<article> <p style="text-align: justify;">বছর ঘুরে আবার এসেছে ২৫ মার্চ। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ দিবাগত রাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী বাংলাদেশে সুপরিকল্পিত গণহত্যা শুরু করে এবং সেটি চলে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত। অকাট্য দালিলিক প্রমাণ এবং গণহত্যায় অংশ নেওয়া সেনা কর্মকর্তাদের স্বীকারোক্তিমূলক দলিল থাকার পরও ৯ মাসের কম সময়ে ৩০ লাখ নিরীহ মানুষকে হত্যার বিচার হয়নি, আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও পাওয়া যায়নি। অথচ বাংলাদেশে সংঘটিত গণহত্যার অনেক পরে সংঘটিত গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও বিচার, দুটিই হয়েছে।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">গত শতকের নব্বইয়ের দশকে রুয়ান্ডা ও বসনিয়ায় এবং সত্তরের দশকে কম্বোডিয়ায় সংঘটিত গণহত্যার বিচার এরই মধ্যে হয়ে গেছে।</p> <p style="text-align: justify;">বসনিয়ার গণহত্যার সঙ্গে বাংলাদেশের গণহত্যার মিল রয়েছে এভাবে যে দুটি গণহত্যাই চালিয়েছে অন্য দেশের দখলদার বাহিনী। আর কম্বোডিয়া ও রুয়ান্ডায় গণহত্যা হয় তাদের গৃহযুদ্ধের সময়। জাতিসংঘের অধীন আন্তর্জাতিক আদালতে ঘটনার ১৫ বছরের মধ্যেই বসনিয়া গণহত্যার বিচার সম্পন্ন হয়েছে।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">অথচ ৫৩ বছর পেরিয়ে গেলেও বাংলাদেশে সংঘটিত গণহত্যার বিচার এখনো হয়নি এবং তার কোনো উদ্যোগও নেই। কেন এমনটি হচ্ছে, তা নিয়ে বাংলাদেশের মানুষকে নতুন করে ভাবা উচিত। জাতি হিসেবে আত্মমর্যাদা নিয়ে বাঁচতে হলে এমন নগ্ন গণহত্যার বিচার ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি একান্ত প্রয়োজন। কেন স্বীকৃতি ও বিচার হলো না, সেটি উল্লেখ করার আগে একাত্তরে বাংলাদেশে সংঘটিত গণহত্যার চিত্রটি আরেকবার দেখে নেওয়া যাক।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী বাংলাদেশে সুপরিকল্পিত গণহত্যা শুরু করে, যা লেখার শুরুতেই উল্লেখ করেছি। ওই সেনা অভিযানের সাংকেতিক নাম ছিল অপারেশন সার্চলাইট। সেই গণহত্যার অন্যতম প্রধান কালপ্রিট পাকিস্তানি ১৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল খাদিম হোসেন রাজা কর্তৃক লিখিত—‘</p> <p style="text-align: justify;">‘A stranger in my own country’  গ্রন্থের ভূমিকার দ্বিতীয় পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে @‘We exploited East Pakistan and when the people rose demanding their right of self determination, the Pakistan Military, than in power retaliated with genocide.’</p> <p style="text-align: justify;">যুদ্ধের পর পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি হামদুর রহমানের নেতৃত্বে তদন্তে পাকিস্তান সেনাবাহিনী অনেক চেষ্টা করেও গণহত্যার বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে ধামাচাপা দিতে পারেনি।</p> <p style="text-align: justify;"><img alt="পাকিস্তানের বিরুদ্ধে মামলা করতে হবে" height="404" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/03.March/25-03-2024/Untitled-2.jpg" width="500" />ঠাণ্ডা মাথায় গণহত্যার পরিকল্পনাকারী মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী নিজের গা বাঁচানোর জন্য তদন্ত কমিটির কাছে বলেছেন, লেফটেন্যান্ট কর্নেল ইয়াকুব মালিকের নির্দেশে ১৯৭১ সালের ২৭ ও ২৮ মার্চ কুমিল্লা সেনানিবাসে বাঙালি কর্মকর্তাসহ ১৯৫ জন নিরীহ মানুষকে স্রেফ জবাই করা হয়। সালদা নদী এলাকায় ৫০০ জনকে হত্যা করা হয় এবং গ্রামাঞ্চল ও ছোট শহরগুলো শত্রুমুক্ত করার নামে পাকিস্তান সেনাবাহিনী নির্দয়ভাবে ধ্বংস, অগ্নিসংযোগ ও হত্যাযজ্ঞ চালায়।