<p style=\"text-align:justify\">ইসলাম পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান। আর কোরআন ইসলামী জীবনব্যবস্থার প্রাণসত্তা। মানবজীবনের অন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের মতো অর্থনীতি বিষয়েও আছে কোরআনের সুনির্দিষ্ট ভাষ্য। কোরআনের এসব আয়াত থেকে ইসলামী শরিয়তের অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ স্পষ্ট হয়। নিম্নে এমন প্রধান প্রধান নির্দেশনাগুলো তুলে ধরা হলো—</p> <p style=\"text-align:justify\">১. <strong>জীবিকার দায়িত্ব আল্লাহর </strong>: সৃষ্টি জগতের সব জীবের জীবিকার দায়িত্ব আল্লাহর। তিনি বলেন, ‘ভূ-পৃষ্ঠে বিচরণকারী সবার জীবিকার দায়িত্ব আল্লাহর। তিনি তাদের স্থায়ী ও অস্থায়ী অবস্থিতি সম্পর্কে অবগত; সুস্পষ্ট কিতাবে সব কিছুই আছে।’ (সুরা : হুদ, আয়াত : ৬)</p> <p style=\"text-align:justify\">২. <strong>জীবিকা আল্লাহ কর্তৃক বণ্টিত</strong> : সৃষ্টিজগতের জীবনোপকরণ ও জীবিকা আল্লাহ কর্তৃক বণ্টিত। ইরশাদ হয়েছে, ‘আমিই (আল্লাহ) তাদের মধ্যে তাদের জীবিকা বণ্টন করি, পার্থিব জীবনে...।’ (সুরা : জুখরুফ, আয়াত : ৩২)</p> <p style=\"text-align:justify\">৩. <strong>জীবিকার নিয়ন্ত্রণ আল্লাহর হাতে</strong> : জীবনোপকরণ ও জীবিকার হ্রাস-বৃদ্ধিও আল্লাহর হাতে। ইরশাদ হয়েছে, ‘যে আমার স্মরণে বিমুখ থাকবে, অবশ্য তার জীবনযাপন হবে সংকুচিত এবং আমি তাকে কিয়ামতের দিন উত্থিত করব অন্ধ অবস্থায়।’ (সুরা : ত্বহা, আয়াত : ১২৪)</p> <p style=\"text-align:justify\">৪. <strong>সবার জীবনযাত্রার মান সমান হবে না</strong> : আল্লাহ কর্তৃক বণ্টিত জীবিকা তথা মানুষের জীবনযাত্রার মান সমান হবে না। আল্লাহ এ ক্ষেত্রে তাঁর প্রজ্ঞা অনুসারে মানুষে মানুষে তারতম্য করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘আমিই তাদের মধ্যে তাদের জীবিকা বণ্টন করি, পার্থিব জীবনে এবং একজনকে অপরের ওপর মর্যাদায় উন্নত করি, যাতে একে অপরের দ্বারা কাজ করিয়ে নিতে পারে...।’ (সুরা : জুখরুফ, আয়াত : ৩২)</p> <p style=\"text-align:justify\">৫. <strong>উন্নত জীবনধারা সাফল্যের মাপকাঠি নয়</strong> : কোনো জাতির জীবনধারা উন্নত হওয়ার অর্থ তারা সফল—এমন নয়। আল্লাহ বলেন, ‘কত জনপদকে আমি ধ্বংস করেছি, যার বাসিন্দারা নিজেদের ভোগ-সম্পদের দম্ভ করত। এগুলোই তো তাদের ঘরবাড়ি; তাদের পর এগুলোতে লোকজন সামান্যই বসবাস করেছে।’ (সুরা : কাসাস, আয়াত : ৫৮)</p> <p style=\"text-align:justify\">৬.<strong> জীবনযাপনে চাই সততা</strong> : মুমিনকে তাঁর সামগ্রিক জীবনে সৎ ও ন্যায়পরায়ণ হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘বলুন! আমার প্রতিপালক নির্দেশ দিয়েছেন ন্যায়পরায়ণতার।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ২৯)</p> <p style=\"text-align:justify\">৭. <strong>আর্থিক লেনদেনে চাই সততা</strong> : মুমিন তাঁর আর্থিক লেনদেনে সততার পরিচয় দেবে। