<article> <p style="text-align: justify;">সুপ্রশস্ত সবুজ আঙিনার পাশে দাঁড়ানো তিনতলা জেলা প্রশাসন ভবন। বলছি মাগুরা জেলা প্রশাসন ভবনের কথা। এর ছাদের আয়তন ১১ হাজার ৯৪ বর্গফুট। ছাদটিতে সন্নিবেশিত হয়েছে বহু ধরনের গাছপালা, কৃত্রিম জলাধার—এমনকি একটি লাইব্রেরি! প্রকৃতির ছোঁয়ায় সমৃদ্ধ অসাধারণ নান্দনিক এক ছাদকৃষি।</p> </article> <p style="text-align: justify;">বছর দেড়েক আগে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবু নাসের বেগ উদ্যোগটি শুরু করেন। এখানে রয়েছে ৪০৩ প্রজাতির পাঁচ শর বেশি বনজ, ফলদ, ভেষজ, শৌখিন ও দেশীয় বিলুপ্তপ্রায় গাছগাছালি এবং নানা রকম মসলা ও শাক-সবজির সংগ্রহ। ভিন্নধর্মী ছাদকৃষিটির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, বিশেষ কার্ড দিয়ে প্রতিটি গাছের পরিচিতি তুলে ধরা হয়েছে। কার্ডগুলোতে কিউআর কোড দেওয়া।</p> <article> <p style="text-align: justify;">মোবাইল ফোন দিয়ে কোড স্ক্যান করে গাছ সম্পর্কে তথ্য জানার সুযোগ আছে। সিঁড়িঘরের পাশে থাকা পথটিও সাজানো হয়েছে রকমারি গাছ আর লতানো উদ্ভিদে। অর্কিডের জন্য রয়েছে আলাদা শেড। এক পাশে সবজি ও মসলা ফসলের অংশটিও দৃষ্টিনন্দন।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">উদ্যোক্তা জেলা প্রশাসক আবু নাসের বেগ বলেন, কর্মব্যস্ততার পরও এই কার্যক্রমে যুক্ত থাকার অনুপ্রেরণা পেয়েছেন কৃষি ও পরিবেশ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর তাগিদ, মুক্তিযোদ্ধা বাবার কথা আর গণমাধ্যমের প্রচার থেকে। সবুজ-শ্যামল এই ছাদকৃষির সান্নিধ্যে এসে দূর হয়ে যায় তাঁর সব ক্লান্তি।</p> <p style="text-align: justify;">জেলা প্রশাসনের এই শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, আগামী দিনে অন্যান্য ভবনের ছাদেও কৃষিকাজ সম্প্রসারণের পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর। যুক্ত হয়েছেন গোটা জেলায় বিষমুক্ত ফসল উৎপাদনে সহায়তা করার কার্যক্রমেও। ডিসি জানান, তাঁর ভবনের ছাদকৃষিকে এগিয়ে নিতে সাগ্রহে সহযোগিতা করছেন প্রশাসনের অন্য কর্মকর্তারাও।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">নগরায়ণ অব্যাহতভাবে বেড়ে চলায় ভবিষ্যৎ পৃথিবীর সুরক্ষার জন্য দেশের ২৫ শতাংশ সবুজায়ন করা ছাড়া আর কোনো পথ নেই। ভূমির পরিমাণ সীমিত বলে ছাদকৃষি এ বিষয়ে অবদান রাখতে পারে। প্রায় শতভাগ কৃষিনির্ভর জেলা মাগুরা। এখানকার উন্নয়নকে এগিয়ে নিতে হলে তাই মূলত কৃষিরই উন্নয়ন করতে হবে। কৃষি অনুরাগী এই জেলা প্রশাসকেরও প্রত্যাশা, কৃষিকে ঘিরেই এগিয়ে যাবে মাগুরার উন্নয়ন কার্যক্রম। গ্রামের পাশাপাশি নগরের সবুজকেও ফিরিয়ে আনতে হবে।</p> <p style="text-align: justify;">চীনের মহানগরী সাংহাইয়ের ‘সানকিয়াও আরবান ফার্মিং ডিস্ট্রিক্ট’ প্রকল্পের কথা বলা যেতে পারে। সেখানে ১০০ হেক্টর জমির ওপর তৈরি হচ্ছে আধুনিক কৃষি নগরী। কৃষি এখন আর শুধু মাঠের বিষয় নেই। কৃষির সম্প্রসারণ হবে ঊর্ধ্বমুখীও। ২০-২২ তলা ভবনের ভেতর নিয়ন্ত্রিত আলো-বাতাসে চাষ হবে। বিশ্বজুড়ে আছে নগর কৃষির নানা নমুনা। জাপানে নগরে বসবাসরত ২৫ শতাংশ পরিবারই কমবেশি কৃষির সঙ্গে যুক্ত। নিউ ইয়র্কে প্রায় ১০০ একর জমি ব্যবহৃত হচ্ছে নগর কৃষিতে। হংকংয়ে ‘রুফটপ রিপাবলিক’ নামে একটা গ্রুপ পরিচালনা করছে ৩৩টি খামার।</p> <p style="text-align: justify;">মাগুরার জেলা প্রশাসকের মতো উদ্যোগ দেশের বাকি জেলাগুলোতেও নেওয়া সম্ভব। এমন উদাহরণ এর আগে আমরা চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসন ভবন এবং ঢাকার কাকরাইলের জনশক্তি রপ্তানি ব্যুরো অফিস ভবনসহ বেশ কয়েক জায়গায় দেখেছি। দেশের প্রধানমন্ত্রী নিজে জনগণের পাশাপাশি সরকারি কর্মচারী-কর্মকর্তাদের ছাদকৃষিকে এগিয়ে নিতে নির্দেশনা দিচ্ছেন।</p> </article>