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">একজন ব্রিগেড কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার ইকবালুর রহমান তাঁর জবানবন্দিতে বলেছেন, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ জেনারেল গুল হাসান পূর্ব পাকিস্তানের সেনা ইউনিট পরিদর্শনের সময় সৈনিকদের জিজ্ঞেস করতেন, তুমি কয়জন বাঙালিকে মেরেছ। আরেকজন কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল আজিজ আহমদ খান তাঁর সাক্ষ্যে বলেন, ঠাকুরগাঁওয়ে তাঁর ইউনিটে গিয়ে জেনারেল নিয়াজি জিজ্ঞেস করেন, তোমরা কতজন হিন্দু মেরেছ। জেনারেল নিয়াজি তাঁর নিজের লেখা—‘</p> <p style="text-align: justify;">The betrayal of East Pakistan’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, জেনারেল টিক্কা খান তাঁকে বলেছিলেন, ‘আমি পূর্ব পাকিস্তানের মাটি চাই, মানুষ চাই না।’ নিয়াজি তাঁর বইয়ে লিখেছেন, টিক্কা খান পোড়ামাটি নীতি গ্রহণ করেন এবং সে অনুসারে জেনারেল রাও ফরমান আলী ও ঢাকার ব্রিগেড কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জাহানজেব আরবার হুকুম পালন করেন।</p> <p style="text-align: justify;">জেনারেল ফরমান আলী তাঁর টেবিল ডায়েরিতে লিখে রেখেছিলেন, পূর্ব পাকিস্তানের সবুজ ভূমি বাঙালির রক্তে লাল করা হবে। আরেক পাকিস্তানি কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার সিদ্দিক সালিক  ‘Witness to Surrender’ গ্রন্থের ৭৭ পৃষ্ঠায় বর্ণনা করেছেন, ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ সকালে শেরেবাংলানগরে অবস্থিত নিজের কমান্ড পোস্ট থেকে বাইরে এসে শহরের দিকে তাকিয়ে জেনারেল টিক্কা খান বিদ্রুপের হাসিতে বলেছিলেন, ‘ঢাকা শহরে কয়েকটি নেড়ি কুত্তা ছাড়া মানুষজন আছে বলে তো মনে হচ্ছে না।’ এত বড় নিষ্ঠুর-নির্মম উপহাস যে ব্যক্তি করতে পারেন, তাঁর জন্য কসাই উপাধিই যথার্থ হয়। এ কারণেই একাত্তরের যুদ্ধের সময় শিল্পী কামরুল হাসান এঁকেছিলেন ইয়াহিয়া খানের সেই বিখ্যাত রাক্ষসরূপ ছবি, যার নিচে লেখা ছিল—এই দানবদের হত্যা করুন। জেনারেল খাদিম হোসেন রাজার বইয়ের ভূমিকায় উল্লেখ আছে, মার্চ মাসে ঢাকায় উত্তাল আন্দোলন শুরু হওয়ার অনেক আগেই একাত্তরের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান সামরিক অ্যাকশনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল হামিদ খান ১৭ মার্চ খাদিম হোসেন রাজাকে সার্চলাইটের আদেশনামা চূড়ান্ত করার হুকুম দেন। তারপর খাদিম হোসেন ও রাও ফরমান আলী ১৮ মার্চ একত্রে ঢাকা সেনানিবাসে বসে অপারেশনের আদেশনামা চূড়ান্ত করেন।</p> <p style="text-align: justify;">এখানে উল্লেখ্য, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ফেব্রুয়ারি মাসের দ্বিতীয়ার্ধে জুলফিকার আলী ভুট্টোর সঙ্গে পরামর্শের পর পূর্ব পাকিস্তানে সেনা অভিযানের জন্য সেনাপ্রধান হামিদ খানকে প্রস্তুত হতে বলেন। জেনারেল হামিদ ও পূর্ব পাকিস্তানের নতুন গভর্নর ও সামরিক প্রধান টিক্কা খান একত্রে ২০ মার্চ অপারেশন সার্চলাইটের অনুমোদন দেন। এর মধ্যে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ (সিজিএস) গুল হাসান কয়েকবার রাওয়ালপিণ্ডি থেকে ঢাকায় আসা-যাওয়া করেন। জুলফিকার আলী ভুট্টোর