বঙ্গবন্ধুকন্যা, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এবং বিশ্বনেতা শেখ হাসিনা বাঙালি জাতির অনুপ্রেরণার উৎস। বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগকে তৃণমূলের জনপ্রিয় রাজনৈতিক দলে পরিণত করেছিলেন। জাতির পিতার নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর দলের দুঃসময়ে তাঁর অসমাপ্ত কাজ শেষ করতে তাঁর কন্যা শেখ হাসিনা দলের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। তিনি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে অনেক এগিয়ে এসেছেন।
বিজ্ঞাপন
১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা সরকার গঠন করে যে অসম্ভব কাজটি সম্ভব করেছিলেন তা হলো, জাতির পিতা ও তাঁর পরিবারের হত্যাকারীদের বিচার এবং পরে ২০১০ সালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আওতায় নিয়ে এসেছেন। আর বাঙালি জাতির আদর্শকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন নিরন্তর। তিনি বাংলাদেশের জনগণের সার্বিক কল্যাণ, বিকাশ এবং মুক্তির লক্ষ্যে অগ্রণী হিসেবে কাজ শুরু করেছেন। তিনি প্রমাণ করেছেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্র বিকাশের জন্য তাঁর বিকল্প নেই। তাঁর সততা, নিষ্ঠা, যুক্তিবাদী মানসিকতা, দৃঢ়তা, মনোবল, প্রজ্ঞা ও অসাধারণ নেতৃত্ব বাংলাদেশকে বিশ্ব অঙ্গনে এক ভিন্ন উচ্চতায় প্রতিষ্ঠিত করেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একজন রাজনীতিক হিসেবে নিজের রাজনৈতিক জীবনে বিশ্বকে যতটা দেখেছেন, কাজ করেছেন ও প্রভাব ফেলেছেন, সমসাময়িক আর কোনো নেতার পক্ষেই তা সম্ভব হয়নি। এ জন্য প্রায়ই তাঁকে ‘ক্রাইসিস ম্যানেজার’ হিসেবে অভিহিত করা হয়।
সাদা চোখে আমরা চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ দেখছি সত্যি, তবে গভীর বিশ্লেষণে বা অন্তরের দৃষ্টিতে দেখলে দেখা যায় এটি মূলত রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধ। রাশিয়ার ওপর আমেরিকার নিষেধাজ্ঞার কারণে সারা বিশ্বেই জ্বালানি, খাদ্যসংকট সৃষ্টি হয়েছে। ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেই সরকার জ্বালানি সাশ্রয়ে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। এতে বিরোধী দল সমালোচনা করলেও হতাশ হওয়া যাবে না। তবে এতে যদি ঘাটতির কোনো তথ্য থাকে সরকার সেটা গ্রহণ করবে।
এখন বিশ্ব চলে মুক্তবাজার অর্থনৈতিক ব্যবস্থায়। অন্যান্য মুদ্রার তুলনায় ডলারের মান শক্তিশালী হওয়ায় যেসব দেশ জ্বালানি তেল, খাদ্য ও ভোগ্য পণ্য এবং ধাতব পণ্য রপ্তাতানি করে, তাদের পণ্যের দাম ও রপ্তানির মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। তারা অপেক্ষাকৃত ভালো অবস্থানে আছে। বিপরীত চিত্রে আমদানিনির্ভর দেশগুলোর ব্যয় বাড়ছে, রিজার্ভ কমছে। গত দুই মাসে ডলারের বিপরীতে টাকার মান ৮৬.৫০ থেকে ১০২.০০-এ নেমেছে। অর্থাৎ টাকার মানের ১৫.৫০ শতাংশ অবমূল্যায়ন হয়েছে। যদিও দ্য ইউএস ডলার ইনডেক্স অনুযায়ী, ডলারের বিপরীতে জাপানি ইয়েন, ব্রিটিশ পাউন্ড ও ইউরো, সুইস ফ্রাঁ, চীনের ইউয়ানেরও অবমূল্যায়ন ঘটেছে।
নিছক রাজনৈতিক বিরোধপ্রবণতা ও দীর্ঘদিনের অভ্যাস এবং চর্চা থেকে বিএনপি দলীয় রাজনীতিবিদদের দেখা যাচ্ছে টিভি টক শো ও জনসভায় বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে রাজনীতি করতে, তির্যক মন্তব্য করতে। এ যেন বাজারে আগুন লাগলে একশ্রেণির মানুষের জন্য আলুপোড়া খাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হওয়ার মতো ঘটনা। কিন্তু ওনারা একটি বিষয়কে হয়তো অনুভব করতে পারছেন না অথবা পারলেও শুধু রাজনৈতিক প্রতিহিংসাবশত স্বীকার করছেন না। বিষয়টি হচ্ছে, অর্জনের জায়গায় আমাদের রেটিং অনেক ওপরে। প্রাসঙ্গিক কারণে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমেছে সত্য। তবু বিশ্বের ১৯৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান এখন ৪৫তম। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে আছে শুধু ভারত। এ ক্ষেত্রে আমাদের চেয়ে পিছিয়ে আছে ইউরোপের বেশ কয়েকটি বড় অর্থনীতির দেশ। গ্লোবাল ইকোনমিক ইনডেক্স বলছে, নিউজিল্যান্ড, বেলজিয়ামের মতো অনেক উন্নত দেশের চেয়েও আমাদের রিজার্ভ বেশি। কিন্তু অনেক অর্জনের মধ্যেও নিষ্ঠুর বাস্তবতা হচ্ছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীনের মতো পরাক্রমশালী তো আমরা নই। সুতরাং যখন আমরা পৃথিবীর আর দশটা দেশের ওপর নির্ভরশীল, তখন এই বৈশ্বিক সংঘাত ও সংকটে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে আসা জাতীয় ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে কৃচ্ছ্রসাধনের পরামর্শ খুবই প্রাসঙ্গিক ও মাঙ্গলিক। এই নীতির সঙ্গে সংহতি প্রকাশ না করে বিরোধিতামূলক তির্যক মন্তব্য ও হাস্যরস করা দেশদ্রোহিতার শামিল। কেননা বিএনপির ওই নেতারা দেশের সার্বিক মঙ্গলের কথা ভাবছেন না, তাঁরা ভাবছেন কিভাবে ধোঁয়াশা তৈরি করে ক্ষমতা দখল করা যায়।
