<p>যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে বিজ্ঞানীরা কৃমির টিকা তৈরির উদ্দেশ্যে একটি নতুন গবেষণা শুরু করেছেন। এই গবেষণায় কিছু স্বাস্থ্যবান স্বেচ্ছাসেবক বেছে নেওয়া হয়েছে, যাদের কৃমি দ্বারা সংক্রমিত করা হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, গবেষণাটি সফল হলে কৃমিঘটিত শারীরিক প্রতিবন্ধকতা কিংবা অ্যানিমিয়ার মতো রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে। কৃমি গবেষণায় স্বেচ্ছাসেবকদের একজন জেসিকা তাঁর এই গবেষণায় অংশগ্রহণের একটি ভিডিও ডায়েরি সংরক্ষণ করছেন। কাল থেকে একটি গবেষণার জন্য আমার শরীরে কৃমি প্রবেশ করানো হবে। বিষয়টি শুনলে হয়তো কিছুটা ঘেন্না লাগতে পারে। পাকস্থলীতে ৫০টি কৃমি প্রবেশ করানো মানুষজনের কাছে খুব পছন্দের বিষয় নয়। কিন্তু সত্যি কথা বলতে, আমার কাছে এটা কোনো সমস্যাই মনে হচ্ছে না।</p> <p>কৃমি দ্বারা কোনো সুস্থ মানুষকে সংক্রমিত করা হয়তো অদ্ভুত মনে হতে পারে। কিন্তু এর মাধ্যমে গবেষকরা কৃমি সম্পর্কে আরো ভালো ধারণা পাবেন। প্রতিবছর বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি মানুষ এই কৃমি দ্বারা সংক্রমিত হয়। বলছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জেফরি বেথোনি। ব্রাজিল, আফ্রিকা এবং এশিয়ার কিছু অংশ যেখানে কৃমির সংক্রমণ নিয়মিত। সেসব এলাকার সমস্যা হলো, যখনি কারো কৃমি সংক্রমণ হয়, তখনই সে পুষ্টির দিক দিয়ে দুর্বল হয়ে পড়ে। আর কৃমিও তাদের খাদ্য হিসেবে তাদের রক্ত টেনে নেয়। অপুষ্টি এবং অন্যান্য কারণে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ওপর নতুন একটি টিকা পরীক্ষা করা কঠিন। কিন্তু স্বাস্থ্যবান স্বেচ্ছাসেবকদের ওপর কৃমির কি প্রভাব পড়ছে, সেটি দেখার মাধ্যমে গবেষকরা এর টিকা আরো সঠিকভাবে পরীক্ষা করতে পারে।</p> <p>একটি ব্যান্ডেজে কৃমির লার্ভা সংযুক্ত করে সেটি স্বেচ্ছাসেবকদের হাতের চামড়ার ওপর রেখে সেটি তাদের শরীরে প্রবেশ করানো হয়। আমি মাত্র কৃমির ডোজ নিয়ে হাসপাতাল থেকে বের হলাম। আমার হাত কিছুটা চুলকাচ্ছে, কিন্তু এ ছাড়া আর কিছু বুঝতে পারছি না। কৃমির প্রভাব পরীক্ষার জন্য স্বেচ্ছাসেবকদের বিভিন্ন ডোজের কৃমি দ্বারা সংক্রমিত করা হয়। গবেষকদের একজন অধ্যাপক জন হডোন বলছেন, এখন আমরা কৃমির মাত্রা বাড়াচ্ছি যাতে এটি এমন একটি পর্যায়ে পৌঁছে যখন সংক্রমণের মাত্রা যথেষ্ট থাকবে, কিন্তু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকবে সীমিত। এই গবেষণার মাধ্যমে টিকা পরীক্ষার জন্য প্রথমবারের মতো মানবশরীরে কৃমি সংক্রমণের একটি মডেল তৈরি করা যাবে। কিন্তু গবেষকরা একই সাথে দেখছেন যে, এই পরজীবীদের কিভাবে ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা যায়।</p> <p>কল্পনা করে দেখুন, যদি আমরা আমাদের ইচ্ছেমতো এই কৃমিদের মধ্যে জিনগত পরিবর্তন এনে আমাদের প্রয়োজনমত কোনো উপাদান তৈরি করতে পারি। যেমন ধরুন, ইনসুলিন তৈরি করে কোনো ডায়াবেটিস রোগীকে সংক্রমিত করা। এই কৃমিগুলো তার শরীরে বছরের পর বছর থেকে ইনসুলিন উৎপাদন করবে এবং তার ফলে ওই রোগী তার রক্তে চিনির পরিমাণ আরো ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। যদি আমরা এই কৃমিদের নিজেদের কাজে ব্যবহার করতে পারি তাহলে এর প্রচুর সম্ভাবনা আছে। এই গবেষণায় স্বেচ্ছাসেবকদের ওপর খুব সামান্য কিংবা কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াই পড়ে না। আর চার মাস পর সাধারণ কিছু ওষুধপত্র খেলেই তাদের শরীর থেকে কৃমি দূর হয়ে যায়। যদিও কৃমি দ্বারা এই সংক্রমণের কথা শুনলে অদ্ভুত লাগতে পারে। কিন্তু এই গবেষণা সফল হলে কোটি কোটি মানুষ খুব বড় ধরনের উপকার পেতে পারে।</p> <p> </p>