প্ররোচনায় গুল হাসান ও টিক্কা খান দুজনে মিলে থিওরি দেন, সাড়ে সাত কোটির মধ্যে ২৫ থেকে ৩০ লাখ বাঙালি হত্যা করলে কিছু যাবে-আসবে না, বরং তাতে সব ঠিক হয়ে যাবে এবং পাকিস্তান রক্ষা পাবে। আগামী ৩০ বছর নিশ্চিন্তে বাঙালিদের শাসন করা যাবে। রাও ফরমান আলী ২৫ মার্চ রাতে ঢাকা শহরে অপারেশন পরিচালনার জন্য ৫৭ পদাতিক ব্রিগেড ও তার কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জাহানজেব আরবারের ওপর দায়িত্ব অর্পণ করেন। ৫৭ ব্রিগেডের অধীনে ছিল ২২ বালুচ রেজিমেন্ট, ১৮ পাঞ্জাব, ৩২ পাঞ্জাব, ৩১ গোলন্দাজ ও ১৩ ফ্রন্টিয়ার রেজিমেন্ট।</p> <p style="text-align: justify;">সার্চলাইটের আদেশনামায় রাও ফরমান আলী সুনির্দিষ্টভাবে টার্গেট উল্লেখপূর্বক আদেশ দেন কোন সেনাদল কোথায় অভিযান চালাবে। আদেশনামায় টার্গেট হিসেবে উল্লেখ করেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বিশেষভাবে নির্দিষ্ট করেন ইকবাল হল (বর্তমান সার্জেন্ট জহুরুল হক হল), জগন্নাথ হল, ঢাকা হল এবং শিক্ষকদের আবাসিক এলাকা। ভারী অস্ত্রসহ ১৮ পাঞ্জাব রেজিমেন্টকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় আক্রমণের দায়িত্ব দেওয়া হয়। একইভাবে অন্যান্য সেনাদলকে আলাদাভাবে পুরান ঢাকা, শাঁখারীবাজার, পিলখানা ও রাজারবাগ পুলিশ লাইনসকে টার্গেট হিসেবে নির্দিষ্ট করে আক্রমণের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এখানে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণীয় বিষয় হলো, লিখিতভাবে সামরিক অপারেশন আদেশনামায় বেসামরিক এলাকা ও মানুষকে টার্গেট হিসেবে নির্ধারণ করা হয়। ঢাকার বাইরে অন্য শহরগুলোতেও খাদিম হোসেন রাজা বেসামরিক মানুষ ও আবাসিক এলাকাকে টার্গেট হিসেবে আক্রমণের জন্য নির্ধারণ করে দেন।</p> <p style="text-align: justify;">২৫ মার্চ রাতে ঢাকায় কত বড় গণহত্যা চালানো হয় তার চিত্র বোঝার জন্য টিক্কা খানের উক্তিই যথেষ্ট, যে কথা একটু আগেই উল্লেখ করেছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গোবিন্দ চন্দ্র দেবসহ এক ডজনের ওপর শিক্ষক এবং কয়েক শ ছাত্রকে হত্যা করা হয়। এক রাতেই শাঁখারীবাজারে নিহত হয় প্রায় আট হাজার মানুষ। চকবাজারসহ ঢাকা শহরের অন্যান্য এলাকায়ও একই রকম হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়। পুরান ঢাকায় প্রধানত টার্গেট করা হয় হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষকে। ঘুমন্ত নারী-শিশুসহ ঘরবাড়িতে গানপাউডারের মাধ্যমে আগুন দেওয়া হয়। যুদ্ধ সম্পর্কে জেনেভা কনভেনশনের প্রারম্ভে বলা হয়েছে, </p> <p style="text-align: justify;">Even Wars have limit; civilian should never be targeted. তারপর জেনেভা কনভেনশনে যুদ্ধরত বাহিনীকে ১০টি রুল বা বিধি মান্য করার বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে, যেখানে তিনটি বিধির মাধ্যমে বিশেষভাবে বেসামরিক মানুষের জন্য রক্ষাকবচ তৈরি করা হয়েছে। এর এক নম্বর—Prohibit targeting civilians, doing so is a war crime.  