<p><strong>আগে তথ্যের যাচাই-বাছাই</strong> : প্রযুক্তি মানুষের হাতের মুঠোয়। যে কেউ প্রযুক্তির সহায়তায় যেকোনো কিছু ছড়িয়ে দিতে পারে খুব সহজেই। যেহেতু বেশির ভাগ মানুষ অনলাইনের সঙ্গে সম্পৃক্ত, তাই বিভিন্ন কুচক্রি মহল খুব সহজেই ভুয়া খবর ছড়িয়ে দিতে পারে। আর সবার মধ্যে সাইবার স্পেস সচেতনতা তৈরিতে প্রতি বছর ১২ ডিসেম্বর ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবস’ পালিত হয়। ২০১৯ সালে এর প্রতিপাদ্য ছিল ‘সত্য-মিথ্যা যাচাই আগে, ইন্টারনেটে প্রচার পরে।’</p> <p><strong>তথ্য প্রচারে যাচাইয়ের নির্দেশনা</strong> : অনেকে সরল মনে বিশ্বাস করে ভুয়া বা মিথ্যা তথ্য নিজের অজান্তেই এগুলো ছড়ানোর কাজে আত্মনিয়োগ করে। ফলে সমাজে ও রাষ্ট্রে বিভিন্ন রকম অস্থিরতা, কখনো কখনো দাঙ্গারও সৃষ্টি হয়। এ কারণে তথ্য প্রচার ও বিশ্বাসে সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। যেকোনো তথ্য পেলেই তা ভালোভাবে যাচাই না করে বিশ্বাস করা উচিত নয়, শেয়ার করা তো অনেক পরের বিষয়।</p> <p>পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনগণ, কোনো ফাসেক যদি তোমাদের কাছে কোনো সংবাদ নিয়ে আসে, তবে ভালোভাবে যাচাই করে দেখবে, যাতে তোমরা অজ্ঞতাবশত কোনো সম্প্রদায়ের ক্ষতি করে না বস। ফলে নিজেদের কৃতকর্মের কারণে তোমাদের অনুতপ্ত হতে হয়। (সুরা : হুজুরাত, আয়াত : ৬)</p> <p>এখানে ফাসেকের খবর ভালোভাবে যাচাই করতে বলা হয়েছে। কারণ সে অসত্য খবরও দিতে পারে। তা যাচাই না করা হলে মিথ্যা খবরের ফাঁদে পড়ে কারো ক্ষতি করা হয়ে যেতে পারে। ফলে কৃতকর্মের জন্য নিজেকেই অনুতপ্ত হতে হবে। অনলাইনে যারা বিভিন্ন খবর প্রচার করে, এদের বেশির ভাগ মানুষকেই আমরা চিনি না, ফলে তাদের খবরের ব্যাপারে তো আরো বেশি সতর্ক থাকা উচিত।</p> <p><strong>অযাচিত তথ্য প্রচারে বিভ্রান্তির সম্ভাবনা</strong> : যাচাই না করে খবর প্রচার করে নিজের মিথ্যাবাদী হওয়ার আশঙ্কাই বেশি। হাদিস শরিফে এ ধরনের কাজ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, কোনো ব্যক্তির মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে সে কোনো কথা শোনামাত্রই (যাচাই না করে) বলে বেড়ায়। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৯৯২)</p> <p><strong>যাচাই বিহীন খবর প্রচারে ভুল বোঝাবুঝি</strong> : কোনো তথ্য যাচাই না করে প্রচার করার কারণে অনেক বড় ধরনের ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হওয়ার অবকাশ রয়েছে। যার জলন্ত নজির নবীজির যুগে রয়েছে। ওমর (রা.) ও তাঁর এক আনসারি সঙ্গী পালাক্রমে রাসুল (সা.)