<p style="text-align:justify">নারীদের মাসিকের সময় ব্যবহারের একটি পদ্ধতি মেন্সট্রুয়াল কাপ। রাবার বা সিলিকনের মতো নরম এবং নমনীয় উপাদান দিয়ে এটি তৈরি করা হয়। সাধারণত দেখতে ফানেলের মতো এই কাপের ওপরের অংশ খোলা এবং নিচের অংশ সরু থাকে। এটি ব্যবহারের জন্য দেহের অভ্যন্তরীণ অংশ, অর্থাৎ যোনিতে প্রবেশ করাতে হয়। মাসিকের সময় এতে রক্ত জমা হয়। নির্দিষ্ট সময় পরপর কাপ বের করে জমে থাকা রক্ত ফেলে দিতে হয়। ভালো করে পরিষ্কারের পর এই কাপ আবার ব্যবহার করা যায়।</p> <p style="text-align:justify">স্যানিটারি ন্যাপকিনের চেয়ে মেন্সট্রুয়াল কাপে বেশি পরিমাণে রক্ত জমা হয়। আর রক্ত ধুয়ে এই কাপ বারবার ব্যবহার করা যায় বলে অর্থনৈতিকভাবেও এটি লাভজনক।</p> <p style="text-align:justify">২০১৯ সালে মেডিক্যাল জার্নাল ল্যানসেটে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, মেন্সট্রুয়াল কাপ কিভাবে ব্যবহার করতে হয় তা একবার জানার পর থেকে ৭০ শতাংশ নারী এটি নিয়মিত ব্যবহার করছেন।</p> <p style="text-align:justify"><strong>মেন্সট্রুয়াল কাপের ইতিহাস</strong></p> <p style="text-align:justify">মেন্সট্রুয়াল কাপকে নতুন উদ্ভাবন মনে হলেও যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক স্বাস্থ্যবিষয়ক অনলাইন প্ল্যাটফরম ওয়েবএমডির তথ্য মতে, ১৮০০ সাল থেকেই এই কাপ রয়েছে। ১৮৬৭ সালে সর্বপ্রথম পেটেন্ট করা কাপটি ছিল রাবারের তৈরি।</p> <p style="text-align:justify">তবে বাণিজ্যিকভাবে এটি প্রথম পেটেন্ট করা হয় ১৯৩৭ সালে। লিওনা চালমারস নামে একজন আমেরিকান অভিনেত্রী সেই কাপের পেটেন্ট নিয়েছিলেন। সিনেমা জগতের রুটিনের সঙ্গে সামঞ্জস্যতার কথা চিন্তা করে নিজের জন্য তিনি এই কাপ বানান। তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় রাবারের সংকটের কারণে এটি উৎপাদন কঠিন হয়ে যায়।</p> <p style="text-align:justify">পরবর্তী সময়ে ১৯৬০ সালে নারীদের মাসিক-পণ্য উৎপাদনকারী বড় একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মিলে আবারও ওই কাপ বানানোর চেষ্টা করেন মিজ লিওনা। কিন্তু ভেতরে প্রবেশ করাতে হবে বলে সে সময়কার নারীরা এটি নিয়ে বিব্রতবোধ করেন এবং ব্যবহারে অনীহা দেখান। ফলে সেবারও এই কাপ আলোর মুখ দেখেনি।</p> <p style="text-align:justify">নতুন শতাব্দীতে এসে আবারও মেন্সট্রুয়াল কাপ তৈরি শুরু হয়। তবে এবার রাবারের পরিবর্তে আরো নরম উপাদান সিলিকন দিয়ে বানানো হয় কাপ। ফলে ভোক্তাদের আকৃষ্ট করতে সক্ষম হয় এটি।</p> <p style="text-align:justify">মেন্সট্রুয়াল কাপ ব্যবহারের ক্ষেত্রে পরিচ্ছন্নতাবিধি মেনে চলা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সে ক্ষেত্রে কাপ ব্যবহারের আগে গরম পানিতে সেদ্ধ করে ভালোমতো জীবাণুমুক্ত করা প্রয়োজন।</p> <p style="text-align:justify">খরচের দিক থেকে মেন্সট্রুয়াল কাপের সাশ্রয়ী হওয়ার বিষয়টি নিয়ে বলছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিভাগের চিকিৎসক রেহেনা আক্তার।</p> <p style="text-align:justify">তিনি বলেন, ‘প্রতি মাসে মেয়েদের ছয় থেকে সাত দিন মাসিক হলে প্যাডের পেছনে অনেক টাকা খরচ পড়ে। কিন্তু একটি কাপ পাঁচ থেকে ১০ বছর ব্যবহার করা সম্ভব। ফলে এটা অনেক বেশি অর্থসাশ্রয়ী। মেন্সট্রুয়াল কাপ পরিবেশবান্ধব, সাশ্রয়ী, নরম এবং স্বাস্থ্যকর।’