বিদেশি সাংবাদিক ও কূটনীতিকদের প্রতিবেদনেও ভয়াবহ গণহত্যার চিত্র ফুটে উঠেছে। ১৯৭১ সালের ৩১ মার্চ সাংবাদিক সাইমন ড্রিংয়ের সেই বিখ্যাত প্রতিবেদন ছাপা হয় লন্ডনের দৈনিক টেলিগ্রাফ পত্রিকায়। এতে উল্লেখ করা হয়, পাকিস্তানে ধর্ম রক্ষার নামে ঢাকা নগরীকে ধ্বংস করে একটি ভয়ংকর ভূতুড়ে নগরীতে পরিণত করা হয়েছে। ঠাণ্ডা মাথার হত্যাকাণ্ডে ২৪ ঘণ্টায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গুলিতে কম করে হলেও শুধু ঢাকায়ই সাত হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কনসাল জেনারেল আর্চার কে ব্লাড তাঁর নিজের লিখিত ‘ক্রুয়েল বার্থ অব বাংলাদেশ’ গ্রন্থের ২১৩ পৃষ্ঠায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বাছাই করা গণহত্যার বর্ণনা দিয়েছেন। এই গণহত্যার প্রতিবেদন তিনি ২৮ মার্চ ওয়াশিংটনে পাঠিয়েছিলেন। একই রকম বাছাইকৃত গণহত্যার বর্ণনা পাওয়া যায় তখন দিল্লিতে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত কেন ফিটিংয়ের প্রতিবেদনে, যার বর্ণনা আছে আর্চার ব্লাডের বইয়ের ২১৫ পৃষ্ঠায়। সুতরাং পাকিস্তান সেনাবাহিনী একাত্তরে বাংলাদেশে গণহত্যা চালিয়েছে, তার যথেষ্ট প্রমাণ আছে। মাত্র আট মাস ২২ দিনে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ৩০ লাখ বেসামরিক মানুষকে হত্যা করে।</p> <p style="text-align: justify;">মানবসভ্যতার ইতিহাসে রেকর্ডকৃত তথ্য মতে, এত অল্প সময়ে এত বড় ভয়ংকর গণহত্যা বিশ্বে আর কোথাও হয়নি। বাংলাদেশের এই গণহত্যা পাকিস্তান সেনাবাহিনী চালায় আনুষ্ঠানিকভাবে লিখিত মিলিটারি অপারেশন আদেশ জারির মাধ্যমে। অপারেশন সার্চলাইটের লিখিত আদেশনামাই গণহত্যা প্রমাণের জন্য যথেষ্ট। এতসব অকাট্য দালিলিক প্রমাণ থাকার পরও ৫৩ বছরে গণহত্যার স্বীকৃতি ও বিচার না হওয়ার জন্য আমরা বাংলাদেশের মানুষই দায়ী। ১৯৭৫ সালের পর সব কিছু উল্টে গেল। দুই সামরিক শাসক ও তাঁদের উত্তরসূরি রাজনৈতিক দল দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থেকে পাকিস্তানের সঙ্গে এমন দোস্তিভাব সম্পর্ক স্থাপন করেছে, তাতে সবারই মনে হয়েছে একাত্তরে কিছুই ঘটেনি। কয়েকটি নতুন প্রজন্মের বড় এক অংশ একাত্তর সম্পর্কে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। নব্বইয়ের দশকের শুরুতে বিএনপি পুনরায় ক্ষমতায় এসে আরো এক ধাপ এগিয়ে পাকিস্তানের সব অপকীর্তি ঢাকা দেওয়ার ব্যবস্থা করে। অলিখিত হুকুম জারি হয়—একাত্তরের কথা বলতে ও লিখতে পাকিস্তান কথাটি উল্লেখ করা যাবে না, তার পরিবর্তে হানাদার বাহিনী বলতে ও লিখতে হবে। একাত্তরে ঢাকায় কর্মরত একজন পাকিস্তানি কর্মকর্তা, পরবর্তী সময়ে জেনারেল নব্বইয়ের দশকের শুরুতে মারা গেলে সব রাষ্ট্রীয় আচার ভঙ্গ করে বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী আনুষ্ঠানিক শোকবার্তা পাঠান। অথচ একাত্তরে ভারতের ইস্টার্ন কমান্ডের প্রধান জগজিৎ সিং অরোরা ২০০৫ সালে মারা গেলে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো শোকবার্তা দেওয়া হয়নি।</p> <p style="text-align: justify;">অনেক দিন পেরিয়ে গেছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ঘিরে এবং বর্তমান সময়ে বৈশ্বিক ভূ-রাজনীতির বাস্তবতায় শুধু কিছু প্রচার-প্রচারণামূলক তৎপরতায় গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়া যাবে, তা আমার মনে হয় না। জোরালো কূটনৈতিক তৎপরতার সঙ্গে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। বসনিয়ার গণহত্যার জন্য আন্তর্জাতিক আদালতে বিচার হতে পারলে বাংলাদেশের গণহত্যার বিচারও অবশ্যই হবে। না হওয়ার কোনো কারণ নেই। ৫৩ বছরে যেটি হয়নি, সেটি ৬৫ বছরের মাথায় হবে। সেটিও ভালো। এর মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও বিচার দুটিই একসঙ্গে পাওয়া যাবে।</p> <p style="text-align: justify;"><strong>লেখক : </strong>রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক</p> <p style="text-align: justify;">sikder52@gmail.com</p> </article>