<article> <p style="text-align: justify;"><strong>‘উন্নয়ন দৃশ্যমান, বাড়বে এবার কর্মসংস্থান’—এই স্লোগানে গত বুধবার নির্বাচনী ইশতেহার ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ। ইশতেহারে দ্রব্যমূল্য সব মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখা, কর্মসংস্থান বাড়ানোসহ ১১টি বিষয়কে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে মোটাদাগে পাঁচটি অঙ্গীকারও করেছে টানা তিন মেয়াদ ক্ষমতায় থাকা দলটি</strong></p> <p style="text-align: justify;">আওয়ামী লীগ এবার যে নির্বাচনী ইশতেহার দিয়েছে, তা বিশদ, বিস্তৃত। জীবন, সমাজ, মানুষ, রাষ্ট্র ও সরকারের সঙ্গে যুক্ত এমন সব কিছুই ইশতেহারে আছে।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">কৃষি, শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য, দ্রব্যমূল্য, শিক্ষা, সংস্কৃতি এমন কিছু নেই যা এখানে তুলে ধরা হয়নি। এখন আওয়ামী লীগ যে অঙ্গীকার করেছে সেগুলো বাস্তবায়ন করাই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।</p> <p style="text-align: justify;">বিগত দিনে আওয়ামী লীগ যেসব অঙ্গীকার করেছিল, আমরা লক্ষ করেছি তার বেশির ভাগই বাস্তবায়ন করেছে। যেমন—গতবারের ইশতেহারে ছিল আমার শহর আমার গ্রাম, গ্রামে যেন শহরের সব সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায়।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">সেটা বাস্তবায়নে তারা কাজ করছে। এ জন্য রাস্তাঘাট, বিদ্যুৎসহ সব ধরনের উন্নয়ন তারা করেছে। এবারও আশা করা যায়, অঙ্গীকার অনুযায়ী আওয়ামী লীগ কাজ করবে।</p> <p style="text-align: justify;">নতুন সরকার গঠনের পর আওয়ামী লীগকে সুশাসনে গুরুত্ব বাড়ানো উচিত।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরো শক্তিশালী করতে হবে। ব্যক্তিনির্ভর না থেকে প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করতে হবে। যেমন—নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করেছে, তবে আরো শক্তিশালী করা উচিত। বিচারব্যবস্থাকে আরো গতিশীল করা; প্রশাসনে মানুষের যাতে হয়রানি না হয় সেটা করা; ঘুষ-দুর্নীতি কমাতে দুদককে আরো শক্তিশালী করা; ঘুষ দুর্নীতির বিরুদ্ধে, মানি লন্ডারিংয়ের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে একটি শৃঙ্খলা নিয়ে আসা; দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা—এগুলোই আওয়ামী লীগের সামনে প্রধান কাজ বলে আমি মনে করি।</p> <p style="text-align: justify;">বিভিন্ন পত্রপত্রিকা, টিআইবি, সিপিডিসহ যারা বলছে, এমপি প্রার্থীরা হলফনামায় সম্পদের যে হিসাব বিবরণী দিয়েছেন তা দেখে মনে হচ্ছে, অল্প সময়ের ব্যবধানে তাঁরা বহু অর্থের মালিক হয়েছেন।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">কিভাবে তাঁরা এত অর্থের মালিক হলেন, এটা সঠিক ও সৎপথে হয়েছেন নাকি অবৈধ পথে ক্ষমতার অপব্যবহার করে হয়েছেন; এর তদন্ত হওয়ার দরকার। যদি দেখা যায়, অসৎপথে হয়েছেন তাহলে তাঁদের আইনের আওতায় আনা উচিত। সম্পদের হিসাব বিবরণী গুরুত্বসহকারে দেখা দরকার। তাঁরা ট্যাক্স ঠিকমতো দিয়েছেন কি না; উপযুক্ত ট্যাক্স দিয়েছেন কি না, নাকি ফাঁকি দিয়েছেন তা দেখা দরকার। কেউ যদি হিসাব বিবরণীতে সম্পদের তথ্য গোপন করে থাকেন, তাহলে তাঁর সংসদ সদস্য পদ বাতিল হওয়া উচিত।