<p style="text-align: justify;">আনিসুল হক সুপরিচিত লেখক হিসেবে। গল্প, উপন্যাস, কলাম—সব মাধ্যমেই রয়েছে তাঁর জনপ্রিয়তা। এর বাইরে কাছের মানুষ জানেন, রংতুলিতেও রয়েছে তাঁর প্রবল আগ্রহ ও দক্ষতা। বছর কয়েক আগে হঠাৎ একটানা ছবি আঁকার ‘ঘোর’ পেয়ে বসেছিল তাঁকে। মূলত সেই সময় আঁকা ছবিগুলো নিয়ে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীতে শুরু হয়েছে তাঁর প্রথম একক চিত্র প্রদর্শনী।</p> <p style="text-align: justify;">উত্তরার গ্যালারি কায়ায় ঘণ্টা বাজিয়ে প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন কবি নির্মলেন্দু গুণ। প্রদর্শনীর উদ্বোধনী মঞ্চে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিল্পী হাশেম খান ও ঢাকা উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম। আনিসুল হক তাঁর এই শিল্প আয়োজনকে ‘ছেলেমানুষি’ বললেও প্রদর্শনী উপভোগ করতে উদ্বোধনী দিন উপস্থিত ছিলেন শিল্প-সাহিত্য অঙ্গনের অনেক পরিচিতজন।</p> <p style="text-align: justify;">দর্শক সারিতে ছিলেন লেখক মোহিত কামাল, ক্রীড়া সাংবাদিক উৎপল শুভ্র, নির্মাতা অমিতাভ রেজা চৌধুরী, অভিনেত্রী রুনা খানসহ শিল্প-সাহিত্য ও অভিনয় জগতের অনেকে। নিজের ছবি আঁকাকে আনিসুল হক বললেন, ধ্যান (মেডিটেশন)। জানালেন, ছবি আঁকতে বসলে তিনি একেবারেই জগৎ-সংসার ভুলে যান। তাঁর ছবি আঁকা জগেক দেখানোর জন্য নয়, বরং জগৎ এমনকি নিজেকে ভুলে থাকার জন্য।</p> <p style="text-align: justify;">প্রদর্শনীতে জায়গা পেয়েছে বিভিন্ন মাধ্যমে আঁকা ৯০টি চিত্রকর্ম। বিখ্যাত শিল্পী, সাহিত্যিক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের অবয়ব, গ্রামবাংলার নৈসর্গিক সৌন্দর্য রয়েছে এসব চিত্রকর্মে। কবিতার চিত্রকল্পের মতো ক্যানভাসে লেখক-শিল্পী তুলে এনেছেন নীল আকাশে উড়ন্ত সাদা বকের ঝাঁক, ঘাটে বাঁধা নৌকা, জাল ফেলে মাছ ধরা অথবা হাত ধরে পিতা-পুত্রের দাঁড়িয়ে থাকার দৃশ্য।</p> <p style="text-align: justify;">প্রদর্শনীর বেশির ভাগ ছবির বিষয়ই প্রতিকৃতি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, জীবনানন্দ দাশ, শামসুর রাহমান, সৈয়দ শামসুল হক, জাহানারা ইমাম, হুমায়ূন আহমেদ, শহীদ কাদরী, আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের মুখাবয়বে রয়েছে তাঁদের লেখা পঙক্তি।</p> <p style="text-align: justify;">গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ, চে গুয়েভারা প্রমুখের পাশাপাশি আনিসুল হক জলরঙে এঁকেছেন আত্মপ্রতিকৃতিও। আছে শিল্পীর একজন প্রিয় মানুষ চলচ্চিত্র নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর মুখ।