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে আমার সম্প্রদায়, তোমরা ন্যায়সংগতভাবে পরিমাপ ও ওজন কোরো, মানুষকে তাদের প্রাপ্য বস্তু কম দিয়ো না এবং  পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করে বেড়িয়ো না।’ (সুরা : হুদ, আয়াত : ৮৫)</p> <p style=\"text-align:justify\">৮. <strong>সম্পদের মোহ নিন্দনীয়</strong> : সম্পদের সীমাহীন মোহ মানুষকে অপরাধপ্রবণ করে তোলে। ইসলামের দৃষ্টিতে তা নিন্দনীয়। আল্লাহ বলেন, ‘এবং তোমরা ধন-সম্পদ অতিশয় ভালোবাসো...।’ (সুরা : ফজর, আয়াত : ১৯-২০)</p> <p style=\"text-align:justify\">৯. <strong>কৃপণতা অগ্রহণযোগ্য</strong> : ইসলামে সম্পদ কুক্ষিগত করে রাখা নিন্দনীয়। আল্লাহ বলেন, ‘যারা কৃপণতা করে, মানুষকে কৃপণতার নির্দেশ দেয় এবং আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদের যা দিয়েছেন তা গোপন করে আর আমি আখিরাতে অবিশ্বাসীদের লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছি।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৩৭)</p> <p style=\"text-align:justify\">১০. <strong>সম্পদ পুঞ্জীভূত করা নিষিদ্ধ</strong> : ইসলামের দৃষ্টিতে সম্পদ পুঞ্জীভূত করা এবং সম্পদের জাকাত তথা অসহায় মানুষের আল্লাহ প্রদত্ত অধিকার আদায় না করার কঠোর নিষেধাজ্ঞা আছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর যারা স্বর্ণ ও রৌপ্য পুঞ্জীভূত করে এবং তা আল্লাহর পথে ব্যয় করে না, তাদের মর্মন্তুদ শাস্তির সংবাদ দাও।’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ৩৪)</p> <p style=\"text-align:justify\">১১. <strong>সম্পদের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করার তাগিদ</strong> : ইসলাম সম্পদের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করতে বলেছে। আল্লাহর নির্দেশ, ‘সম্পদ যেন তোমাদের ধনীদের মধ্যে আবর্তন না করে।’ (সুরা : হাশর, আয়াত : ৭)</p> <p style=\"text-align:justify\">১২. <strong>অর্থ ব্যয়ে ভারসাম্য অপরিহার্য</strong> : ইসলাম সম্পদ ব্যয়ে ভারসাম্য রক্ষার নির্দেশ দিয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘তুমি তোমার হাত তোমার গ্রীবায় আবদ্ধ করে রেখো না এবং তা সম্পূর্ণ প্রসারিতও কোরো না, তাহলে তুমি তিরস্কৃত ও নিঃস্ব হয়ে পড়বে।’ (সুরা : বনি ইসরাইল, আয়াত : ২৯)</p> <p style=\"text-align:justify\">১৩. <strong>অপচয় ও অপব্যয় নিষিদ্ধ</strong> : ইসলাম অপচয় ও অপব্যয়কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা খাও ও পান কোরো; অপচয় কোরো না।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ৩১)</p> <p style=\"text-align:justify\">১৪. <strong>ধনীদের মানবিক দায় </strong>: ধনীদের মানবিক কাজে অর্থ ব্যয়ের নির্দেশ প্রদান করে বলা হয়েছে, ‘আত্মীয়-স্বজনকে দেবে তার প্রাপ্য এবং অভাবগ্রস্ত ও মুসাফিরকেও এবং কিছুতেই অপব্যয় কোরো না।’ (সুরা : বনি ইসরাইল, আয়াত : ২৬)</p> <p style=\"text-align:justify\">১৫. <strong>সুদ নিষিদ্ধ </strong>: ধ্বংস ও পোষণের হাতিয়ার সুদ নিষিদ্ধ। ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ ব্যবসাকে বৈধ করেছেন এবং সুদকে হারাম করেছেন।