নরসিংদীতে পোশাক পরা নিয়ে ঢাকা থেকে নরসিংদীতে বেড়াতে আসা এক তরুণীকে হেনস্তা ও শ্লীলতাহানির অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত বুধবার সকাল সাড়ে পাঁচটার দিকে নরসিংদী রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব হয়েছেন অনেকেই। উন্নয়ন কর্মী শরীফুল হাসান নিজের ফেসবুকে লিখেছেন, নরসিংদী রেল স্টেশনে মেয়েটির সাথে যা ঘটল সেটা নারীদের জন্য নতুন বিপদ! এটা নিপীড়ন ছাড়া আর কী? অবাক ব্যাপার হলো, আজকাল বহু মানুষ মনে করে দেশে-বিদেশে নারীর বোরকা পরাটা তাঁর নিজের পোশাকের স্বাধীনতা।
বিজ্ঞাপন
নিপীড়নকারীদের হাত থেকে কেউই নিরাপদ নয় উল্লেখ করে শরীফুল হাসান বলেন, আমি মনে করি একজন নারী বোরকা হিজাব জিন্স শাড়িসহ যে পোশাক ইচ্ছে পরবে। এ নিয়ে কাউকে হেনস্থা করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। মনে রাখতে হবে বোরকা, শাড়ি যে পোশাকেই একজন নারী থাকুক, শিশু হোক কিংবা বৃদ্ধা, নিপীড়নকারীদের হাত থেকে কেউই নিরাপদ নয়। তনু হত্যা থেকে শুরু করে মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত প্রত্যেকটা ঘটনার দিকে তাকান। দেখবেন হিজাব কিংবা শাড়ি কোনো পোশাকই তাদের সুরক্ষা দিতে পারেনি। আমি মনে করি, নরসিংদী রেলস্টেশনে মেয়েটাকে হেনস্তাকারীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে, নয়তো এই ধরনের ঘটনা বাড়তেই থাকবে। আমাদের প্রত্যেকের বিবেকবোধ জাগ্রত হোক। নিরাপদে থাকুক প্রতিটি মেয়ে, প্রতিটা মানুষ। ভালো থাকুক এই পৃথিবী।
কাজী রাকিব নামের একজন লিখেছেন, নরসিংদী আমার জেলাশহর। এখানকার রেলস্টেশন কেন্দ্রিক আড্ডায় আমি কয়েক বছর যাপন করেছি। শহরটা ক্রমশ হয়ে যাচ্ছে বদ্ধ আর উগ্র, দেশের অন্য যেকোনো জনপদের মতোই। নরসিংদী রেলস্টেশনে একজন নারীকে হেনস্তার ভিডিও দেখলাম একটু আগে। তার আগে এক বন্ধুর স্টোরিতে দেখলাম মিরপুরে একই রকম অজুহাতে পুলিশিংয়ের শিকার হওয়ার খবর। পথেঘাটে পোশাক টেনে নারীর ওপর কর্তৃত্ব খাটানোর প্রবণতা এখন নিয়মিত দেখা যাচ্ছে।
রেলস্টেশনের ভিডিওতে যেটি আলাদা করে খেয়াল করতে হয়েছে, যারা ভুক্তভোগীর নারীর পোশাকের ওপর সরাসরি হামলে পড়লেন, তারা প্রায় সকলেই নিজেরা নারী। সাধারণ থ্রিপিস ওড়না পরা, হাতে ভ্যানিটি ব্যাগ, নিম্নমধ্যবিত্ত ভদ্রঘরের বলে যাদের প্রথম দর্শনে মনে হয়, তেমন নারী। শেষমেশ ভুক্তভোগী যখন স্টেশন মাস্টারের রুমের দিকে পালাচ্ছেন, পিছন থেকে তাড়া করে তার জামা ছেঁড়ার চেষ্টা করলেন, তিনিও এক নারী।
আমাদের নারীরা প্রথাগতভাবেই পেট্রিয়ার্কাল ক্ষমতাকাঠামোর প্রথম ধারকবাহক হিসেবে ভূমিকা পালন করে আসছেন, তারপরও তাদের অন্য নারীর ওপর এমন দানবীয় আক্রমণকারী হয়ে উঠতে দেখা একটা আলাদা রকমের পীড়ার অনুভূতি দিল। ভয়ংকর, এটা ভয়ংকর!
নরসিংদী রেলস্টেশনে ঘটে যাওয়া ঘটনার মেয়েটি জিন্স ও টি-শার্ট পরেছিলেন। এক তরুণের হাতে ছিল ট্যাটুও। তাই দেখে স্টেশনে অবস্থানরত এক নারী বাজে ও নোংরা কথা বলা শুরু করে। একপর্যায়ে ওই নারী ইচ্ছা করেই ঝগড়ায় জড়ায়। এ সময় রেলস্টেশনের কিছু বখাটে লোকজন হঠাৎ করে ছুটে এসে ঐ তরুণ-তরুণীদের এলোপাতাড়ি মারতে শুরু করে এবং ঐ তরুণীর শ্লীলতাহানি করে। পরে ভুক্তভোগী ওই তরুণী নিজেকে বাঁচাতে স্টেশন মাস্টারের রুমে আশ্রয় নেয়। পরে স্টেশন মাস্টারের মধ্যস্থতায় ঘটনাটির সুরাহা হয়।