</p> <p style="text-align: justify;">গ্যালারি কায়ার অধিকারী গৌতম চক্রবর্তী বলেন, এই প্রদর্শনী আনিসুল হকের শিল্প রচনার প্রথম আত্মপ্রকাশ। উদ্বোধক কবি নির্মলেন্দু গুণ বলেন, একসময় একই ব্যক্তি লেখা ও আঁকার কাজ করতেন। সৃজনশীল কোনো শিল্পমাধ্যমে বিভাজন ছিল না। পরবর্তী সময়ে শিল্পীদের ভেতর নিজ নিজ ক্ষেত্রের বাইরে না যাওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়েছে। তিনি বলেন, ‘কবিতা লিখতে যদি ছাড়পত্র না লাগে, তাহলে ছবি আঁকতেও লাগার কথা নয়, এটা ভেবেই আমি ছবি আঁকি। আনিসুল হকও তাঁর সত্তার স্বাধীনতা দেখিয়েছেন ছবি আঁকার মাধ্যমে।’</p> <p style="text-align: justify;">হাশেম খান বলেন, যাঁরা সৃজন করেন তাঁরাই শিল্পী। তাঁর শিল্পমাধ্যম কবিতা, সংগীতসহ ভিন্ন কিছুও হতে পারে। আনিসুল হক বিখ্যাত সাহিত্যিক। আঁকা প্রতিকৃতি ও অন্য ছবিগুলোর মধ্যে নিজের নিজস্ব ভালোলাগা, সৌন্দর্যবোধ তুলে এনেছেন তিনি।</p> <p style="text-align: justify;">হাশেম খান আরো বলেন, আনিসুল হক একজন সংবেদনশীল ও অত্যন্ত সৃষ্টিশীল মানুষ। রবীন্দ্রনাথ নিজেও ভাবেননি কখনো তিনি এত বড় শিল্পী হবেন। আনিসুল হকও হয়তো একদিন চিত্রশিল্পী হিসেবে খ্যাতিমান হবেন।</p> <p style="text-align: justify;">মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, আনিসুল হকের ছবির ভেতর ভাষা আছে, কথা আছে। জাতির জনকের বজ্রকণ্ঠ আছে। নজরুলের চল চল চল আছে। যে পাখিকে আমরা ধ্বংস করে দিচ্ছি সেই পাখি আছে তাঁর ছবিতে।</p> <p style="text-align: justify;">ঢাকা উত্তরের মেয়র আরো বলেন, সিটি করপোরেশন শিল্পী-সাহিত্যিকদের নামে ঢাকার সড়কের নামকরণের উদ্যোগ নিয়েছে। নির্মলেন্দু গুণের নামে ঢাকা শহরের একটি পথের নাম হবে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের একটি গ্যালারি শিল্পকর্ম প্রদর্শনীর জন্য ফ্রি করে দেওয়া হচ্ছেও বলে জানান তিনি।</p> <p style="text-align: justify;">লিখিত বক্তব্যে আনিসুল হক তাঁর এই শিল্পযাত্রাকে বলেন, ‘নিজেকে ভুলে থাকার ব্যক্তিগত ব্যাপার-স্যাপার।’ স্মৃতিচারণা করে তিনি বলেন, ‘পুঁইশাকের বিচি থেকে হতো বেগুনি রং, গাঁদাফুলের মতো দেখতে, কিন্তু পাপড়ি ছিল এক সারি, নাম জানি না সেই ফুলের পাপড়ি থেকে হতো হলুদ রং। ছোটবেলায় ছবি আঁকার রং ছিল এসব। কোনো দিন কোনো ছবি আঁকার ক্লাসে আঁকা শিখিনি, কোনো দিনও জানি না আসলে জলরং কোনটা ঠিকঠাক, কোন কাগজে ছবি আঁকতে হয়!’</p> <p style="text-align: justify;">জীবনের এ পর্বে এসে ছবি আঁকা প্রসঙ্গে লেখক বলেন, ‘৫৪ বছর বয়সে নিউ মার্কেটের মডার্ন স্টেশনারিতে রং চাইলে কত রং এগিয়ে দেয়, কত রকমের তুলি কিনতে পাওয়া যায়, কত বিচিত্র কাগজ! কোনটা দিয়ে ছবি আঁকতে হয়, কোন কাগজে, কোন রং দিয়ে? দোকানির পরামর্শ মতো রং-তুলি কাগজ কিনে এনে ছবি আঁকতে বসে শৈশবে ফিরে যাই...।’</p> <p style="text-align: justify;">প্রদর্শনীটি চলবে ৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল সাড়ে ১১টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত উন্মুক্ত থাকবে গ্যালারি।</p>