<article> <p style="text-align: justify;">পণ্য মূল্যস্ফীতি শুরু হয়েছিল ২০২০-২১ অর্থবছর থেকেই। সেটার তীব্রতা বৃদ্ধি পায় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে। এই মূল্যস্ফীতির কবলে পড়ে বিশ্বের প্রায় সব দেশই। বাংলাদেশেও সব দরদাম বাড়তে থাকে।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">জানুয়ারি ২০২০ থেকে অক্টোবর ২০২২ বাংলাদেশে মোটা চালের দাম বেড়েছে ৫৩ শতাংশ, আটা ৯৬ শতাংশ, সয়াবিন তেল ৮৮ শতাংশ, ডাল ৭৩ শতাংশ, চিনি ৪৫ শতাংশ, ডিম ৪১ শতাংশ, ব্রয়লার মুরগি ৬৪ শতাংশ। ২০২৩ সালেও মূল্যস্ফীতি উল্লিখিত সব পণ্যে অব্যাহতভাবে বেড়েছে। নভেম্বর ২০২২ সালে ভারতে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ৮.৪ শতাংশ (চাল রপ্তানিকারক দেশ), মিয়ানমার ১৬.১ শতাংশ, পাকিস্তান ৩৬.২ শতাংশ, শ্রীলঙ্কা ৮৫.৬ শতাংশ, চীন ৮.৮ শতাংশ, ব্রিটেন ১৪.৯ শতাংশ, যুক্তরাষ্ট্র ১১.২ শতাংশ (বাংলাদেশে ৯.৯ শতাংশ, চাল আমদানিকারক দেশ)। ২০২৩ সালে এসে মোটামুটি উল্লিখিত দেশগুলোতে মূল্যস্ফীতি বেশ নিয়ন্ত্রণে চলে আসে, তবে বাংলাদেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়ে যায়।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">ডিসেম্বর ২০২৩ ভারতে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ৯.৫ শতাংশ,  বাংলাদেশে ১২.৫ শতাংশ, পাকিস্তান ২৮.৩৪ শতাংশ (ফেব্রুয়ারি), শ্রীলঙ্কা ৩.৫ শতাংশ, নেপাল ৬.৫ শতাংশ ( ফেব্রুয়ারি)।</p> <p style="text-align: justify;"><img alt="পণ্যের বাজারে দাম কার নিয়ন্ত্রণে" height="436" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/03.March/28-03-2024/Untitled-1%20(1).jpg" width="500" />বিবিএস তথ্যে দেখা যায় ২০২৩ সালে এসে আমাদের দেশে কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি তেমন কমেনি। কারণ আমদানিনির্ভর দেশ হওয়ায় সব উৎপাদন উপকরণের বর্ধিত দামে কিনতে হয়েছে। আমাদের মূল্যস্ফীতির বর্তমান ধরন হলো, উৎপাদন খরচতাড়িত মূল্যস্ফীতি, যা কেবল টাকার সরবরাহ কমিয়ে, সুদের হার বাড়িয়ে কিংবা যন্ত্রপাতি, মধ্যবর্তী উৎপাদন উপকরণ আমদানি কমিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">উৎপাদন খরচতাড়িত মূল্যস্ফীতি কমাতে সময় দিতে হবে। কেননা প্রতি ইউনিটে উৎপাদন হার বাড়াতে হবে, তার জন্য উন্নত প্রযুক্তি ও ব্যবস্থাপনা দক্ষতা বাড়াতে কিংবা শ্রম উৎপাদিকা বাড়াতে প্রশিক্ষণ জোরদার করতে হয়; যার জন্য সময় দিতে হবে। শিল্প খাত, প্রক্রিয়াকরণ, সেবা খাত, কৃষির ফসলসহ সব উপখাতে উৎপাদন বৃদ্ধির সামগ্রিক প্রয়াস জোরদার করতে হবে। সারা দেশে অবাধ ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। প্রতিটি