<article> <p style="text-align: justify;">বাংলাদেশসহ বিশ্বের বেশির ভাগ দেশের গণতন্ত্র, মানবাধিকার, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, দুর্নীতি ইত্যাদি বিষয়ে বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে বিভিন্ন এনজিও। এসব এনজিওর মধ্যে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট, ফ্রিডম হাউস, টিআই, রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস অন্যতম।</p> <p style="text-align: justify;">অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষের দিকে আধুনিক আন্তর্জাতিক এনজিওর আবির্ভাব হলেও বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি এরা জনপ্রিয় হতে শুরু করে। রিগ্যান-থ্যাচার যুগে নিও-লিবারেল মতাদর্শের অনুপ্রেরণায় পুঁজিবাদ ও মুক্তবাজার অর্থনীতি যখন বিশ্বকে ভয়ংকরভাবে গ্রাস করে, তখন তৃতীয় বিশ্বের সরকারগুলোকে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ইত্যাদি দায়িত্ব থেকে হাত গোটাতে বাধ্য করা হয়।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">আর এ সুযোগে এনজিওর বিস্ফোরণ ঘটে। পাশ্চাত্যের ধনী রাষ্ট্রগুলো দরিদ্র রাষ্ট্রগুলোকে সরকারি চ্যানেলের পরিবর্তে এনজিওগুলোর মাধ্যমে অধিক হারে সাহায্য প্রদান করতে শুরু করে। গবেষক  Ji Giles Ungpakorn -এর এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, এনজিওর মাধ্যমে সাহায্য প্রদানের হার এ সময় ১৪০০ শতাংশ বৃদ্ধি পায়।</p> <p style="text-align: justify;"><img alt="উন্নত বিশ্বের এনজিও ফাঁদ এবং মিথ্যা প্রতিবেদন" height="465" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/03.March/13-03-2024/Untitled-1.jpg" width="500" />এনজিওকে আর্থিকভাবে শক্তিশালী করে সরকারের সমান্তরাল প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার পেছনে পশ্চিমা বিশ্বের অশুভ অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর, বিশেষ করে ষাটের দশকে ঔপনিবেশিক মোড়লদের সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে উপনিবেশের জাঁতাকলে পিষ্ট রাষ্ট্রগুলো একের পর এক স্বাধীন হতে থাকে। শক্তি প্রয়োগ করে কোনো রাষ্ট্রকে উপনিবেশে পরিণত করা বা উপনিবেশ টিকিয়ে রাখার নীতি ব্যর্থ হলে পশ্চিমারা শক্তি প্রয়োগের  Hard power means বা  High politics-এর পরিবর্তে শোষণের বুদ্ধিবৃত্তিক নতুন কৌশল অবলম্বন করে, যা Soft power means ev Low politics</p> <p style="text-align: justify;"> নামে পরিচিত। শোষণের বুদ্ধিবৃত্তিক নতুন কৌশল প্রয়োগের হাতিয়ার হিসেবে পশ্চিমারা বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা ও বহুজাতিক কম্পানির পাশাপাশি এনজিওকেও বেছে নেয়। ধনী রাষ্ট্রগুলোতে দরিদ্র রাষ্ট্রগুলোর সম্পদ পাচার অব্যাহত রাখতে দারিদ্র্য দূরীকরণের নামে তাদের নবসৃষ্ট সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোকে দরিদ্র দেশের উন্নয়নের পরামর্শকরূপে পরিচিত করার চেষ্টা করে।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">পশ্চিমা বিশ্বের প্রত্যক্ষ মদদ ও সহযোগিতায় অনেক এনজিও গণতন্ত্র ও নির্বাচন পর্যবেক্ষণসহ রাষ্ট্র পরিচালনায় স্বচ্ছতার নামে রীতিমতো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ কর্মকাণ্ডে নানামুখী হস্তক্ষেপও করছে তারা। মানবাধিকার সুরক্ষার নামে কিছু এনজিও নানাভাবে রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার কাজে লিপ্ত রয়েছে। টিআইবির মাতৃসংগঠন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বা টিআইয়ের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী অভিযোগ, এটি সাম্রাজ্যবাদী এজেন্ডার অংশীদার। এ সংস্থা অধিকতর স্বচ্ছতা ও উন্মুক্ততার নামে তৃতীয় বিশ্বের ওপর চাপ সৃষ্টি করে এসব দেশের অর্থনীতি ও রাজনীতিতে ধনী রাষ্ট্রের প্রবেশকে আরো অবাধ করার কাজে ব্যাপৃত রয়েছে।