</p> <p style="text-align:justify">গবেষণা বলছে, জরায়ু মুখে লেগে থাকার কারণে অন্যান্য মাসিক-পণ্যের চেয়ে মেন্সট্রুয়াল কাপ থেকে রক্ত লিক করা বা গড়িয়ে পড়ার প্রবণতাও তুলনামূলক কম। আর প্যাড ব্যবহার করলে র‍্যাশ হওয়াসহ অন্যান্য যে ধরনের সমস্যা হয়, কাপের ক্ষেত্রে সে ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে না।</p> <p style="text-align:justify"><strong>বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে মেন্সট্রুয়াল কাপ</strong></p> <p style="text-align:justify">একই সঙ্গে স্বাস্থ্যকর এবং অর্থনৈতিকভাবে সাশ্রয়ী হওয়ায় ‘পিরিয়ড পোভার্টি’ বা ‘মাসিক দারিদ্র্যতার সম্মুখীন হওয়া দরিদ্র দেশগুলোতে মেন্সট্রুয়াল কাপ একটি টেকসই সমাধান হতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশে এই চিত্র একেবারেই ভিন্ন।</p> <p style="text-align:justify">দেশটির শহরের বস্তিতে থাকা নারীদের মাসিকের স্বাস্থ্যবিধি ব্যবস্থাপনা নিয়ে এ বছর এপ্রিলে জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ) একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে।</p> <p style="text-align:justify">এই জরিপে অংশ নেওয়া নারীদের কেউই মেন্সট্রুয়াল কাপ কিংবা ট্যাম্পন সম্পর্কে আগে কখনো শোনেননি। শুধু নিম্নবিত্ত নয়, সার্বিকভাবেই মাসিক নিয়ে বাংলাদেশে সচেতনতা খুবই কম। ‘ন্যাশনাল হাইজিন সার্ভে ২০১৮’ অনুযায়ী মাত্র ৪৩ শতাংশ কিশোরী প্যাড ব্যবহার করে। প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে এই হার ২৯ শতাংশ। সেই তুলনায় কাপের ব্যবহার অনেকটাই নতুন, আর এ নিয়ে সচেতনতাও সীমিত।</p> <p style="text-align:justify">সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, রাজধানীর অভিজাত এলাকার নির্দিষ্ট কিছু জায়গা বাদে স্থানীয় ফার্মেসিগুলোর মেন্সট্রুয়াল কাপ রাখা হয় না। অনেক দোকানি এই কাপ সম্পর্কে সচেতনও না। একই অভিজ্ঞতা ব্যবহারকারীদেরও। বেশ কিছু অনলাইন পেইজে মেন্সট্রুয়াল কাপ বিক্রি করা হয়।</p> <p style="text-align:justify">বাংলাদেশে শুরুর দিকে অনলাইনে মেন্সট্রুয়াল কাপ বিক্রেতাদের একজন নাহিদ দীপা। ২০১৮ সাল থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ‘মাম্বল’ নামের একটি পেজে তিনি এই কাপ বিক্রি করছেন। ভারত ও ডেনমার্ক থেকে এগুলো সংগ্রহ করেন তিনি।</p> <p style="text-align:justify">নিজের অভিজ্ঞতা থেকে তিনি জানান, আগের তুলনায় মেন্সট্রুয়াল কাপ ব্যবহারের প্রবণতা বাড়ছে। আগে ঢাকার বাইরে বিক্রি কম হলেও এখন ঢাকা ও ঢাকার বাইরে প্রায় সমানতালে বিক্রি হচ্ছে।</p> <p style="text-align:justify">একই রকম প্রতিক্রিয়ার কথা জানান ‘রূপের রহস্য’ নামের আরেটি অনলাইন পেজের কর্ণধার শফিউল ইসলাম। তাদের পেজে বিক্রি করা মেন্সট্রুয়াল কাপ আমদানি করা হয় চীন থেকে। বাংলাদেশে ‘অতটা পরিচিত না হওয়ায়’ মাসে দেড় শ থেকে ২০০টি কাপ বিক্রি হয় বলে জানান তিনি। সিলিকন, মোটা-পাতলা এবং ব্যবহারের মেয়াদের ওপর নির্ভর করে এই দাম সাড়ে ৫৫০ থেকে ৯৫০ টাকা পর্যন্ত হয়।</p> <p style="text-align:justify">সূত্র : বিবিসি</p>