আজ আন্তর্জাতিক পর্বত দিবস। পার্বত্য এলাকার মানুষের জীবনমান উন্নয়ন ও টেকসই ভবিষ্যৎ নিশ্চিতের লক্ষ্যে জাতিসংঘ ২০০৩ সালের ১১ ডিসেম্বরকে আন্তর্জাতিক পর্বত দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। সেই থেকে প্রতিবছর বিভিন্ন দেশে দিবসটি যথাযথ মর্যাদায় পালিত হয়ে আসছে। এবারের পর্বত দিবসের প্রতিপাদ্য হলো- ‘পর্বতের জীববৈচিত্র্য রক্ষা’।
প্রাণীজগতের জীববৈচিত্র্যের ৫০ শতাংশ ‘হটস্পট’ পর্বতে পাওয়া গেছে। ফলে এবারে আন্তর্জাতিক পর্বত দিবসে পর্বতের জীববৈচিত্র্য রক্ষার বিষয়টি সামনে আনা হয়েছে। মানবসভ্যতার স্বাভাবিক বিকাশ ও অগ্রযাত্রা ধরে রাখতে হলে জীববৈচিত্র্য রক্ষা করতে হবে। না হলে প্রকৃতি ভারসাম্য হারিয়ে পরিবেশে বিপর্যয় নেমে আসবে। এ জন্য প্রাণিজগতের জীববৈচিত্র্যের অর্ধেকের আধার পর্বতগুলোর বিষয়ে সবাইকে সচেতন হতে হবে।
পর্বতের জীববৈচিত্র্যের টেকসই ব্যবস্থাপনা গোটা বিশ্বই এখন গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায়ও (এসডিজি) পর্বতের জীববৈচিত্র্যের বিষয়টিতে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি মানুষেরই উচিত পর্বতের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ভূমিকা রাখা। আন্তর্জাতিক পর্বত দিবসে সরকারি ও বেসরকারি নানা প্রতিষ্ঠান, সংগঠন ও ব্যক্তিগত পর্যায় থেকে এ বিষয়ে মানুষকে সচেতন করতে ভূমিকা রাখা যায়। বিতর্ক প্রতিযোগিতা, বিভিন্ন প্রদর্শনীর আয়োজন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবি ও লেখা শেয়ার করার মাধ্যমে আমরা মানুষকে সচেতন করতে পারি। আমরা সমতলের বাসিন্দারা যারা আধুনিক জীবনযাপন করছি, তারা পর্বত বিষয়ে যত বেশি সচেতন হব, দায়িত্বশীল হব, ততই পর্বতের জীববৈচিত্র্য রক্ষার কাজ সহজ হবে। একটি বৈচিত্র্যময় পৃথিবী রক্ষায় আমাদের সবারই পর্বত, প্রাণ ও প্রকৃতি সম্পর্কে সচেতন ও দায়িত্বশীল হতে হবে।
আমাদের দেশে গত কিছুদিন হলো ভ্রমণবিষয়ক নানা প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন গড়ে উঠেছে। এগুলো মানুষের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়ও বটে। এই ভ্রমণবিষয়ক প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনগুলো এ দেশে পাহাড়গুলোর জীববৈচিত্র্য রক্ষার বিষয়ে সচেতনতা তৈরিতে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় দেখেছি, বহু পর্যটক পাহাড়ে বেড়াতে গিয়ে সেখানকার প্রাণ ও প্রকৃতির জন্য ক্ষতিকর এমন নানা কাজ করেন। দিনের পর দিন এগুলো চলতে থাকলে একসময় আমাদের পাহাড়ের জীববৈচিত্র্য বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে। এতে আমাদের প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হবে। তাই আমাদের নিজেদের জন্য সুন্দর ও বাসযোগ্য একটি পৃথিবী চাইলে সবাইকে পাহাড়-পর্বতের প্রাণ ও প্রকৃতি রক্ষায় ভূমিকা রাখতে হবে।
আমি ২০১৪ সাল থেকে দেশে বা বিদেশের পাহাড়-পর্বতে নিয়মিত যাতায়াত করছি। সেই সুবাদে পাহাড়ের পরিবেশ, প্রকৃতি ও জনসাধারণকে কাছ থেকে দেখার, মেশার সুযোগ হয়েছে। সব দেশেই সমতলের তুলনায় পাহাড়ের মানুষ নাগরিক সুযোগ-সুবিধা অনেক কম পায়। দুর্গম পর্বতগুলোর বাসিন্দারা প্রচলিত শিক্ষা বা স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত। তারা তাদের মতো করে গড়া পদ্ধতিতে জীবনযাপন করে। পর্বতগুলোর বাসিন্দারা বছরের পর বছর তাদের নিজস্ব জীবনযাপন, সংস্কৃতি প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে সংরক্ষণ করে চলেছে। পাহাড়ের মানুষকে বলা হয় মাটির মানুষ। শহুরের জীবনাচারণ থেকে দূরে থাকে বলেই তারা এখনো অনেক বেশি সরল। আমাদের উচিত, তাদের জীবনাচারণকে শ্রদ্ধা জানিয়ে তাদেরকে তাদের মতো করেই থাকতে দেওয়া। কারণ, বৈচিত্র্যময় মানুষ আছে বলেই পৃথিবী এত সুন্দর।
লেখক : পর্বতারোহী
মন্তব্য