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল ও তাদের সহযোগীরা স্বচ্ছতা ও সুশাসনের দাবির মোড়কে দরিদ্র রাষ্ট্রের রাজনীতি ও অর্থনীতিতে পশ্চিমাদের আরোপিত মূল্যবোধ ও বিধি-বিধান চাপিয়ে দিতে চায়। আর এসবের মূল লক্ষ্য দরিদ্র রাষ্ট্রকে অর্থনৈতিক ও আইনগত সংস্কারে বাধ্য করা। ধনী রাষ্ট্রের আর্থিক এন্টারপ্রাইজ, বিশেষ করে তাদের বহুজাতিক কম্পানি ও তাদের স্থানীয় দোসরদের জন্য অবাধ বিচরণ ক্ষেত্র তৈরি করা।</p> <p style="text-align: justify;">পশ্চিমাদের এজেন্ট হিসেবে কাজ করতে গিয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল ও তাদের সহযোগীরা দুর্নীতির যে ধারণা সূচক প্রবর্তন করেছে, তা বৈশ্বিক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।</p> <p style="text-align: justify;"> Staffan Andersson  ও  Paul Heywood  তাঁদের ‘The Politics of Perception: Use and Abuse of Transparency International’s Approach to Measuring Corruption’</p> <p style="text-align: justify;"> শিরোনামের প্রবন্ধে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের অবৈজ্ঞানিক ও ত্রুটিপূর্ণ কার্যপদ্ধতি বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। দুর্নীতির ধারণা সূচক বিশ্বব্যাপী সমালোচিত হওয়ায় টিআই ২০০২ সাল থেকে দুর্নীতির ধারণা সূচকের পাশাপাশি Global Corruption Barometer  নামে আরেকটি জরিপ প্রকাশ করে আসছে। একই রাষ্ট্রের বিষয়ে টিআইয়ের দুই ধরনের জরিপের ফল ভিন্ন।</p> <p style="text-align: justify;">অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের বিরুদ্ধে বড় অভিযোগ হলো সংস্থাটির যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রনীতির দিকে ঝুঁকে পড়া। যুক্তরাষ্ট্র অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সাবেক বোর্ড সদস্য ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক আইনের অধ্যাপক Francis Boyle  বলেছেন, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল যেভাবে কাজ করে, তা যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রনীতির স্বার্থের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। ১৯৯১ সালে উপসাগরীয় যুদ্ধের সময় অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বিকৃত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে পক্ষপাতমূলক বিবৃতি দিয়েছিল। জর্জ বুশ এই বিবৃতিকে যুদ্ধের প্রচারণায় ইরাকের বিরুদ্ধে ব্যবহার করেন। অথচ পরবর্তীকালে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল জানিয়েছে, তাদের বিবৃতিতে বর্ণিত ঘটনা সত্য ছিল না। ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল প্রতিবেদন প্রকাশ করে যে সিরিয়ায় আসাদ সমর্থকরা আসাদবিরোধী জয়নাব আল-হোসনিকে হত্যা করে তাঁর অঙ্গচ্ছেদ করেছে এবং তাঁর পরিবারের সদস্যরা মর্গে তাঁর মৃতদেহ শনাক্ত করেছে। পরের মাসে হোসনি সিরীয় টেলিভিশনে উপস্থিত হয়ে তাঁর মৃত্যুর মিথ্যা খবরকে বিদেশিদের স্বার্থে করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন।</p> <p style="text-align: justify;">বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি এবং আইন ও বিচার ব্যবস্থার গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ এবং সেই সঙ্গে বাংলাদেশবিরোধী লবিংয়ে অতি তৎপর হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডাব্লিউ)। দুর্বল ও নির্যাতিত মানুষের পক্ষে নৈতিক সমর্থন দানের জন্য ১৯৭৮ সালে রবার্ট বারনেস্টাইনের নেতৃত্বে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সংগঠনটিতে নৈতিক অবক্ষয় দেখা দেয়। প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান রবার্ট বারনেস্টাইন থেকে শুরু করে টাইম ম্যাগাজিনসহ উল্লেখযোগ্য প্রায় সব মিডিয়াই একমত যে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ নিরপেক্ষতা হারিয়েছে। ব্রিটিশ দৈনিক টাইমস বলছে, মানবাধিকার চর্চার ক্ষেত্রে এইচআরডাব্লিউ সব সময় স্বচ্ছতা, সহনশীলতা ও জবাবদিহির চর্চা করে না। কোনো কোনো অঞ্চলের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা তারা সচেতনভাবে এড়িয়ে যায়। ২০১৪ সালের মে মাসে এক খোলা চিঠিতে মার্কিন সরকারের সঙ্গে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ঘনিষ্ঠতা নিয়ে সমালোচনা করা হয়েছে। এতে শান্তিতে নোবেলজয়ী অ্যাডলফো পেরেজ এসকুইভেল, মেইরিড কোরিগান, জাতিসংঘের সাবেক অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি হ্যান ভন স্পনেক, ফিলিস্তিনে জাতিসংঘের বিশেষ দূত রিচার্ড এ ফলকসহ শতাধিক পণ্ডিত, বুদ্ধিজীবী ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সই করেছেন। বাংলাদেশে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের আগে-পরে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বিচারপ্রার্থীদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি পাশ কাটিয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িতদের পক্ষ নিয়েছে। অপরাধীদের মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে উত্কণ্ঠা প্রকাশ করেছে। বিচার বন্ধেও তারা বাংলাদেশকে সুপারিশ করেছিল। ইরাকের রাসায়নিক অস্ত্র ও নার্ভ গ্যাস ব্যবহারের প্রমাণ আছে বলে প্রতিবেদন প্রকাশ করে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ যা প্রকারান্তরে বুশের ইরাক আক্রমণের পক্ষে সুযোগ তৈরি করে। তাদের দেওয়া সেই ঘোষণাটি পরবর্তী সময়ে শতভাগ মিথ্যা বলে প্রমাণিত হয়। মিথ্যা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে শুরু হওয়া ইরাক যুদ্ধে ছয় লাখ নিরীহ মানুষের অকারণ মৃত্যুর দায় হিউম্যান রাইটস ওয়াচ অস্বীকার করতে পারে না। বিচারবহির্ভূত হত্যা আর গুমের অভিযোগে র‌্যাবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিতে গত বছর ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছে চিঠি লিখেছিলেন ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্য ইভান স্টেফানেক। চিঠির শুরুতেই ইভান স্টেফানেক বাংলাদেশের পরিস্থিতি উল্লেখ করতে গিয়ে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের তথ্যের প্রসঙ্গ টানেন।