<article> <p style="text-align: justify;">‘স্মার্ট বাংলাদেশ : উন্নয়ন দৃশ্যমান বাড়বে এবার কর্মসংস্থান’ স্লোগানের নির্বাচনী ইশতেহারে ১১টি বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে এরই মধ্যে নির্বাচিত নতুন সরকারের যাত্রা শুরু হয়েছে। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে অগ্রাধিকার দেওয়া প্রধান বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, আর্থিক সুব্যবস্থাপনা, গণতান্ত্রিক চর্চার প্রসার, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর জবাবদিহি নিশ্চিত করা, স্বাস্থ্যসেবা ও প্রযুক্তিনির্ভর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা। এ ছাড়া বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে কৃষি, সেবা, অর্থনৈতিক ও শিল্প উৎপাদন খাত এবং তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের মৌলিক অধিকারের বিষয়টি।</p> <p style="text-align: justify;">বিগত ১৫ বছর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার যে উন্নয়ন কার্যক্রম করেছে, তা অনেকটা অভাবনীয়।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">স্বাধীনতার ৫৩ বছর পর বাংলাদেশ এখন সারা বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। এশিয়ার উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে বাংলাদেশ সক্ষমতা অর্জনে এক ধাপ এগিয়ে। বঙ্গবন্ধুর জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের আদর্শকে সামনে নিয়ে সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়—পররাষ্ট্রনীতি সামনে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। এরই মধ্যে গত ৩০ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদের অধিবেশন শুরু হয়েছে।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">সংসদ অধিবেশনের প্রথম দিনেই রাষ্ট্রপতির বক্তব্যে আর্থিক খাতের সংস্কার এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়। ভবিষ্যতে অনেক কঠিন চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা করার বিষয়েও রাষ্ট্রপতি সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। নতুন সরকার গঠন করেই সরকার ইতিবাচক কার্যক্রমের ইঙ্গিত দিয়েছে। এর ধারাবাহিকতা যথাযথভাবে অনুসরণ করা সম্ভব হলে দেশ অনেক এগিয়ে যাবে বলে প্রত্যাশা করা যায়।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, এলএনজি টার্মিনাল ও গ্যাস পাইপলাইন প্রকল্প, মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ কেন্দ্র, পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর, বিভিন্ন মেগাপ্রকল্পের কাজ দ্রুত সম্পন্ন হওয়ার মাধ্যমে স্মার্ট বাংলাদেশের দিকে এক ধাপ এগিয়ে যাবে দেশ। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের মূল উপাদান হলো রাজস্ব। যথাযথ ও ন্যায্যভাবে রাজস্ব আহরণ করার লক্ষ্যে আধুনিক রাজস্বনীতি প্রণয়ন, ডিজিটাল কাস্টমস সেবা, উন্নত তথ্যভাণ্ডার নির্মাণ, ওয়ানস্টপ সার্ভিস প্রদান, অংশীজনদের সঙ্গে আস্থা ও সহযোগী অংশীদারি গঠনসহ উত্তম পেশাদারির নানা ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ কাস্টমস।</p> <p style="text-align: justify;">গত ২৬ জানুয়ারি আন্তর্জাতিক কাস্টমস দিবস উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ কাস্টমসের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় অর্থপাচার প্রতিরোধসহ রাজস্ব প্রশাসনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার বিষয়টিতে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। এ ছাড়া পেশাগত দক্ষতা, ডিজিটাল ব্যবস্থাপনা ও যৌক্তিক সংস্কার বাস্তবায়নের মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি, মজবুত অর্থনীতির ভিত গঠন, অপবাণিজ্য রোধ, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদে অর্থায়ন প্রতিরোধ, অর্থপাচার প্রতিরোধসহ রাজস্ব প্রশাসনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার বিষয়টিও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">দেশের অগ্রগতি এখন বিশ্বে স্বীকৃত। তবে কর জিডিপির অনুপাতে রাজস্ব আয় সন্তোষজনক পর‌্যায়ে পৌঁছানোর লক্ষ্যে পূর্ণাঙ্গ অটোমেশন বা ডিজিটাইজেশন নিশ্চিতের তাগিদ দেন অর্থমন্ত্রী। বিগ ডাটা ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতো তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বাণিজ্যের সহজীকরণ হলে ব্যাবসায়িক খরচ কমার পাশাপাশি রাজস্বও বাড়বে বলে উল্লেখ করেন অর্থমন্ত্রী।