<p>বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী ছিলেন সদ্য প্রয়াত কুয়েতের ১৫তম আমির শেখ সাবাহ আহমদ জাবের আল সাবাহ। উপসাগরীয় অঞ্চলের দ্বন্দ্ব-সংঘাত নিরসনে তিনি ছিলেন সব দেশের আশা-ভরসার স্থল। আধুনিক কুয়েতের জনক হিসেবে পরিচিত তিন। যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটা মেয়ো ক্লিনিকে চিকিৎসা চলাকালে ১৪ বছর শাসন করে গত ২৯ সেপ্টেম্বর ৯১ বছর বয়সে মৃত্যু বরণ করেন।</p> <p>১৯২৯ সালের ১৬ জানুয়ারি শেখ আহমদ জাবের আল সাবাহ কুয়েতের রাজধানী পশ্চিমাঞ্চল জাহরা নগরে জম্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন কুয়েতের দশম আমির শেখ আহম জাবের আল সাবাহের চতুর্থ পুত্র। আল মুবারাকিয়া স্কুলে শিক্ষাগ্রহণ করেন।</p> <p>১৯৫৪ সালে সুপ্রিম এক্সিকিউটিভ কমিটির সদস্য হন। এরপর থেকে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদাধিকার লাভ করেন। ১৯৬১ সালে সরকারের কার্যবলি পর্যবেক্ষণকারী সুপ্রিম কাউন্সিলের সদস্য নির্বাচিত হন। কুয়েতের সংবিধান প্রণয়নকারী স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন তিনি। জাতিসংঘ ও আরব লিগে কুয়েতের প্রতিনিধি হিসেবে  কাজ করেন। ১৯৬৩ সাল থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮১ থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত কুয়েতের উপ-প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ছিলেন। ২০০৩ সালের জুলাই মাসে প্রধানমন্ত্রী হন। ২০০৬ সালের ২৯ জানুয়ারি কুয়েতের আমির নির্বাচিত হন।</p> <p>১৯৬৩ সালে ১৪ মে সাবাহ আহমদ জাতিসংঘের সদস্য হলে এর ভবনের ওপর কুয়েতের পতাকা উড্ডয়ন করেন। গত শতাব্দির ষাটের দশকে ইয়ামেনের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-সংঘাত নিরসরনে সৌদি আরব ও মিশর প্রতিনিধিদের সঙ্গে অনেক কাজ করেন। ইয়েমেনের দুই পক্ষের মধ্যে সম্পর্ক বিনষ্ট হলে ১৯৭২ সালের অক্টোবর মাসে তাঁর মাধ্যমে উভয়ের মধ্যে শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর হয়।</p> <p>১৯৬৮ সালে ইরান ও বাহরাইন ইস্যু সমাধানে সাবাহ আহমদের নেতৃত্বে কাজ কুয়েত পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় কাজ করে। ১৯৭০ সালেও জর্দান সেনাবাহিনী ও প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশনের মধ্যে সংঘাত বন্ধে কাজ করেন। অবশেষে ১৯৭১ সালে বাহরাইন স্বাধীনতা অর্জন করে। এর পরের বছর তিনি ইরাক ও ইরানের মধ্যে সীমানা বিতর্কের নিরসন করেন। এছাড়া পাকিস্তান ও বাংলাদেশ যুদ্ধ বন্ধেও ভূমিকা পালন করেন।</p> <p>১৯৮০ থেকে ১৯৮৪ সালের মধ্যে ওমান ও ইয়ামেনের মধ্যে সম্পর্ক চুক্তি করে উভয় দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনে ভূমিকা রাখেন। ১৯৮৮ সালে লেবাননের আভ্যন্তরীণ সংঘাত নিরসনে আরব লিগ তাঁকে সভাপতি নির্বাচন করে। ১৯৯০ সালে কুয়েতের ওপর ইরাক হামলা করলে পুরো বিশ্ব কুয়েতের পাশে দাঁড়ায়।</p> <p>শেষ বছরগুলোতে শেখ সাবাহ আহমদ গালফ কোঅপারেশন কাউন্সিলের সহায়তায় আরব দেশগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করতে অনেক চেষ্টা করেন। সিরিয়ার মানবিক সেবায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে একাধারে তিন বার আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আহ্বান করেন তিনি। এ সময় সিরিয়ার শরণার্থীদের জন্য তিন মিলিয়ন ডলার অনুদান দেন।</p>