-এর কাছে যেতেন। যেদিন যার পালা আসত সেদিনকার যাবতীয় খবর তিনি অপরজনকে পৌঁছাতেন।</p> <p>ওমর (রা.) বলেন, একদিন ওই সঙ্গী তার পালার দিন রাসুল (সা.)-এর কাছে গেল। রাতে ফিরে এসে আমার দরজায় খুব জোরে করাঘাত করল। আমি ঘাবড়ে বের হলে সে বলল, বিরাট ব্যাপার ঘটে গেছে। জিজ্ঞেস করলাম, কী হয়েছে? গাসসান এসে গেছে? (সে সময় মদিনায় গাসসান কর্তৃক হামলার আশঙ্কা ছিল) বলল, না, এর চেয়েও ভয়াবহ ব্যাপার। ‘রাসুল (সা.) তাঁর স্ত্রীদের তালাক দিয়ে দিয়েছেন।’ ওমর (রা.) বলেন, ‘তাহলে তো হাফসা ধ্বংস ও ক্ষতিগ্রস্ত হলো। আমি ধারণা করছিলাম, অচিরেই এমন কিছু একটা ঘটতে পারে।’</p> <p><strong>ভুল সংবাদ প্রচারে অস্থিরতা</strong> : এরপর তিনি মেয়ের কাছে গিয়ে দেখলেন, তিনি কাঁদছেন। বলেন, ‘কাঁদছ কেন? আমি কি তোমাকে সতর্ক করিনি? রাসুল (সা.) কি তোমাদের তালাক দিয়েছেন?’ বলেন, ‘আমি জানি না, তিনি ওই কোঠায় আছেন।’ এরপর ওমর (রা.) মিম্বরের কাছে গিয়ে দেখলেন, সেখানে এক জামাত সাহাবি উপস্থিত এবং কেউ কেউ কাঁদছেন। তিনি তাঁদের সঙ্গে কিছুক্ষণ বসলেন। কিন্তু উদ্বেগের কারণে স্থির থাকতে পারছিলেন না। পরপর তিনবার খাদেমের কাছে গিয়ে রাসুল (সা.)-এর কাছ থেকে তাঁর জন্য অনুমতি নিতে বলেন। খাদেম গিয়ে অনুমতি চাইলে রাসুল (সা.) নীরব থাকেন। তৃতীয়বার যখন ওমর (রা.) ফিরে যাচ্ছিলেন তখন খাদেম তাঁকে ডেকে বলেন, আপনার অনুমতি মঞ্জুর হয়েছে। তিনি সালাম দিয়ে দাঁড়িয়েই জিজ্ঞেস করলেন, ‘আপনার স্ত্রীদের কি তালাক দিয়েছেন?’ বললেন, ‘না।’ (বুখারি, হাদিস : ২৪৬৮)</p> <p>মূল ঘটনা ছিল, নবীজি (সা.) কোনো এক কারণে এক মাস স্ত্রীদের কাছে না যাওয়ার শপথ করেছিলেন এবং সে সময় তাঁর পা মচকে গিয়েছিল। তাই তিনি একটি কোঠায় অবস্থান করছিলেন। একেই কেউ কেউ তালাক মনে করে প্রচার করেছেন। ওমর (রা.) এই খবরে উদ্বিগ্ন হলেও প্রচার করেননি। অথচ খবরদাতা ছিলেন তাঁর বিশ্বস্ত সঙ্গী এবং মিম্বরের কাছে গিয়ে তিনি কতক সাহাবিকে কাঁদতেও দেখেছেন। উপরন্তু স্বয়ং নবীজিকেও উদ্বিগ্ন দেখা গেছে। তার পরও তিনি নবীজিকে সরাসরি জিজ্ঞেস না করে তথ্যটির প্রচারে নামেননি। যদি তিনি সেদিন নবীজির কাছে বিষয়টি স্পষ্ট না হয়ে শুধু পরিস্থিতির ওপর অনুমান করে খবরটি প্রচার করতেন বা বিশ্বাস করতেন, তাহলে তিনি অবশ্যই ভুলের সাগরে ডুব দিতেন। মহান আল্লাহ সবাইকে আরো সতর্ক হওয়ার তাওফিক দান করুন।</p>