পণ্যবাজার উপকরণ বিপণনে যারা জড়িত বাধাহীনভাবে ব্যবসা কার্যক্রম যাতে চালিয়ে যেতে পারে সে পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">ব্যক্তি খাতের প্রাধান্যে, বাজার অর্থনীতির কুশীলবরা বাজার অর্থনীতির কাঠামোয় সবচেয়ে বেশি সক্রিয় ছিল বা সুযোগ দেওয়া হয়ে ছিল বিধায় আমরা গত দেড় দশকে নজিরবিহীন অগ্রগতি করতে পেরেছি।</p> <p style="text-align: justify;">মূল্যস্ফীতি কমানোর স্বার্থে, প্রবৃদ্ধি বাড়াতে হাজার হাজার পণ্য বাজার, উপকরণ বাজার এবং এই বাজারের যারা অংশগ্রহণকারী তাদেরকে ভীতিহীনভাবে কাজ চালিয়ে যেতে দিতে হবে। সার্বক্ষণিক পণ্য পরিবহন নিশ্চিত করতে হবে। মোটাদাগে সব ছোট-বড় বাজারকে বাধাহীনভাবে কাজ করতে দিতে হবে। বাজার অর্থনীতির সুফল পেতে হলে বাজারকে অবিরাম কাজ করতে দিতে হবে। মেনে নিতে হবে দক্ষ বাজার অর্থনীতিতে সরকার শুধু ‘রেফারি’। রেফারির দক্ষতাই বাজারকে সবার জন্য কল্যাণকর করে তোলে।</p> <p style="text-align: justify;">বাজারের মূল কুশীলব উৎপাদক, ব্যবসায়ী, ভোক্তা। পক্ষপাতহীনভাবে এই তিন কুশীলবের স্বার্থ দেখবে রেফারি। রেফারি উৎপাদন ও বণ্টন/বিতরণে সর্বোচ্চ সহায়তা করবে। এই বাজার অর্থনীতিকে ব্যবহার করে পৃথিবীর অনেক দেশ দ্রুত সমৃদ্ধি অর্জন করেছে। বাজার অর্থনীতি ন্যক্কারজনক শোষণযন্ত্রে পরিণত হতে পারে যদি রেফারি খেলায় অংশ নেয় (ব্যক্তি খাতে পারে এমন ব্যবসা সরকার করলে) এবং রুল অব গেম ভঙ্গ করে কোনো কুশীলবের (প্রভাবশালী ব্যবসায়ীদের) দিকে পক্ষপাত করে। উদ্যোগে ব্যক্তির স্বাধীনতা বেশি বিধায় মুক্তবাজার ব্যবস্থাই সবচেয়ে উদ্ভাবনীমূলক এবং দ্রুত প্রবৃদ্ধি সহায়ক।</p> <p style="text-align: justify;">আমাদের উচ্চ খাদ্য মূল্যস্ফীতিকালে এবং গত ডিসেম্বরে ভরা আমন মৌসুমে যখন আমন চালের দাম বাড়তে থাকে, বরাবরের মতো এর জন্য চালকল, চাল মজুদদার সিন্ডিকেটকে অভিযুক্ত করা হয় এবং খাদ্য মন্ত্রণালয় বিভিন্ন কড়া হুঁশিয়ারি দিতে থাকে। মূল বিষয়টা ছিল আমনের এ বছরের কম উৎপাদন। এ বছর পত্রিকা প্রতিবেদন অনুযায়ী আমন প্রায় ১২-১৫ শতাংশ কম উৎপাদন হয়েছে। এর কারণ ছিল নভেম্বর মাসে কয়েকবার অসময়ের বৃষ্টি এবং নভেম্বর মাসেই দক্ষিণাঞ্চলে নিম্নচাপ সৃষ্ট জোরালো বায়ুপ্রবাহ ও অধিক বৃষ্টিপাত। ফলে পাকা-আধাপাকা আমন ফসলের ব্যাপক ক্ষতি। এখানে চালকল, চাল মজুদদারদের কিছুই করার ছিল না। পূর্বেই চাল আমদানিতে ট্যারিফ অনেক কমানো হয়েছিল (৬২ থেকে ১৫ শতাংশ) এবং দ্রুত চাল আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়। যার ফলে চালের বাজারে দাম বাড়তি পর্যায়ে গিয়ে কিছুটা স্থিতিশীল হয়। ডিমের বাজারে অস্বাভাবিক দাম বেড়ে গিয়েছিল ২০২২-এর মাঝামাঝি। কাজী ফার্মসকে এই দাম বাড়ার জন্য জরিমানাও করা হয়েছিল। পরে ভারত থেকে ডিম আমদানি শুরু হলে দাম কমে আসে। ডিমের বাজার কিংবা ব্রয়লার মুরগির বাজারে সিন্ডিকেশনের সুযোগ নেই। কারণ সারা দেশে লেয়ার কিংবা ব্রয়লার মুরগির ছোট-বড় হাজার হাজার পরিবারভিত্তিক খামার ছিল। আমদানীকৃত মুরগির ফিডকস্ট, ওষুধ/ভিটামিনের দাম অত্যধিক বেড়ে যাওয়ায় অনেক ছোট ও মাঝারি লেয়ার ফার্ম ব্যবসা গুটিয়ে নেয়। ব্রয়লারের ক্ষেত্রেও তা-ই হয়েছিল। যার কারণে ডিম ও ব্রয়লারের দাম অনেক বেড়ে যায়। অধিক খরচতাড়িত মূল্যস্ফীতির এটা কুফল।</p> <p style="text-align: justify;">দাম বাড়লেই গণ-অসন্তোষ চাপা দেওয়ার জন্য প্রথমেই আমরা সিন্ডিকেটের কিংবা মজুদদারদের ওপর দোষ চাপাই। মোটাদাগে কৃষিপণ্য বাজার প্রতিযোগিতামূলক। কেননা এখানে হাজার হাজার ব্যবসায়ী মূল্য শৃঙ্খলের বিভিন্ন ধাপে জড়িত এবং এরা সারা দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। সিন্ডিকেশন সম্ভব শুধু কতিপয়ের ব্যবসায় এবং স্থানিকভাবে কেন্দ্রীভূত থাকলে। এই কতিপয়ের ব্যবসা মানে ৫-৭ থেকে সর্বোচ্চ কয়েক ডজন একই বাজার পরিধিতে। যেমন ধরুন ভোজ্য তেল, চিনি, ডাল, চাল, ডিম আমদানিকারক অথবা একই বাজারে কয়েকজন পাইকার। সংখ্যায় কম বলে এরা বাজারে পণ্যদাম এককভাবে নিয়ন্ত্রণের সুযোগ পেলেই সিন্ডিকেট/কার্টেল করতে পারে। সেটাও করতে চাইবে না, যদি বাজারে চাহিদা ও সরবরাহে তেমন পার্থক্য না থাকে। পণ্যের চাহিদা ও সরবরাহের পার্থক্য না থাকলে কোনো নির্দিষ্ট পণ্য বাজারে সিন্ডিকেট হওয়ার সুযোগ তৈরি হয় না।</p> <p style="text-align: justify;">মৌসুমে বা অমৌসুমে সারা দেশে কোনো দাম যদি বাজারে মৌসুমি গড় দামের চেয়ে বেশি বাড়তেই থাকে, মনে করতে হবে ওই পণ্যের উৎপাদন ঘাটতি আছে। কৃষি বিভাগ আগাম উৎপাদন পূর্বাভাস যা-ই দিক, দেশীয় উৎপাদিত পণ্যের সরবরাহ পরিস্থিতির সংকেত দেবে মূল্য। দেশে উৎপাদিত মাছের যে চাহিদা, বাজারে সরবরাহ প্রায় সমান অথবা উদ্বৃত্ত, যে কারণে মাছের দরদামে সিন্ডিকেশনের কখনো আওয়াজ ওঠে না। মাছ-মাছজাত পণ্য আমরা রপ্তানি করি। গরুর মাংস/খাসির মাংসের দর বেঁধে দিতে হয়। কারণ তা সরবরাহ ঘাটতি আছে (যদিও কৃষিপণ্যের দাম বেঁধে তা কার্যকর হয়েছে, নজির কম)। গোমাংসের অত্যধিক দাম সংকেত দেয়, গবাদি পশুতে আমাদের ঘাটতি আছে। ঘাটতি মোকাবেলার স্বল্পমেয়াদি সমাধান উন্মুক্ত আমদানি করতে দেওয়া। দীর্ঘ মেয়াদে নিজেদের উৎপাদন বাড়ানো। প্রক্রিয়াজাত শুঁটকি আমাদের চাহিদা মেটায়, যে কারণে এই পণ্য গুদামজাত করা গেলেও মজুদদারির প্রশ্ন ওঠে না।