</p> <p style="text-align: justify;">দুর্নীতি মারাত্মক ব্যাধি। আমাদের সমাজ, প্রশাসনসহ সর্বত্র বিরাজ করছে দুর্নীতির প্রভাব। এ ব্যাপারে জিরো টলারেন্স নীতির সুস্পষ্ট ইঙ্গিত সাধারণ মানুষকে আশাবাদী করে তুলেছে। দ্রব্যমূল্য গত দুই বছর লাগামহীনভাবে বৃদ্ধি পেয়েছিল। এ নিয়ে জনমনে ক্ষোভ ছিল। সরকার স্বল্প আয়ের মানুষের কষ্ট লাঘবের জন্য টিসিবিকে সক্রিয় করে এক বছর ন্যায্য মূল্যে কিছু পণ্য ক্রয় করার সুযোগ করে দেয়। বর্তমান সরকারের অন্যতম চ্যালেঞ্জ দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখা। সব ধরনের সিন্ডিকেট ভেঙে দ্রব্যমূল্য জনসাধারণের নাগালের মধ্যে রাখার বিষয়টি নিয়ে সরকার এরই মধ্যে সতর্ক অবস্থান নিয়েছে।</p> <p style="text-align: justify;">সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশ কৃষি উৎপাদন, সামাজিক উন্নয়ন, নারীর ক্ষমতায়ন, নিরক্ষরতা দূরীকরণ ও দারিদ্র্য বিমোচনে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে। নারীরা এখন আমাদের জাতীয় জীবনের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই পুরুষের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ করছে।</p> <p style="text-align: justify;">গত ৩০ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদের অধিবেশনের শুরুতে রাষ্ট্রপতির দেওয়া বক্তব্য থেকে দেশের উন্নয়নের সংক্ষিপ্ত চিত্র পাওয়া যায়। রাষ্ট্রপতি বলেন, দেশের বেকারত্বের হার ২০১০ সালে ছিল ৪.১০ শতাংশ, যা কমে বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ৩.২ শতাংশে। আমাদের সাক্ষরতার হার ছিল মাত্র ৪৫ শতাংশ, যা আজ ৭৬.৮ শতাংশে উন্নীত হয়েছে; আয়ুষ্কাল ৫৯ বছর থেকে প্রায় ৭৩ বছরে উন্নীত হয়েছে। মাতৃমৃত্যু উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেয়েছে, শিশুমৃত্যুর হার হ্রাসে সাফল্যের কারণে বাংলাদেশ পেয়েছে এমডিজি পুরস্কার। চিকিৎসাসেবা আজ জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে গেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২০০৯ সালে ছিল মাত্র চার হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট, যা বর্তমানে ২৯ হাজার ৭২৭ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। এরই মধ্যে দেশের শতভাগ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বাংলাদেশের জন্য মর‌্যাদাপূর্ণ রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বেশির ভাগ স্থাপনার নির্মাণকাজ এবং পরমাণু জ্বালানি হস্তান্তর সম্পন্ন হয়েছে। এ বছর এই কেন্দ্র থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে বলে সুনির্দিষ্ট তথ্য রয়েছে।</p> <p style="text-align: justify;">ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ফলে কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য, ব্যাংকিং, প্রশাসন, উদ্ভাবন, দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়ন, ডিজিটাল অর্থনীতি, আইসিটি শিল্পসহ প্রায় সব খাতে সমানভাবে উন্নতি হয়েছে।</p> <p style="text-align: justify;">তবে নতুন সরকারের সামনের রাস্তা মোটেও মসৃণ নয়। তাদের একেকটি বাধার মধ্য দিয়ে যেতে হবে, যা একটি অপরটির চেয়ে কঠিন। অবকাঠামোগত ও সেবামুখী সুযোগ-সুবিধার ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নতি সত্ত্বেও দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিকে আরো মজবুত করা প্রয়োজন। অস্থির বাজার ও অর্থনীতিতে বড় ধরনের সংস্কার এবং স্থিতিশীল করার জন্য সরকারকে অত্যন্ত কঠিন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। সুশাসনের যথাযথ পথ বেছে নেওয়ার বিষয়টিকেও গুরুত্ব দিতে হবে।</p> <p style="text-align: justify;"><strong>লেখক : </strong>অধ্যাপক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়</p> <p style="text-align: justify;"><a href="mailto:sultanmahmud.rana@gmail.com">sultanmahmud.rana@gmail.com</a></p> </article>