<p>পায়ুপথের বিশেষ এক ধরনের রোগ ‘অ্যানাল ফিশার’। এ রোগটি বেশ যন্ত্রণাদায়ক। শিশু থেকে বৃদ্ধ যেকোনো বয়সীরাই এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। তবে অপেক্ষাকৃত তরুণদের মধ্যে এ রোগের প্রবণতা কিছু বেশি দেখা যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বে প্রতি এক হাজার জনের মধ্যে এক বা দুজন জীবনের কোনো না কোনো সময়ে এই রোগে ভুগে থাকে।</p> <p>আশার কথা, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কোনো ধরনের চিকিৎসা ছাড়া শুধু নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপনের মাধ্যমেই এই রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।</p> <p><strong>ধরন</strong><br /> ক্রনিক রোগ থাকলে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ছয় সপ্তাহের বেশি সময় পর্যন্ত এই রোগের লক্ষণগুলো থাকতে পারে। এ ক্ষেত্রে একে বলে শর্ট টার্ম (অ্যাকিউট) অ্যানাল ফিশার। আবার ৮-১২ সপ্তাহের মধ্যে এ রোগের উপশম না হলে তাকে বলে ক্রনিক অ্যানাল  ফিশার। অনেকের ক্ষেত্রে বছরব্যাপী ক্রনিক অ্যানাল ফিশার রোগের কথাও জানা যায়, যা নিঃসন্দেহে পীড়াদায়ক। তখন ওই ব্যক্তির স্বাভাবিক জীবনযাপন ও স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত হতে পারে।</p> <p><strong>লক্ষণ</strong><br /> ►     মলত্যাগের সময় মলদ্বারে প্রচণ্ড ব্যথা। সূক্ষ খোঁচা বা কেটে গিয়ে জ্বলুনির মতো অনুভূতি হতে পারে।</p> <p>►     তীব্র যন্ত্রণাসহ এই ব্যথা পরবর্তী এক ঘণ্টা বা তারও বেশি থাকতে পারে।</p> <p>►     মলদ্বারের আশপাশের চুলকানি বা জ্বালাপোড়া</p> <p>►     মলের সঙ্গে তাজা রক্ত যাওয়া। মলত্যাগের পর মল বা টয়লেট পেপারে রক্তের দাগ পাওয়া।</p> <p>►     মলদ্বারের চারপাশের চামড়ায় দৃশ্যমান ফাটল বা দাগ।</p> <p>►     দুর্গন্ধযুক্ত মল, মিউকাস বের হওয়া ইত্যাদি।</p> <p><strong>কারণ</strong><br /> অ্যানাল ফিশারের জন্য কিছু কারণকে প্রধানত দায়ী করা হয়। এগুলো হলো :</p> <p>কোষ্ঠকাঠিন্য : কোষ্ঠকাঠিন্য এই রোগের প্রধান কারণ। কোষ্ঠকাঠিন্যজনিত সমস্যা থাকলে বা স্বাভাবিকের তুলনায় মলত্যাগে অতিরিক্ত বাধা পেলে অ্যানাল ফিশার হতে পারে।</p> <p>ক্রনিক ডায়রিয়া : যারা দীর্ঘদিন ধরে ডায়রিয়ায় ভুগছে বা যাদের ঘন ঘন পাতলা পায়খানা হয়, তাদের এই সমস্যা হতে পারে।</p> <p>পায়ুপথে যৌনতা : পায়ুপথে কখনো যৌন সঙ্গম করা উচিত নয়। এতে মলদ্বার ছিঁড়ে যাওয়া, ইনফেকশন বা সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে। এটা অ্যানাল ফিশার হওয়া ছাড়াও অনেক ঝুঁকিপূর্ণ যৌন রোগের কারণও।</p> <p>গর্ভকালীন সময় : গর্ভকালীন এবং ক্ষেত্র বিশেষে সন্তান জন্মদানের পরবর্তী সময়ে এই সমস্যা দেখা দিতে পারে।</p> <p>এ ছাড়া পায়ুপথের ক্যান্সার, এইচআইভি, হারপিস, যক্ষ্মা, সিফিলিস ইত্যাদি রোগ থাকলে অনেকে সময় অ্যানাল ফিশার হতে পারে।</p> <p><strong>পরীক্ষা</strong><br /> রোগীর উপসর্গ শুনে ও মলদ্বার পরীক্ষা করে চিকিৎসকরা রোগ নির্ণয় করে থাকেন। মলদ্বার না দেখে শুধু সমস্যা শুনে চিকিৎসা দেওয়া উচিত নয়। একটি গ্লাভস পরা আঙুল বা একটি অ্যানোস্কোপ (শেষ প্রান্তে ক্যামেরা লাগানো একটি পাতলা নল) ঢুকিয়ে চিকিৎসরা পায়ুনালি পরীক্ষা করে থাকেন। ফিশারের অবস্থান দেখেও এর সম্ভাব্য কারণ সম্বন্ধে জানা যেতে পারে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সিগময়ডোস্কোপি, কোলনস্কোপি ইত্যাদি পরীক্ষার প্রয়োজন হয়।