<p>সহকর্মীদের সঙ্গে মানুষের আচার-আচরণ কর্মজীবনে সাফল্য লাভে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সুন্দর, দায়িত্বশীল ও ভারসাম্যপূর্ণ আচরণ একজন কর্মীকে যেমন বহুদূর এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে, তেমনি দায়িত্বহীন আচরণ মানুষকে নিজ কক্ষপথ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলতে পারে। ইসলাম মানুষকে কর্মক্ষেত্রে দায়িত্বশীল আচরণ করার ও সহকর্মীদের সঙ্গে সদ্ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছে। নিুে এ বিষয়ে ইসলামের কিছু নির্দেশনা তুলে ধরা হলো। </p> <p>১.<strong> শুরু থেকে সুসম্পর্ক</strong> : ইসলাম শুরু থেকেই মানুষের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার নির্দেশ দিয়েছে। এজন্য ইসলাম পারস্পরিক সাক্ষাতে হাসিমুখে কথা বলার নির্দেশ দিয়েছে। আবু জর (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘হাস্যোজ্জ্বল মুখ নিয়ে তোমার ভাইয়ের সামনে উপস্থিত হওয়া তোমার জন্য সদকাস্বরূপ।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ১৯৫৬)</p> <p>২. <strong>সম্পর্কের ভারসাম্য রক্ষা করা</strong> : কর্মক্ষেত্রে সম্পর্কের ভারসাম্য রক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ব্যক্তিগত পছন্দ ও অপছন্দের ভিত্তিতে নৈকট্য ও দূরত্ব কখনো কখনো মানুষের জন্য বিপদের কারণ হয়। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, ‘নিজের বন্ধুর সঙ্গে ভালোবাসার আধিক্য প্রদর্শন করবে না। হয়ত সে একদিন তোমার শত্র“ হয়ে যাবে। তোমার শত্র“র সাথেও শত্র“তার চরম সীমা প্রদর্শন করবে না। হয়ত সে একদিন তোমার বন্ধু হয়ে যাবে।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ১৯৯৭)</p> <p>৩. <strong>কাউকে বিশেষ অগ্রাধিকার নয় </strong>: কর্মক্ষেত্রে কোনো সহকর্মীকে যৌক্তিক কারণ ছাড়া অগ্রাধিকার না দেওয়াই উত্তম। বিশেষত কেউ যদি প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পদে আসীন থাকে। বর্ণিত আছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বৈঠকে অংশগ্রহণকারী প্রত্যেককে তার প্রাপ্য বুঝিয়ে দিতেন। তাঁর বৈঠকে অংশগ্রহণকারী সবাই নিজেকে সবচেয়ে সম্মানী মনে করত।’ (মুখতারাত : ২/১৫)</p> <p>৪. <strong>শোনাকথায় কান না দেওয়া</strong> : শোনাকথা কান দিলে কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ বিষাক্ত হয়ে উঠতে পারে। তাই কোনো কথা শুনলে তা যাচাই করার আগে প্রতিক্রিয়া দেখান উচিত নয়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা! যদি কোনো পাপাচারী তোমাদের কাছে কোনো বার্তা নিয়ে আসে, তবে তোমরা তা পরীক্ষা করে দেখবে। যেন অজ্ঞতাবশত তোমরা কোনো সম্প্রদায়রকে ক্ষতিগ্রস্ত করে না বস এবং পরে তোমাদের কৃতকর্মের জন্য তোমাদেরকে অনুতপ্ত হতে হয়।’ (সুরা হুজরাত, আয়াত : ৬)</p> <p>৫. <strong>পরস্পরকে সহযোগিতা করা </strong>: পারস্পরিক সহযোগিতায় কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ সুন্দর হয় এবং সৌহার্দ্য গড়ে ওঠে। ইরশাদ হয়েছে, ‘সৎকর্ম ও আল্লাহভীতিতে তোমরা পরস্পরকে সহযোগিতা করবে।’ (সুরা মায়িদা, আয়াত : ২)</p> <p>৬. <strong>অধীনস্থদের প্রতি সদাচরণ করা</strong> : অধীনস্থদের প্রতি দুর্ব্যবহার করা ইসলামে নিষিদ্ধ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘অধীনস্থদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারকারী জান্নাতে যেতে পারবে না।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ১৯৪৬)</p> <p>৭. <strong>অন্যের দোষ প্রচার না করা</strong> : মানুষের দোষ প্রচার করা নিন্দনীয় স্বভাব। বিশেষ প্রয়োজন ও অপারগতা ছাড়া মুমিন অন্যের দোষ প্রকাশ করবে না। মহানবী (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি দুনিয়ায় কোনো মুসলমানের দোষ-ক্রটিকে গোপন রাখে, আল্লাহ তাআলা দুনিয়া ও আখিরাতে তার দোষ-ক্রটি গোপন রাখবেন।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ১৯৩০)</p> <p>৮. <strong>গোপন কথা গোপন রাখা</strong> : কেউ যদি কোনো কথা গোপন রাখার অনুরোধ করেন তবে তা গোপন রাখবে। একান্ত অপারগতা ও সামগ্রিক কল্যাণ ছাড়া তা প্রকাশ করবে না। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, কোনো ব্যক্তি কোনো কথা বলার পর আশেপাশে তাকালে তার উক্ত কথা (শ্রবণকারীর জন্য) আমানাত বলে গণ্য হবে।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ১৯৫৯)</p> <p>৯. <strong>মন্দ ধারণা পোষণ না করা</strong> : সুনির্দিষ্ট প্রমাণ ছাড়া কারো প্রতি মন্দ ধারণা পোষণ করা নিষিদ্ধ। মন্দ ধারণা কর্মক্ষেত্রের সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি নষ্ট করে। নবী কারিম (সা.) বলেন, ‘তোমরা মন্দ ধারণা পোষণ করা থেকে তোমরা দূরে থাকো। কেননা মন্দ ধারণা হলো সবচেয়ে বড় মিথ্যা কথা।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ১৯৮৮)</p> <p>১০. <strong>কথা কম বলা</strong> : ইসলাম মানুষ স্বল্পবাক হওয়ার পরামর্শ দেয়। কেননা ‘বোবার কোনো শত্র“ নেই’। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘লজ্জা-সম্ভ্রম ও অল্প কথা বলা ঈমানের দুইটি শাখা। অশ্লীলতা ও বাকপটুতা (বাচালতা) নিফাকের দুইটি শাখা।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২০২৭)</p> <p>আল্লাহ সবাইকে উত্তম আচরণের অধিকারী হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।</p>