করোনাকালীন সংকটে বাংলাদেশে লাখ লাখ মানুষ মারা যাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছিল আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো। সংকট উত্তরণে দৃঢ়চেতা মনোভাব ও সময়োপযোগী পদক্ষেপের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনা মোকাবেলায় নিজেকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। আশঙ্কা ভুল প্রমাণ করেছেন। আন্তর্জাতিক মহলে হয়েছেন ব্যাপক প্রশংসিত। যুক্তরাষ্ট্রের ফোর্বস ম্যাগাজিনে ২০২০ সালে প্রকাশিত ‘লিডারশিপ স্ট্র্যাটেজি’ শিরোনামে করোনা মোকাবেলায় ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষেত্রে কয়েকজন বিশ্বনেতার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূয়সী প্রশংসা করা হয়েছে। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামও করোনাকালে তাঁর ভূমিকার প্রশংসা করেছে। কমনওয়েলথ মহাসচিব প্যাট্রিসিয়া স্কটল্যান্ড শেখ হাসিনাকে বিশ্বের শীর্ষ তিনজন অনুপ্রেরণা প্রদানকারী নারী নেত্রীর একজন হিসেবে উল্লেখ করেছেন। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের মতে তাঁর নেতৃত্বে সংকট কাটিয়ে অদম্য গতিতে ঘুরে দাঁড়াবে বাংলাদেশ।
মা-বাবাসহ পরিবারের অন্য সদস্যদের নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশে ফিরে তাঁকে মোকাবেলা করতে হয়েছে অসংখ্য চ্যালেঞ্জ। নানা বিরোধ ও কোন্দল দূর করে দলকে সুসংগঠিত করা, বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারসহ আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে দেশি ও আন্তর্জাতিক বিরূপ পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হয়েছে। বিডিআর বিদ্রোহ এবং ওই ঘটনায় সেনা সদরে ভুল তথ্য দিয়ে উসকানি দেওয়ার চেষ্টা বন্ধ করা, দ্রুততম সময়ে বিডিআর হত্যাকাণ্ডের বিচার সম্পন্ন করেছেন। সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা ও নির্বাচন ব্যাহত করার নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি মোকাবেলা, সেরা কূটনৈতিক সাফল্যের মাধ্যমে দীর্ঘ সময়ের ছিটমহল সমস্যার সমাধান ও সমুদ্রসীমায় বিজয় অর্জন, ১/১১ সরকারের ষড়যন্ত্র মোকাবেলা, দেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ফিরিয়ে আনা তাঁর অকল্পনীয় সাফল্য। যদিও এর কোনোটাই সহজ ছিল না। প্রতিটি ক্ষেত্রেই ভয়াবহ প্রতিকূলতা ও ক্রাইসিসকে দৃঢ়তার সঙ্গে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে মোকাবেলা করেছেন তিনি। তিনি গোটা জাতির দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে জেগে থাকেন, তাই তো ১৭ কোটি বাঙালি নিশ্চিন্তে থাকে। জাতির পিতা ও রাষ্ট্রপতির কন্যা হলেও তাঁর চলার পথ কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না কখনো। তিনি বিশ্বকে দেখিয়েছেন সততা, সাহসিকতা, দেশপ্রেম ও নিষ্ঠা দিয়ে সব প্রতিকূলতা জয় করা সম্ভব। শেখ হাসিনা জীবনে যত সংকটে বিজয়ী হয়েছেন তা বোধ করি বিশ্বের বিস্ময়। রাজনীতি ও প্রশাসনে তাঁর অভিজ্ঞতা ও সাফল্য তাঁকে আজ বিশ্বনেতৃত্বে আসীন করেছে।
শেখ হাসিনা বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রক্ত ও আদর্শের উত্তরসূরি। বিশ্ব পরিমণ্ডলে কখনো ‘ভ্যাকসিন হিরো’, কখনো ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’, কখনো ‘চ্যাম্পিয়ন্স অব দি আর্থ’, কখনো ‘ইস্টার অব ইস্ট’, কখনো ‘স্টেটসম্যান’, কখনো শান্তির অগ্রদূত, কখনো নারীর ক্ষমতায়নের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় সোচ্চার কণ্ঠস্বর, কখনো বিশ্বের অন্যতম সেরা সৎ ও পরিশ্রমী প্রধানমন্ত্রী, কখনো গণতন্ত্রের মানসকন্যা আবার কখনো তিনি উন্নয়নের ম্যাজিশিয়ান। তিনি আলোকবর্তিকা হাতে নিয়ে নিকষ কালো অন্ধকারের বাংলাদেশকে আলোকোজ্জ্বল উন্নয়ন অভিযাত্রায় শামিল করেছেন, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল বিশ্বের কাতারে নিয়ে গেছেন। এখন বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ের বাতিঘর, আশা-আকাঙ্ক্ষার শেষ আশ্রয়স্থল। কোটি কোটি মানুষের কাছে পরম মমতাময়ী মায়ের স্থানে অধিষ্ঠিত।
লেখক : উপ-তথ্য, যোগাযোগ ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