</p> <p style="text-align: justify;">বাংলাদেশের গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও নাগরিক স্বাধীনতার প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে মারাত্মক সীমাবদ্ধতা ও পক্ষপাতিত্ব রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, সাঈদীর মানবতাবিরোধী অপরাধের সাক্ষী সুখরঞ্জন বালীকে ডিবি পুলিশ অপহরণ করেছে মর্মে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এ তথ্য কিভাবে পেল সে ব্যাপারে হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে জিজ্ঞেস করলে ওরা মানবতাবিরোধী অপরাধীদের লবিস্ট ডেভিড বার্গম্যানের সূত্র দিয়ে থাকে। ডেভিড বার্গম্যানকে জিজ্ঞেস করলে তিনি সাঈদীর আইনজীবী ব্যারিস্টার রাজ্জাকের জুনিয়র আইনজীবী হাসানুল বান্না সোহাগকে তাঁর সূত্র হিসেবে উল্লেখ করেন। ব্যারিস্টার রাজ্জাককে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, এই তথ্য তাঁকে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ দিয়েছে! হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে উদ্ধৃত করে দি ইকোনমিস্ট, গার্ডিয়ান, সৌদি গেজেট, ইউরোপিয়ান পার্লামেন্ট, সিটিজেন ইন্টারন্যাশনালসহ দেশি-বিদেশি সংবাদমাধ্যম, এনজিও ও আন্তর্জাতিক সংস্থায় তোলপাড় উঠেছিল। অথচ দুর্বল সূত্রের পক্ষপাতমূলক তথ্যবিভ্রান্তি তৈরি করেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।</p> <p style="text-align: justify;">আরেকটি উদাহরণ দেওয়া যাক, বিভিন্ন মানবাধিকার এনজিও ও আন্তর্জাতিক সংস্থা, এমনকি কোনো কোনো রাষ্ট্রের তথ্যের সূত্র হলো বাংলাদেশের এনজিও ‘অধিকার’। অধিকারের প্রধান অ্যাডভোকেট আদিলুর রহমান খান বিএনপির সহযোগী সংগঠনের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সেই সুবাদে তিনি বিএনপি-জামায়াত জোট শাসনামলে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নিযুক্ত হয়েছিলেন। বিএনপিকর্মী থেকে মানবাধিকারকর্মী হওয়ার পর তিনি সরকারবিরোধিতায় সক্রিয় হয়ে ওঠেন। ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী কর্তৃক হেফাজতে ইসলামের তাণ্ডব নিয়ন্ত্রণকালে নিহতের সংখ্যা নিয়ে মিথ্যা তথ্য দিয়ে ৬১ জনের তালিকা প্রকাশ করে আদিলুর রহমানের অধিকার। ফটোশপের মাধ্যমে ছবি বিকৃত করে অধিকারের প্রতিবেদনে সংযুক্ত করা হয়। জীবিত ব্যক্তিকে মৃত দেখানোর মতো ঘটনার সঙ্গে জড়িত আদিলুর রহমান খান। তালিকা দীর্ঘ করতে পাঁচজনের নাম দুইবার দেখানো হয়েছে। দিনের বেলায় সংঘর্ষে নিহতদেরও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী কর্তৃক নিহতের তালিকায় যুক্ত করে রাষ্ট্রে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির একটি সুস্পষ্ট অপচেষ্টা ছিল।</p> <p style="text-align: justify;">বিদেশি এনজিওগুলোর আরেকটি নির্ভরযোগ্য তথ্যভাণ্ডার হলো সেই সব সুধী-বুদ্ধিজীবী, যাঁরা আওয়ামী লীগ তথা বঙ্গবন্ধুকন্যাকে শত্রু মনে করেন। এ ছাড়া বিদেশি এনজিওগুলোর সঙ্গে এ দেশের কিছু প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির প্রত্যক্ষ সম্পৃক্ততা রয়েছে। ওপেন সোসাইটি ইনস্টিটিউট হচ্ছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের সবচেয়ে বড় অর্থ জোগানদাতা সংস্থা। কয়েক বছর আগে আরিয়াহ নাইয়ার ওপেন সোসাইটি ইনস্টিটিউটের পক্ষ থেকে ১০০ মিলিয়ন ডলার অর্থ সাহায্য করেন হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে। নাইয়ারের স্ত্রী ইভেট নাইয়ার নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের গ্রামীণ ফাউন্ডেশনের বোর্ড অব ডিরেক্টরসের একজন। ওপেন সোসাইটি ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা জর্জ সোরস হচ্ছেন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের অ্যাডভাইজরি কমিটির সদস্য। জর্জ সোরসেরই আরেকটি প্রতিষ্ঠান ‘সোরস ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট’ গ্রামীণ টেলিকমকে ১০.