</p> <p style="text-align: justify;">আওয়ামী লীগ এমন একটি দায়িত্বশীল ও গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল, যে জনগণের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ। জনগণের কল্যাণ সাধনই হলো তার মূল লক্ষ্য। জনগণের কথা, দেশের উন্নয়নের কথা চিন্তা করে রাজনৈতিক ইশতেহার তারা সাজিয়েছে। তারা অঙ্গীকার বাস্তবায়নে অতীতে যেমন সফল হয়েছে, আগামী দিনেও আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করবে বলে আমি বিশ্বাস করি। এবারের অঙ্গীকারের ৮০ শতাংশ যদি বাস্তবায়িত হয় তাহলে ২০৪১ সালে আমাদের কাঙ্ক্ষিত উন্নত-সমৃদ্ধ, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত অসাম্প্রদায়িক একটি বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে পারব।</p> <p style="text-align: justify;">ইশতেহারে সমস্যা যেমন চিহ্নিত হয়েছে, তেমনই সমাধানের কথাও বলা হয়েছে। সরকার আবার নির্বাচিত হলে সেই অঙ্গীকার অনুযায়ী কাজ করতে হবে। এই কর্মসূচি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে কয়েক ধাপ আমরা এগিয়ে যেতে পারব। ইশতেহার বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে মনোযোগী হওয়া, সঠিক নেতৃত্বদান, একের পর এক অঙ্গীকার পূরণ করাই হতে হবে আওয়ামী লীগের মূল লক্ষ্য।</p> <p style="text-align: justify;">আওয়ামী লীগ শুধু নির্বাচনী বৈতরণি পার হওয়ার জন্য ইশতেহার ঘোষণা করেনি। দেশের সার্বিক উন্নয়নের কথা, দেশের জনগণের কল্যাণের কথা, যুবসমাজের কর্মসংস্থানের কথা এবং শিক্ষা, সংস্কৃতি বিবেচনা করে ইশতেহার ঘোষণা করে। বাংলাদেশকে নিয়ে তাদের একটি স্বপ্ন আছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন ছিল ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত দেশ প্রতিষ্ঠা করা। বর্তমান আওয়ামী লীগেরও মূল লক্ষ্য ও স্বপ্ন ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত দেশ প্রতিষ্ঠা করা। সেই স্বপ্ন সামনে রেখে এবারের ইশতেহার দিয়েছে দলটি। </p> <p style="text-align: justify;">অন্য দলের চেয়ে আওয়ামী লীগের ইশতেহার সব সময় ভিন্ন হয়। কারণ আওয়ামী লীগ হলো এ দেশের মাটি ও মানুষের দল। কাজেই জনগণের কল্যাণ, সেবা সম্পর্কে এই দল সব সময় সচেতন ও সংবেদনশীল, যার প্রতিফলন তার নির্বাচনী ইশতেহারে বিভিন্ন সময় দেখা গেছে।</p> <p style="text-align: justify;">২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ বলেছিল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবে, সেটি হয়েছে। এবারের নির্বাচনী ইশতেহারে থাকা উচিত ছিল জামায়াতে ইসলামী যাতে দেশে রাজনৈতিক চর্চা করতে না পারে তার জন্য আইনি যে পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার, সেই পদক্ষেপ আওয়ামী লীগ সরকার গ্রহণ করবে।</p> <p style="text-align: justify;">বিএনপি নির্বাচনে নেই বলে আওয়ামী লীগ যেনতেন একটা ইশতেহার দেয়নি। কারণ আওয়ামী লীগের ইশতেহার হলো, এ দেশের কাছে, এ দেশের জনগণের কাছে তার অঙ্গীকার। লিখিত যেহেতু একটি অঙ্গীকার দিয়েছে মানুষ পাঁচ বছর পর মিলিয়ে দেখতে পারবে যে অঙ্গীকারগুলো করেছিল তার কতগুলো বাস্তবায়ন করেছে। আর একটি দল যখন অঙ্গীকার করে তখন একটি দায়বদ্ধতা তৈরি হয়।  </p> <p style="text-align: justify;">আওয়ামী লীগ নিশ্চয় এই দায়বদ্ধতার কথা মনে রাখবে।</p> <p style="text-align: justify;"><strong>লেখক :</strong> রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও বঙ্গবন্ধু চেয়ার, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়।</p> </article>