</p> <p style="text-align: justify;">কৃষিপণ্যের ক্ষেত্রে মজুদদারি গুরুত্বপূর্ণ বিপণন কার্যক্রম। কৃষিপণ্য উৎপাদন মৌসুমভিত্তিক। আমন ওঠে নভেম্বরের শেষে এবং ডিসেম্বরে। উৎপাদিত চাল উৎপাদন ব্যয় ও সাংসারিক জরুরি ব্যয় মেটানোর জন্য বহু কৃষক কর্তন সময়েই বাজারে নিয়ে আসে, কিন্তু সেই সময়ে ভোক্তা চাহিদা বাড়ে না। তখন যদি মজুদদার এবং মিলার বাজারে বাড়তি সরবরাহ কিনে না নিত, তাহলে কৃষককে পানির দামে বিক্রি করতে হতো, কিংবা নিজ খরচে ধান ফেরত আনতে হতো। অথবা সংগঠিত হয়ে ন্যায্য দামের জন্য দিল্লি স্টাইলে আন্দোলনে নামতে হতো। অমৌসুমে বিক্রির জন্য মিলার/মজুদদার ধান কিনে থাকে এবং ভোক্তাকে সারা বছর চাল প্রাপ্তি নিশ্চিত করে। আবার দাম বাড়লেই  ওই মিলার/মজুদদারদের দায়ী করা হয়। তাদের বিপণন কার্যক্রমে বাধা দেওয়া সঠিক নয় বলে মনে করি।</p> <p style="text-align: justify;">কৃষক পর্যায়ে, গ্রাম পর্যায়ে, বেকার যুবকদের মজুদদারি ও গুদামজাতকরণে উৎসাহিত করা যায়। কৃষিপণ্য বিবেচনায় সহজ শর্তে এদের ঋণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে, যাতে বাজার কার্যক্রম বৃদ্ধি পায়। মজুদদারি যত বাড়বে, প্রতিযোগিতা বাড়বে এবং সারা বছর পণ্যের দামের ওঠানামা কম হবে। প্রতিযোগিতামূলক বাজারে বাজারদর মোট চাহিদা ও মোট সরবরাহের ওপর বাজারেই নির্ণীত হয়। সমমান পণ্যে এককভাবে কোনো বিক্রেতা দাম বেশি চাইলে বিক্রি করতে পারবে না। দাম কম চাইবে না, কারণ বাজার দামে সে বিক্রি করতে পারে। রেফারির এখানে দাম বেঁধে দেওয়ার কিছু নেই। অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা যায়, কৃষিপণ্যের দাম বেঁধে দিয়ে লাভ নেই। কারণ এটা বাস্তবায়ন করা যায় না। এটা এই কারণে যে শহরসহ সারা দেশে বিস্তৃত ৩৫-৪০ হাজার বাজারে একই পণ্যের আরো ৫-৬ গুণ বিক্রেতা, কয়জনকে দেখা যাবে সে নির্ধারিত দামে আলু বা পেঁয়াজ বিক্রি করছে কি না? কৃষি দরদাম বেঁধে দেওয়া কার্যকর কেবল তখনই করা যাবে যখন  সরবরাহ নিশ্চিত করা যাবে, আর সরবরাহ যদি নিশ্চিতই হবে, তখন দাম বেঁধে দেওয়ার দরকার পড়ে না!</p> <p style="text-align: justify;">পণ্য মজুদদারি আইন এখন সেকেলে হয়ে পড়েছে। নিয়ন্ত্রিত অর্থনীতিতে এ আইন করা হয়েছিল। দুর্ভিক্ষ কিংবা যুদ্ধের ডামাডোলে এ আইনের প্রয়োগ হতে পারে, বাজার অর্থনীতিতে নয়! পণ্য ঘাটতি বাজার থেকে বেরিয়ে আসতে পারলে মজু্দদারি আইন অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যাবে। স্বয়ংসম্পূর্ণতার দিকে যেতে হলে, দ্রুত প্রবৃদ্ধি চাইলে বাজারকে অবাধে কাজ করতে দিতে হবে। ব্যক্তি খাতকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা দিতে হবে। কেমন করে প্রতিযোগিতা বাড়ানো যায় রেফারির সেটাই মুখ্য কাজ। আমদানি-রপ্তানি উন্মুক্ত করতে হবে। ব্যবসায় লাইসেন্স