বা প্রতিনিধি দলের খুঁটি।</p> <p>৩.   উসতুওয়ানাতুত্তাওবা বা তওবার খুঁটি।</p> <p>৪.   উসতুওয়ানা মুখাল্লাকাহ বা সুগন্ধি জ্বালানোর খুঁটি।</p> <p>৫.   উসতুওয়ানাতুস-সারির বা খাটের সঙ্গে লাগোয়া খুঁটি এবং উসতুওয়ানাতুল-হারছ বা মিহরাছ তথা পাহারাদারদের খুঁটি।</p> <p>মুসলিম শাসকদের কাছে এই রওজা ছিল বরাবর খুব গুরুত্ব ও যত্নের বিষয়। উসমানীয় সুলতান সেলিম রওজা আতহারের খুঁটিগুলোর অর্ধেক পর্যন্ত লাল-সাদা মার্বেল পাথর দিয়ে মুড়িয়ে দেন। অতঃপর আরেক উসমানি সুলতান আবদুল মাজিদ এর খুঁটিগুলোর সংস্কার ও পুনর্নির্মাণ করেন। ১৯৯৪ সালে সৌদি সরকার পূর্ববর্তী সব বাদশাহর তুলনায় উত্কৃষ্ট পাথর দিয়ে এই রওজার খুঁটিগুলো ঢেকে দেন এবং রওজার মেঝেতে দামি কার্পেট বিছিয়ে দেন।</p> <p>এ ছাড়া এই মসজিদের পাশেই রয়েছে জান্নাতুল বাকি। এখানে শুয়ে আছেন নবীজি (সা.)-এর বহু সাহাবি ও আপনজন। এখানে প্রবেশ করলে দ্বিনের জন্য তাঁদের বীরত্বগাথা কোরবানির স্মৃতিগুলো হৃদয়ে ঝড় তোলে। তবে কোনটি কোন সাহাবির কবর, তা চিহ্নিত করার কোনো উপায় নেই। অতীতে সাহাবায়ে কিরামের কবর ঘিরে কিছু মানুষের বিদাত-কুসংস্কারে লিপ্ত হওয়ার অভিযোগ থাকায় বর্তমানে কারো কবরই নির্দিষ্ট করে চিহ্নিত করার সুযোগ রাখা হয়নি। এবং কোনো নির্দিষ্ট কবরের সামনে কাউকে জটলা বাঁধার সুযোগ দেওয়া হয় না। তাই মহান আল্লাহ এখানে কাউকে আসার সুযোগ দিলে যতটা সম্ভব একাকী জিকিরের সহিত ঘুরে দেখাই ভালো, তাহলে এখানকার দায়িত্বরত নিরাপত্তাকর্মীরা কোনো রকম বাধা দেবেন না।</p>