<p>‘বাসায় কারেন্ট নাই, আর বাইরেও বাতাস নাই। এত গরম আমার জীবনে আর দেহি নাই। ঘরের মধ্যে থাহন যায় না, হারা রাইত কারেন্ট থাহে না। এক ঘণ্টা পর পর খালি কারেন্ট যায়। ঘুমাইতেই পারি নাই। দিনে ঘুমামু তাও পারলাম না। দিনেও কারেন্ট থাহে না। আর কারেন্ট আইলেও ফ্যানের বাতাস গরম। মনে হয় আগুনের গোল্লা বাইর হয়।’</p> <p>কথাগুলো বলছিলেন হাতিরঝিলে বসে বিশ্রাম নেওয়া ৬৬ বছর বয়সী আব্দুল মন্নান। পরিবার নিয়ে তিনি তেজগাঁওয়ের কুনিপাড়া এলাকায় থাকেন। নিকেতনে তার একটি রুটির দোকান রয়েছে। প্রচণ্ড দাবদাহে তিনি হাতিরঝিল লেকের পাশে গাছের নিচে খালি গায়ে বিশ্রাম নিচ্ছেন। তবে এখানেও তার প্রশান্তি মিলছে না। প্রখর রোদে বাইরেও তেমন বাতাস বইছে না। ভাপসা গরমে নাজেহাল অবস্থা তার।</p> <p>রাজধানীজুড়ে একদিকে অস্বস্তিকর গরম অন্যদিকে দিন ও রাতে লোডশেডিংয়ে জনজীবন নাভিশ্বাস হয়ে উঠছে। প্রচণ্ড গরমে মাত্রাতিরিক্ত লোডশেডিংয়ের ফুঁসে উঠছে সকলে। এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, সারা দেশের এই দাবদাহ আরো কিছুদিন থাকবে। দেশের ওপর দিয়ে চলমান তাপ প্রবাহ আগামী পাঁচ থেকে ছয় দিন অব্যাহত থাকতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তিকর অনুভূতি অব্যাহত থাকতে পারে। সোমবার ঢাকায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৭.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে বাতাসের প্রবাহ কম থাকায় তাপ অনুভূত হচ্ছে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি।</p> <p>মালিবাগের বাসিন্দা শওকত কালের কণ্ঠকে বলেন, সন্ধ্যার পর থেকে ভোর পর্যন্ত দফায় দফায় বিদ্যুৎ চলে যায়। প্রতিবার এক ঘণ্টা করে লোডশেডিং হয়। রাতের ভাপসা গরমে পরিবার নিয়ে বাসায় থাকা কষ্টসাধ্য ব্যাপার।</p> <p>জুরাইনের বাসিন্দা অনু বলেন, রাতে বিদ্যুৎ না থাকায় ঘুমানো যায় না। আর দিনের বেলাতেও লোডশেডিং হচ্ছে। যতক্ষণ বিদ্যুৎ থাকে তখনো প্রচণ্ড গরমে ফ্যানের বাতাসও অস্বস্তি লাগে। গরমে অতিষ্ঠ হয়ে পরছি। দিনে রাতে ঘুম তো দূরের কথা প্রচণ্ড গরমে হাঁসফাঁস লাগে।</p> <p>রাজধানীতে টানা দাবদাহে বেশি সমস্যায় পড়ছেন দিনমজুর ও খেটে খাওয়া শ্রমজীবীরা। বাড্ডা এলাকায় কথা হয় রিকশাচালক মনিরের সাথে। মনির কালের কণ্ঠকে বলেন, গরমে দিনের বেলা তেমন রিকশা চালানো যাচ্ছে না। বাইরে অনেক গরম থাকায় রাস্তায় লোকজন কম। এতে আয় কমে গেছে তাদের।</p> <p>এদিকে গরম ও লোডশেডিংয়ে চার্জার ফ্যান বিক্রি বেড়েছে। ব্যাপক চাহিদার কারণে বেড়েছে দামও। খিলক্ষেত এলাকার বাসিন্দা স্বপ্না ৪ হাজার ৭০০ টাকা দিয়ে একটি চার্জার ফ্যান কিনে বাসায় যাচ্ছিলেন। বাসায় মা ও শিশু মেয়েকে নিয়ে থাকেন তিনি।</p> <p>স্বপ্নার সাথে কথা হলে তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, এই গরমে অনেক লোডশেডিং থাকায় বেশি দাম দিয়ে চার্জার ফ্যান কিনতে হয়েছে। তীব্র গরমের উত্তাপ আমি সহ্য করতে পারলেও ছোট শিশু আর বয়স্ক মা তো সহ্য করতে পারে না। দিনরাত মিলিয়ে কয়েক ঘণ্টা পর পরই বিদ্যুৎ চলে যায়। বাধ্য হয়েই চার্জার ফ্যান কিনেছি।</p> <p>ঢাকায় চলমান বাড়তি তাপমাত্রায় ডায়রিয়া নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন রোগের প্রকোপ বেড়েছে। শুষ্ক আবহাওয়ায় বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশু ও বয়স্করা। ডায়রিয়া নিউমোনিয়াসহ নানা রোগে চিকিৎসা নিতে ভিড় করছেন হাসপাতালে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গরমে ডায়রিয়া, হিটস্ট্রোক, সর্দি-কাশি ও জ্বর, জন্ডিস, পানিশূন্যতা, দুর্বলতা, বদহজম, টাইফয়েড ও হেপাটাইটিস বেশি হয়। বিভিন্ন হাসপাতালে এসব রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে। তাই সকলকে খাবারের বিষয়ে বেশি সচেতন হতে হবে।</p>