<p>এক নার্স বিষ ইনজেকশন দিয়ে প্রায় কুড়ি জন রোগীকে মেরে ফেলে। ঘটনাটি জাপানের। খুনের পেছনে কারণ হিসেবে সে জানায় রোগী মৃত্যুর খবর তাদের প্রিয়জনদের জানানোটা নার্সের কাছে অসহ্যের। সেই কাজকে এড়াতে অন্য নার্সের ডিউটির সময় সেই রোগী যাতে মারা যায় তার বন্দোবস্ত করে দিত অভিযুক্ত নার্স।</p> <p>পুলিশের কাছে এ কথা স্বীকার করেছে ৩১ বছরের আয়ুমি কুবোকি। তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। একটি স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে এই খবর। ৮৮ বছরের সোজো নিশিকাওয়ার মৃত্যুতে কুবোকির হাত থাকায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ২০১৬ সালে ওগুচি হাসপাতালে ওই বৃদ্ধার শরীরে অ্যান্টিসেপটিক ইনজেক্ট করে ওই নার্স। জাপানের দুটি সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে কুবোকি পুলিশকে জানিয়েছে রোগীর পরিবারকে রোগীর মৃত্যুর খবর জানানোটা একটা বিড়ম্বনা।</p> <p>সেই সময় যে নার্স দায়িত্বে থাকে তাকেই এই কাজটা করতে হয়। সেই দায়িত্ব ঘাড় থেকে ঝেড়ে ফেলতেই কুবোকি তাদের টার্গেট করত যারা খুব তাড়াতাড়ি মারা যাবে। আর সেই রোগীকে বিষ দেওয়ার পর কুবোকি যখন হাসাপাতালে ডিউটিরত অবস্থায় থাকবেনা তখনই সেই রোগীর মৃত্যু হবে। ফলে রোগীর পরিবারকে খবর দেওয়ার সময় কুবোকি উপস্থিত থাকবেনা। দায়িত্ব পড়বে সেই সময় কর্তব্যরত অন্য নার্সের ওপর। জাপানের শিম্বুন ও জাপান টাইমসে এই রিপোর্ট প্রকাশ পেয়েছে।</p> <p>আশাহি শিম্বুনে বলা হয়েছে যে পুলিশ মনে করছে কুবোকি শুধু মৃত্যু পথযাত্রী রোগীকেই বিষক্রিয়ার মেরে ফেলত তা সত্যি নয়। হয়ত যারা মারা যাওয়ার মত রোগী নয় তেমন রোগীদেরও ইনজেকশন দিয়ে মারত কুবোকি। নিশিকাওয়া মারা যান ২০১৬ এর ১৮ই সেপ্টেম্বর। চিকিৎসকরা তাঁর মৃত্যু প্রাকৃতিক কারণে হয়েছে বলে মনে করেন। কিন্তু তার দুদিন পরই তার হাসপাতালেরই ওই একই ঘরের আরেক রোগী ৮৮ বছরের নোবউ ইয়ামাকিরও মৃত্যু হয়।</p> <p>আশাহি শিম্বুনে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, এক নার্স মৃত ইয়ামাকির ইন্টারভেনাস ড্রিপ ব্যাগে বুদবুদ দেখতে পান। অটোপসিতে ধরা পড়ে তাঁর শরীরে মাত্রাতিরিক্ত বেনজালকোনিয়াম ক্লোরাইড নামের একটি ডিসইনফেকট্যান্ট রয়েছে। এরপরই পুলিশ তদন্তে নামে। নিশিকাওয়ার মৃত্যু কিভাবে হয়েছে তা খতিয়ে দেখে পুলিশ। তদন্তে উঠে আসে নিশিকাওয়ারও একই ইনজেকশনে মৃত্যু হয়েছে। কমপক্ষে আরও দুজনের মৃত শরীরে ওই একই অ্যান্টিসেপটিক মেলে। যার মাধ্যমে তাদের শরীরে বিষক্রিয়া হয়।</p> <p>জাপান টাইমসের তথ্য অনুযায়ী, এই দুই মৃত্যুর পেছনে তার হাত রয়েছে বলে স্বীকার করে নেয় কুবোকি। সে জানায় কুড়ি জনের চিকিৎসা চলছিল এমন রোগীর ইনটারভেনাস ড্রিপ ব্যাগে সে এই অ্যন্টিসেপটিক ইনজেকশন দিয়ে দেয়। আরও কমপক্ষে ১০ টি এমন ব্যাগ পাওয়া যায় যাতে ছোট ছিদ্র করা ছিল। কমপক্ষে ইয়োকোহোমা হাসপাতালে কমপক্ষে ৪৮ জন রোগীকে মাত্র তিন মাসের মধ্যেই এভাবে মেরে ফেলে কুবোকি। ২০১৬ এর সেপ্টেম্বরের মধ্যেই ঘটিয়ে ফেলে সে এতগুলো মৃত্যু। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তদন্ত শুরু হওয়া পর্যন্ত সে চালাতে থাকে তার এই খুনের প্রক্রিয়া।</p> <p>কুবোকি প্রথমে এই পুরো খুনের বিষয়টিই অস্বীকার করে। পুলিশ প্রথমে তদন্ত করতে নেমে রোগীদের মৃত্যুর সময় যে নার্স ডিউটিতে ছিল এবং রোগীর বাড়িতে মৃত্যু সংবাদ দিত তাকেই সন্দেহ করে। কিন্তু কুবোকি দৈনিক আসাহি শিম্বুনকে জানায়, ‘আমি রোগীদের শান্তিতে মরতে সাহায্য করতে কঠোর পরিশ্রম করেছি। তাই এমন ঘটনায় আমি আতঙ্কিত।’</p>