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৭৫)</p> <p style=\"text-align:justify\">১৬. <strong>কল্যাণের কাজে উদারতা</strong> : কল্যাণের কাজে মুমিন উদারভাবে খরচ করবে। আল্লাহ বলেন, ‘(সফল তারা) যারা সচ্ছল ও অসচ্ছল অবস্থায় ব্যয় করে।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৩৪)</p> <p style=\"text-align:justify\">১৭. <strong>জীবিকার অনুসন্ধান আবশ্যক</strong> : যারা জীবিকার অনুসন্ধানে পৃথিবীতে বিচরণ করে তাদের প্রশংসায় ইরশাদ হয়েছে, ‘অন্য লোকেরা পৃথিবীতে বিচরণ করে আল্লাহর অনুগ্রহ (জীবিকা) অনুসন্ধান করে।’ (সুরা : মুজ্জাম্মিল, আয়াত : ২০)</p> <p style=\"text-align:justify\">১৮. <strong>হালাল-হারামের বিবেচনা করা</strong> : মুমিন জীবিকা অনুসন্ধানে হালাল-হারামের সীমা মেনে চলে। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মানবজাতি, পৃথিবীতে যা কিছু বৈধ ও পবিত্র খাদ্যবস্তু রয়েছে তা থেকে তোমরা আহার কোরো এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ কোরো না, নিশ্চয়ই সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৬৮)</p> <p style=\"text-align:justify\">১৯. <strong>অবৈধ উপায়ে উপার্জন নয়</strong> : আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা পরস্পরের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস কোরো না...।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৮৮)</p> <p style=\"text-align:justify\">২০.<strong> ধ্বংসাত্মক কাজে অর্থ ব্যয় নয়</strong> : এ ব্যাপারে আল্লাহর নির্দেশ, ‘তোমরা আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় কোরো এবং নিজ হাতে নিজেদের ধ্বংস ডেকে এনো না।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৯৫)</p> <p style=\"text-align:justify\">২১. <strong>দারিদ্র্যের ভয়ে সন্তান হত্যা নিষিদ্ধ</strong> : আল্লাহ বলেন, ‘দারিদ্র্যের ভয়ে তোমরা তোমাদের সন্তানদের হত্যা কোরো না, আমিই তোমাদের ও তাদের জীবিকা প্রদান করি।’ (সুরা : আনআম, আয়াত : ১৫১)</p> <p style=\"text-align:justify\">২২. <strong>সম্পদের উৎস অনুসন্ধান </strong>: সম্পদ অনুসন্ধানের নির্দেশ দিয়ে বলা হয়েছে, ‘তিনিই সমুদ্রকে অধীন করেছেন, যাতে তোমরা তা থেকে তাজা মাছ আহার করতে পারো এবং যাতে তা থেকে আহরণ করতে পারো রত্নাবলি, যা তোমরা ভূষণরূপে পরিধান করো।’ (সুরা : নাহল, আয়াত : ১৪)</p> <p style=\"text-align:justify\">২৩. <strong>সম্পদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা</strong> : সম্পদ ধ্বংস হয় এমন সব কাজ থেকে আল্লাহ বিরত থাকার নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, ‘তোমাদের সম্পদ, যা আল্লাহ তোমাদের জন্য উপজীবিকা করেছেন তা নির্বোধ মালিকদের হাতে অর্পণ কোরো না।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৫)</p> <p style=\"text-align:justify\">আল্লাহ সবাইকে ভারসাম্যপূর্ণ আর্থিক জীবন দান করুন। আমিন।</p>