<p>সন্তানকে বড় করতে গিয়ে অনেক সময় কড়া শাসনের মধ্যে রাখেন বাবা-মা। অনেক সময় শিশু কথা না শুনলে, পড়াশোনা না করলে, কিংবা পরীক্ষায় আশানুরূপ ফল না করলে মা-বাবার ধমক শুনতে হয়। কখনো কখনো হাতও উঠে যায় ছোটদের ওপর। কিন্তু এ শাসন কি শিশুদের জন্য আদৌ ভালো কিছু বয়ে আনে?</p> <p>বিশেষজ্ঞদের মতে, সন্তানের আচরণ, পড়াশোনা, বেড়ে ওঠা সব ক্ষেত্রেই বাবা-মায়ের প্রত্যাশা থাকে। সেই প্রত্যাশা পূরণ না হলে হতাশ হন বাবা-মা। সেই হতাশা থেকে সন্তানকে বকাঝকা বা মারধরও করেন। কিন্তু শিশুকে বকলে বা শাসন করলেই যে তার পরিবর্তন হবে সেটা ভাবাও বোকামি। যতক্ষণ না সে নিজের ভুল-ঠিক উপলব্ধি করতে পারছে, ততক্ষণ কিন্তু তার আচরণ বদলাবে না।</p> <p>ভারতীয় পেরেন্টিং কনসালট্যান্ট পায়েল ঘোষের মতে, শাস্তি দিয়েই কিন্তু শিশুকে শোধরানো সম্ভব নয়। অভিভাবকের উচিত যদি শিশু ভুল করে তাহলে সে কোথায় ভুল করেছে, কেন ভুল করেছে, সেটি বোঝানো। শিশু বোঝার আগেই যদি ধমক খায় তাহলে কিন্তু সে শোধরাবে না। বরং তার মনে ভয় তৈরি হবে। সে ধীরে ধীরে বিভিন্ন কথা লুকাতে শুরু করবে।</p> <p><strong>শাসন করলে শিশুর ওপর কী প্রভাব পড়তে পারে</strong></p> <p>পড়াশোনা বা অন্য কোনো কারণে বকাবকি বা মারধরে শিশুর মনে প্রভাব ফেলতে পারে। এ ক্ষেত্রে শিশু হয় নিজেকে গুটিয়ে নিতে পারে, না হয় তার মধ্যে রাগ, ক্ষোভ বা হতাশার জন্ম হতে পারে। এর প্রভাব শিশুর ভবিষ্যৎ জীবনেও পড়তে পারে। তার ব্যক্তিত্ব গঠনে সমস্যা হতে পারে। রাগ, ক্রমাগত ক্ষোভ জমতে থাকলে, একসময় সে ধ্বংসাত্মক পথে হাঁটতে পারে। নিজের ক্ষতি করে ফেলার সম্ভাবনাও সে ক্ষেত্রে উড়িয়ে দেওয়া যাওয়া না। আবার কোনো কোনো শিশু আত্মবিশ্বাসের অভাবে নিজেকে গুটিয়েও নিতে পারে। </p> <p>পায়েল বলেন, ক্রমাগত ধমক বা মার খেলে শিশুরা অনেক সময় প্রতিহিংসা পরায়ণ হয়ে ওঠতে পারে। কারণ, সে বড়দের সামনে কিছু করতে পারছে না। তার জমে থাকা সেই রাগ, ক্ষোভ সে অপেক্ষাকৃত দুর্বলের উপর দেখাতে পারে।</p> <p><strong>ভীতি জন্মাবে</strong></p> <p>স্কুল যাওয়া, পড়াশোনা, পরীক্ষা, এগুলো ধীরে ধীরে শিশুর জীবনে প্রবেশ করে। তবে যদি পড়া নিয়ে বেশি চাপ দেওয়া হয়, অঙ্ক ভুল করলে, নামতা ভুল বললে প্রচণ্ড বকবকি করা হয়, তবে কিন্তু শিশুর মনে আগ্রহ তৈরি হওয়ার বদলে ভীতি জন্মাতে পারে।</p> <p><strong>উদ্বেগ</strong></p> <p>অতিরিক্ত শাসন শিশুর মনে আতঙ্ক তৈরি করতে পারে। যা থেকে একসময় উদ্বেগ তৈরি হওয়া অস্বাভাবিক নয়। শিশু ভুল করবে, শিখবে। তারও নিজস্ব জগৎ আছে। সেই জগতে সে যদি প্রতি মুহূর্তে শাস্তির ভয় পায়, তা এক সময় মানসিক সমস্যা তৈরি করতে পারে। বাবা-মায়ের প্রত্যাশা পূরণের চাপ, বকাবকি, শাস্তির ভয় শিশুমনে গভীর রেখাপাত করতে পারে। যার ফলে উদ্বেগের সমস্যা হওয়াও অস্বাভাবিক নয়। বকাবকির ভয়ে সে সত্যি কথা চেপে যাবে। আবার নিজেকে বাঁচাতে মিথ্যে কথা বলতে শিখতে পারে।</p> <p><strong>সিদ্ধান্ত ও মেলামেশায় সমস্যা</strong></p> <p>কোনো কোনো বাবা-মা কথায় কথায় শিশুর ভুল ধরেন। তাদের মতামতের তোয়াক্কা করেন না। অনেক সময় অন্য শিশুদের সঙ্গে তুলনা টানেন। এই ধরনের বিষয়গুলি শিশুর ভবিষ্যৎ জীবনে খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে। এতে শিশুর মধ্যে আত্মবিশ্বাসের অভাব দেখা দিতে পারে। অন্যের সঙ্গে তুলনা টানার প্রবণতায়, শিশুর মধ্যে নিজেকে গুটিয়ে নেওয়ার প্রবণতা তৈরি হতে পারে।</p> <p><strong>অভিভাবকের করণীয়</strong></p> <p>দুষ্টুমি করলে, কথা না শুনলে সন্তানকে বোঝাতে হবে। পড়াশোনায় যদি শিশু অমনোযোগী হয় বা খারাপ ফল করে, তা হলে তার কারণ খোঁজার চেষ্টা করতে হবে। পড়াশোনা করতে গিয়ে সন্তানের কোথাও কোনো অসুবিধা হচ্ছে কি না, সেটা আগে জানতে হবে। যদি দেখা যায়, এমনিতে সমস্যা নেই কিন্তু সে অমনোযোগী, সে ক্ষেত্রে কেন মনোযোগের অভাব হচ্ছে তা জানার চেষ্টা করতে হবে। অনেক সময় শিশুরা খুব ছটফটে হয়। সে ক্ষেত্রে তাদের যদি মাঠে বা খোলা জায়গায় নিয়ে যাওয়া যায়, সে আনন্দে থাকবে।</p> <p>পড়ানোর সময় শিশুর অন্যমনস্কতার কারণ খুঁজতে হবে। পড়ার সময় একটা কিছু ভুল বললে ধৈর্য হারিয়ে চড়-থাপ্পড় দিচ্ছেন মা। কিন্তু সে সময় তার পড়াশোনার শক্তি আছে কি না, তা দেখতে হবে। সে হয়তো সকালে স্কুলে যায়। এ দিকে দিনভর কাজের পর মা বা বাবা যখন তাকে পড়াতে বসাচ্ছেন, তখন রাত হয়ে যাচ্ছে। তার মন নেই পড়ায়, চোখে ঘুম। মা-বাবাকেও বুঝতে হবে, তাদের প্রত্যাশা আসলে বাস্তবসম্মত কি না।</p> <p>সূত্র: আনন্দবাজার</p>