প্রথা বিলুপ্ত করার পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ভাবা যায়। ‘লাইসেন্স রাজ’ থেকে বের হওয়ার পরই ভারত দীর্ঘ সময়ের অর্জন  সাড়ে ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হার (এটাকে বলা হতো ‘হিন্দু প্রবৃদ্ধি’র হার, মূলত নেহরুর সময়ে) অতিক্রম করতে পেরেছিল। আজ ভারত এই চ্যালেঞ্জিং সময়েও ৮-৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের পথে।</p> <p style="text-align: justify;">বাজার অর্থনীতিকে কাজ করতে দিতে হলে বাজারের ব্যর্থতাগুলো অবশ্যই সারিয়ে তুলতে হবে। কোনো ব্যবসায়ী যখন পণ্যে ভেজাল দিচ্ছে, ওজনে কম দিচ্ছে, মানহীন পণ্য বাজারজাত করছে, মোটা চালকে মেশিনে চিকন করে মিনিকেট বানাচ্ছে, পাইজাম চালকে এক সিদ্ধ করে নাজিরশাইল বানাচ্ছে, সে  ফাউল খেলছে। ভোক্তারা বঞ্চিত হচ্ছে। রেফারিকে তখন শক্ত হাতে এই বাজার খেলোয়াড়কে নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। দাম বেঁধে দেওয়ায় খেলা বাদ দিয়ে বরং রেফারিকে এদিকেই বেশি মনোযোগ দিতে হবে। আইনের কঠোর বাস্তবায়ন ছাড়া বাজার অর্থনীতি পূরোপুরি কিংবা সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। কৃষি বাজারে কেবল ‘সিন্ডিকেশন’ বা ‘মজুদদারি’ই সমস্যা নয়, সমস্যা আছে বাজার খেলোয়াড়দের নীতি-নৈতিকতায়। রোজা শুরু হলেই ৪০ টাকা হালির লেবু ৮০-৯০ টাকা চাওয়া, ১০০ টাকার  তরমুজ ৪০০ টাকা চাওয়া, ৬০ টাকার বেগুন ১৫০ টাকা চাওয়া তো নীতি-নৈতিকতার প্রশ্ন! এটা ব্যক্তি বিক্রেতার অতিমুনাফা লোভে চাওয়া। আবার এর মধ্যে খলিল ঘোষণা দিয়ে ৫৯০ টাকা কেজি গোমাংস বিক্রি করায় তাঁরই আর এক মাংস বিক্রেতা বন্ধু তাঁকে প্রকাশ্যে হত্যার হুমকি দেয়!</p> <p style="text-align: justify;">বাজার তো কেবল পণ্য, পণ্যের দাম আর প্রতিযোগিতা নয়। বাজার কুশীলব যারা, তাদের নীতি-নৈতিকতাও বাজার অর্থনীতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রেফারি/সরকারের দায়িত্ব, প্রথমে আইনের শাসনে জোর দেওয়া এবং একই সঙ্গে শিক্ষাব্যবস্থায় নীতি-নৈতিকতা, পরার্থপরতা বিষয়কে জোর দিয়ে বাজারমুখী, কর্মমুখী শিক্ষার প্রসারে মানবসম্পদ সৃষ্টিতে সর্বাধিক সম্পদের জোগান দেওয়া। বাজার অর্থনীতি কমবেশি বিশ্বের সব দেশই এখন অনুসরণ করছে। সরকার সত্যিকার রেফারির ভূমিকায় নামুক—উন্নয়নপ্রত্যাশী নাগরিকদের আজকের চাওয়া এটিই।</p> <p style="text-align: justify;"><b>লেখক : অর্থনীতিবিদ</b> ও সামষ্টিক পরিকল্পনা বিশেষজ্ঞ</p> <p style="text-align: justify;"><img alt="1" height="100" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/online/2024/03/28/my1187/6.jpg" width="167" /></p> </article>