৬ মিলিয়ন ডলার অর্থ প্রদান করে। অন্যদিকে ইউরোপভিত্তিক দাতা সংস্থা Sigrid Rausing Trust থেকে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বিশাল অনুদান পায়। সিগ্রিড রেয়্যুসিং ট্রাস্টের একজন ট্রাস্টি জশুয়া মেইলম্যান। এই মেইলম্যান হিউম্যান রাইটস ওয়াচের একজন ইমেরিটাস বোর্ড মেম্বার। জশুয়া মেইলম্যান গ্রামীণ টেলিকমের সহপ্রতিষ্ঠাতা। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল যে ডেভিড বার্গম্যানের তথ্যসূত্র দিয়ে বাংলাদেশের মানবাধিকার লঙ্ঘন বিষয়ে প্রতিবেদন করে, সেই ডেভিড বার্গম্যানের স্ত্রী সারা হোসেন ও ড. কামাল হোসেন ড. ইউনূসের আইনজীবী ছিলেন। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সাবেক প্রধান আইরিন খানের চাচাতো বোন জোবাইদা রহমানের স্বামী বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।</p> <p style="text-align: justify;">হিউম্যান রাইটস ওয়াচ তাদের ২০২৪ সালের প্রতিবেদনে বলেছে, বাংলাদেশে ফের গুমের ঘটনা বাড়ছে। অথচ এটি ডাহা মিথ্যা। বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন তৈরি করা হচ্ছে অথচ সরকারের সংশ্লিষ্ট কারো আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ নেই। এটি স্বাভাবিক ন্যায়বিচারের পরিপন্থী। আন্তঃরাষ্ট্রীয় সংস্থা আন্ত আমেরিকান মানবাধিকার কমিশন একসময় রাষ্ট্রপক্ষের বক্তব্যের সুযোগ না দিয়েই একতরফাভাবে আমেরিকান অঞ্চলের রাষ্ট্রগুলোর মানবাধিকার প্রতিবেদন ‘কান্ট্রি স্টাডি’ প্রকাশ করত। রাষ্ট্রগুলোর প্রতিবাদের পর এখন প্রতিবেদন প্রকাশের আগে রাষ্ট্রের কাছে প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয় তাদের বক্তব্যের জন্য। ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়া সরকারের দুর্নীতি, অর্থপাচার, বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচন নিয়ে সমালোচনা করছে, ৫ শতাংশ ভোটের সরকার বলে অভিযোগ করছে, আদালতের রায়কে ফরমায়েশি রায় বলে সমালোচনা করছে, রাষ্ট্রের স্থপতিকে কেবল অস্বীকারই নয় তাঁর সম্পর্কে মিথ্যা অবমাননাকর বক্তব্য দিচ্ছে, স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রকে অমান্য-অবজ্ঞা করছে, মুক্তিযুদ্ধের বিষয়ে অসত্য ও বিকৃত তথ্য উপস্থাপনসহ যা খুশি তা-ই বলতে ও লিখতে পারছে। এর পরও বলছে, মত প্রকাশের স্বাধীনতা নেই। অথচ যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক পশ্চিমা দেশে ফিলিস্তিনের পক্ষে কথা বলার জন্য ডাক্তার, ব্যাংকার, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ফুটবল খেলোয়াড়, সাংবাদিক চাকরিচ্যুত হয়েছেন। ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক সাংবাদিক মালাক সিলমি কেন সাংবাদিকতা ছাড়তে বাধ্য হলেন খোঁজ নিয়ে দেখুন। পশ্চিমা মত প্রকাশের স্বাধীনতার স্বরূপ হচ্ছে উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে বছরের পর বছর কারাবন্দি করে রাখা।</p> <p style="text-align: justify;">সময় এসেছে এটা ভেবে দেখার যে মানবাধিকার সংস্থা থেকে প্রকাশিত বাংলাদেশসংক্রান্ত প্রতিবেদনগুলো কতটুকু নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি বা প্রেক্ষাপট থেকে লেখা হয়। সেই সঙ্গে অসত্য তথ্যগুলো আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুলে ধরারও সময় এসেছে এখন।</p> <p style="text-align: justify;"><strong>লেখক </strong>: অধ্যাপক, আইন বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়</p> <p style="text-align: justify;">zhossain1965@gmail.com</p> </article>