</p> <p><strong>চিকিৎসা</strong><br /> অ্যানাল ফিশারকে অবহেলা করা কখনোই উচিত নয়। অনেকে লোকলজ্জার ভয়ে এই রোগকে চেপে রাখে, যা মোটেও ঠিক নয়। এতে পরবর্তী সময়ে জটিলতা বাড়ে। মলদ্বারে অ্যানাল ফিশারের কোনো লক্ষণ দেখা দিলেই নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা উচিত বা চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। প্রাথমিকভাবে কয়েক সপ্তাহের চিকিৎসায় এই রোগ নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। তবে কিছু ক্রনিক রোগীর ক্ষেত্রেই সার্জারি বা অপারেশনের প্রয়োজন হয়। আধুনিক চিকিৎসায় কোনো ধরনের কাটা-ছেঁড়া ছাড়া লেজার রশ্মি ব্যবহার করে বিনা রক্তপাতে সার্জারি করা সম্ভব হচ্ছে।</p> <p><strong>সহায়ক খাবার</strong><br /> মূলত সহজপাচ্য এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়ক এমন খাদ্য এই রোগ উপশমে সহায়ক। এ জন্য খেতে হবে—</p> <p>উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবার : আঁশসমৃদ্ধ শাক-সবজি এই রোগ উপশমে বেশ সহায়ক করে বলে খেতে পারেন পুরো শস্য, মটরশুটি, সিম, ইসবগুলের ভুসি ইত্যাদি।</p> <p>তরল গ্রহণ : তরলজাতীয় খাবার, পর্যাপ্ত পানি, ফলের জুস ইত্যাদি পান করুন।</p> <p>ব্যয়াম : নিয়মিত ব্যয়াম বা কায়িক শ্রম করুন।</p> <p>ফল : সাইট্রাস বা লেবুজাতীয় ফল, পাকা কলাসহ তাজা ফলগুলো খেতে পারেন।</p> <p>সতর্কতা : মদ্যপান বা ক্যাফেইন জাতীয় খাবার গ্রহণে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিৎ।</p> <p><strong>হিপ বাথ ও উঞ্চ পানিতে গোসল</strong><br /> ►     এক গামলা কুসুম গরম পানিতে সামান্য লবণ বা পভিসেপ দ্রবণ মিশিয়ে মলত্যাগের পর ১০ থেকে ১৫ মিনিট নিতম্ব ডুবিয়ে বসে থেকে সিজ বাথ বা হিপ বাথ নেওয়া যায়। এতে জটিলতা অনেকাংশে কমে যায়।</p> <p>►     দিনে কয়েকবার উষ্ণ পানিতে ১০-২০ মিনিট গোসল করলেও মাসল রিলাক্স হয়। </p> <p>►     পায়ুপথে ভ্যাসেলিন (পেট্রোলিয়াম জেলি) ব্যবহারেও উপকার পাওয়া যায়। </p> <p><strong>প্রতিরোধে করণীয়</strong><br /> দৈনন্দিন জীবনযাপনে কিছু নিয়মকে অভ্যাসে পরিণত করলে অ্যানাল ফিশারকে এড়ানো যায় বা শর্টটার্মের (অ্যাকিউট) রোগীরা ভালো থাকতে পারে। এ জন্য কিছু করণীয় হলো—</p> <p>►     কোষ্ঠকাঠিন্য যাতে না হয় সেদিকে খেয়াল রাখা।</p> <p>►     মলদার সব সময় শুষ্ক রাখার চেষ্টা করা।</p> <p>►     যথেষ্ট পরিমাণ পানি পান করা।</p> <p>►     পর্যাপ্ত ফাইবার বা আঁশ জাতীয় খাবার গ্রহণ।</p> <p>►     মাংশজাতীয় খাবার এড়িয়ে চলা।</p> <p>►     পপ কর্ণ, চিপস জাতীয় খাবার পরিহার করা।</p> <p>►     পায়খানার বেগ এলে চেপে না রেখে দ্রুত মলত্যাগ করা।</p> <p>►     অতিরিক্ত চাপ দিয়ে মলত্যাগের অভ্যাস ত্যাগ করা।</p> <p>►     বারবার মলত্যাগ না করা।</p> <p>►     দীর্ঘক্ষণ কমোডে বসে না থাকা।</p> <p>►     পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া হলে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া।</p> <p>►     অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা না করা।</p> <p>►     নিয়মিত কায়িক শ্রম বা ব্যায়াম করা।</p> <p>►     প্রতিদিন ছয় থেকে আট ঘণ্টা ঘুমানো ইত্যাদি।</p> <p><strong>অনুলিখন : ফারিয়া মৌ</strong></p>