<p>শিকাগোর মার্সি হসপিটাল অ্যান্ড মেডিক্যাল সেন্টারের নিবীড় পরিচর্যা কেন্দ্রে ছুটে গেলেন ব্রেন্ডা বেনেট-জনসন এবং তার বোন রোজি ব্রুকস।  হাসপাতালের কর্মীরা জোর দিয়েই বলছেন, কিন্তু তারা সন্দিহান। আইসিইউয়ে এক রোগী জীবনের শেষ সময়ের সাথে যুদ্ধ করছেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তাদের ভাই আহত হয়ে সেখানে চিকিৎসাধীন আছেন। বোনরা তাদের মৃত্যুপথযাত্রী লোকটির ভাইটির দিকে কেবল তাকিয়েই ছিলেন। </p> <p>বিছানায় শুয়ে তিনি। জ্ঞান আসছে আবার যাচ্ছে- এমনই এক অবস্থার মধ্যে রয়েছে। চেহারা দেখে আগের মানুষটিকে চেনা সম্ভব নয়। তার গলার মধ্য দিয়ে একটি ভেন্টিলেটর চলে গেছে ভেতরে। কেবল এ কারণেই শ্বাস-প্রশ্বাস চলছে, উঠছে নামছে তার বুক। গত এপ্রিলের ২৯ তারিখে তাকে এখানে আনা হয়। তার ওপর হামলা হয়েছিল। মারাত্মক আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে বিবস্ত্র অবস্থায় পড়েছিলেন। </p> <p>বেনেট-জনসন এবং ব্রুকস তাদের ভাই আলফোনসো বেনেটের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করতেন। বেশ কয়েক বছর হয়ে গেছে তাদের পরস্পরের সাথে যোগাযোগ রয়েছে। দুই বোন সংবাদমাধ্যমকে বলেন, কিন্তু এই লোকটার মুখ দেখে চেহারাই বোঝা যাচ্ছিল না তিনি আলফোনসো কিনা। মার্সির আইসিইউ-তে যে মানুষটি শুয়ে আছেন তাকে এখনো চেনার উপায় নেই। </p> <p>তবে শিকাগো পুলিশ ডিপার্টমেন্ট নিশ্চিত করেছে যে লোকটি তাদেরই ভাই, জানান বেনেট-জনসন। </p> <p>হাতপাতাল কর্তৃপক্ষের কথা তারা মেনে নিয়েছেন। আহত মানুষটির পাশে বিনিদ্র রাত কাটিয়েছেন। একসময় চিকিৎসক বললেন যে সময় হয়েছে। তারা প্রয়োজনীয় কাগজপত্রে স্বাক্ষর করলেন। লাইফ সাপোর্ট সরিয়ে ফেলার অনুমতি দিলেন। এরপর যা হয়, খুব দ্রুত চলে গেলেন ভাই না ফেরার দেশে। দুই বোন অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার পরিকল্পনা করলেন। </p> <p>পরিবারটির এই শোকাবহ মুহূর্তে যা ঘটল তা রীতিমতো অলৌকিক ঘটনা। চোখের সামনে চলে এলেন তাদের ভাই আলফোনসো। সুস্থ, সবল, জীবিত তো বটেই। </p> <p>তাকে দেখে আমার হার্ট অ্যাটাকের দশা হয়েছিল, জানান বেনেট-জনসন। </p> <p>আসলে হাসপাতালে থাকতে দুই বোনের সন্দেহ ভুল ছিল না। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, তারা ভুল এক মানুষের কাগজে স্বাক্ষর করেছিলেন। 'ব্যাপারটা এভাবে ঘটবে তা দুঃখের বিষয়। লোকটি আমাদের পরিবারের কেউ ছিলেন না। তবুও আমাদের এমন একটা অবস্থার মধ্য দিয়ে যেতে হলো, সংবাদমাধ্যমকে জানান বেনেট-জনসন।       </p> <p>শিকাগোর ঘটনাটি সত্যিই অবাক করার মতো। তবে এ ঘটনা আমাদের বাংলাদেশেও ঘটেছে কিছু দিন আগেই। ১০ জুন সন্ধ্যায় রাজশাহীর বাঘা থানার পুলিশ চকবাউসা গ্রামের ভুট্টাক্ষেত থেকে মুখে পোড়া মবিল মাখানো অজ্ঞাতনামা এক নারীর (৪৫) লাশ উদ্ধার করা হয়। পরের দিন ১১ জুন ওই লাশের পরিচয় মেলে। তিনি উপজেলার আড়ানী পৌরসভার পাঁচপাড়া গ্রামের বাকপ্রতিবন্ধী মনির হোসেনের স্ত্রী গোলাপি বেগম পরিচয়ে শনাক্ত হন। তাকে দাফনের একদিন পর জীবিত ফেরত আসেন গোলাপি। ১২ জুন বুধবার সকালে আড়ানী রেল স্টেশন থেকে গোলাপিকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। প্রথমে আড়ানী ইউনিয়ন পরিষদে আনা হয় তাকে। পরে চেয়ারম্যান থানায় প্রেরণ করেন। এদিকে, চারঘাট উপজেলার চারাবটতলা এলাকার সুরজ মিয়া নামের এক যুবক ছবি দেখে দাবি করেন, দাফন করা লাশ তার স্ত্রী দোলেনা বেগমের। আসলে মানুষকে ভুল শনাক্তের কারণে এমন ঘটনা ঘটে। পরে গোলাপি বেগমের মামা শাকিব হোসেন, শাশুড়ি মরিয়ম বেগম, ভাসুর মাজদার রহমান, জা সাজেদা বেগমের উপস্থিতিতে চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে আসল গোলাপি বেগমকে শনাক্ত করা হয়। </p> <p>উভয় ক্ষেত্রে প্রশ্ন জাগে, তাহলে আসল মানুষটিকে কেন ভুলভাবে উপস্থাপন করা হলো? শিকাগোর আলফোনসোর সাথে তাই ঘটেছে। শিকাগোর মিডিয়ার নজর কাড়ে বিষয়টি। পরে নড়েচড়ে বসে পুলিশ বিভাগ। শিকাগো পুলিশ বিভাগের চিফ কমিউনিকেশন্স অফিসার অ্যান্থোনি গাগলিয়েলমি বলেন, এ ঘটনা তদন্ত করে দেখছে আমাদের গোয়েন্দা দল। সেই মানুষটিকে হাসপাতালে ভর্তি থেকে শুরু করে বোনদের খবর দেয়া পর্যন্ত সবই অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসবে। </p> <p>নিউ ইয়র্কেও এমন একটি ঘটনা ঘটেছে। জানুয়ারিতে ওয়াশিংটন পোস্ট এক প্রতিবেদনে জানায়, ২০১৮ সালের জুলাইয়ে এক নারীকে ব্রঙ্কস হাসপাতালে ডেকে পাঠানো হয়। তাকে বলা হয় যে তার ভাই অতিমাত্রায় মাদক নেয়ার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত মস্তিষ্ক নিয়ে অচেতন অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি তিনি। দুই পপ্তাহ বাদে বোন তার ভাইয়ের লাইফ সাপোর্ট খুলে ফেলতে সম্মত হন। কারণ চিকিৎসকরাও বলছিলেন যে তার ভাইয়ের আর ফেরার সম্ভাবনা নেই। পরে ওই নারী বুঝতে পারেন যে, হাসপাতাল ভুল মানুষকে তার ভাই ভেবেছে। ওই সময়টাতে আসলে তার ভাই রিকার্স আইল্যান্ডে গ্রেপ্তার অবস্থায় ছিলেন। ভুলটা তখনই প্রমাণতি হয় যখন এক মেডিক্যাল অফিসার ময়নাতদন্ত করেন। </p> <p>শিকাগোর দুই বোন জানান, হাসপাতাল তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। এক সেবিকা জানান যে, তাদের ভাই হাসপাতালে ভর্তি। তিনি পুলিশের সঙ্গে গোলাগুলিতে আহত হয়েছেন। তবে তারা লোকটির আসল পরিচয় নিশ্চিত করতে বাজেট ঘাটতির কারণে আঙুলের ছাপ নেয়নি। </p> <p>এক্ষেত্রেও ভুল তখন চিহ্নিত হয়েছে যখন কর্তৃপক্ষ মর্গে মৃতের আঙুলের ছাপ পরীক্ষা করেছে। তবে ঘটনা হচ্ছে, এই মৃত মানুষটি এখন পর্যন্ত রহস্যময় চরিত্র হয়েই রয়েছেন। এখন তদন্তকারীরা মৃতের আসল স্বজনের সন্ধানে রয়েছেন। <br /> সূত্র: মারকারি নিউজ </p>