<p>আদিকাল থেকে চুলের যত্নে আয়ুর্বেদিক তেল ব্যবহার হয়ে আসছে। চুল ঘন, কালো ও লম্বা করতে এই তেলের জুড়ি নেই। পরামর্শ দিয়েছেন হার্বোকেয়ারের সিইও ও আয়ুর্বেদিক চিকিত্সক<strong> ডা. শরিফুল ইসলাম, </strong>লিখেছেন মোনালিসা মেহরিন। চুলের জন্য আয়ুর্বেদ উপাদান অনেক উপকারি। আয়ুবেদ উপাদানের বড় বৈশিষ্ট্য হলো এতে কোনো রাসায়নিক ব্যবহূত হয় না। প্রাকৃতিক বিভিন্ন ফুল, ফল ও বাকলের নির্যাস থেকে তৈরি করা হয় আয়ুর্বেদিক তেল। নিয়মিত ব্যবহারে এটা চুলে ভেতর থেকে পুষ্টি যোগায়। এতে চুল ঘন, লম্বা ও কালো হয়। চুলের গোড়া মজবুত করতে সাহায্য করে। ফলে চুল পড়ার হার দ্রুত কমে। এসব নানা উপকারের জন্য আদিকাল থেকেই নারীদের কাছে আয়ুর্বেদিক তেল অনেক জনপ্রিয়।</p> <p>এখন শীতকাল। শীতের শুষ্কতা ও বাতাসের ধুলা-ময়লার কারণে মাথার ত্বকে খুশকির প্রবণতা বাড়ে। অতিরিক্ত শুষ্কতা শুধু খুশকি বাড়ায় তাই নয়, চুলের গোড়া নরম করে। এজন্য চুল পড়ার হার বৃদ্ধি পায়। চুলকেও শুষ্ক ও রুক্ষ করে তোলে। এসব থেকে দূরে থাকতে আয়ুর্বেদিক তেল ব্যবহার করতে পারেন। ব্রাহ্মী, শঙ্খপুষ্পী, ভৃঙ্গরাজ, আমলা, সূর্যমুখী, যষ্টিমধু এবং শঙ্খভস্মের মতো ভেষজ বৃক্ষ থেকে পাওয়া আয়ুর্বেদিক তেল চুলের সমস্যাগুলোকে দূরে রাখতে সাহায্য করে। ফলিকলের শক্তি বাড়ায়। চুল হয় মজবুত</p> <p><strong>ভৃঙ্গরাজ</strong><br /> চুলের যত্নে ভৃঙ্গরাজ তেল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। নিয়মিত চুলের গোড়ায় ভৃঙ্গরাজ তেল মালিশ করতে পারেন। এতে চুল ঘন ও লম্বা হবে। চুল পড়া ও পাতলা চুলের সমস্যা থেকে বাঁচতে ভৃঙ্গরাজ তেলে উপকার পাবেন। চুলের জেল্লা বৃদ্ধি করে এই তেল। চুলের জন্য উপকারী ভিটামিন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও আয়রনের মতো উপাদানগুলোর প্রাকৃতিক আধার হচ্ছে ভৃঙ্গরাজ। চুল বৃদ্ধি, চুল পড়া কমানো, ফলিকলকে সক্রিয় করা, চুলের গোড়ায় রক্ত সঞ্চালন বৃদিসহ নানা উপকারের জন্য এটি গ্রাম এলাকায় চুলের রাজা নামেও পরিচিত।</p> <p><strong>শিকাকাই</strong><br /> চুলের জন্য এই ফল। পানিতে মেশালে ফেনা তৈরি হবে। আয়ুর্বেদিক শ্যাম্পু হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। মাথার ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য এবং চুলপড়া রোধে বেশ কার্যকরী। এটি ব্যবহারে মাথার ত্বকের প্রাকৃতিক তেল উঠে যায় না। শিকাকাই পাউডার সারা রাত পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। চুল পরিষ্কারে এটি ব্যবহার করুন। রিঠার মতোই এটি চুলে ব্যবহার করুন। এক দিন পর পর ব্যবহার করুন; পার্থক্যটা নিজেই বুঝতে পারবেন।</p> <p><strong>নারকেল</strong><br /> নারকেল তেল তো উপকারীই, তবে এর সঙ্গে আরো কিছু উপকারী উপকরণ সংযোজন করে নিতে পারেন। নারকেল তেলের সঙ্গে সমপরিমাণ নিমপাতা, অ্যালোভেরা মণ্ড ও মেথি চুলায় অল্প আঁচে জ্বাল দিয়ে নিন। তেল ছেঁকে তুলে রাখুন বয়ামে। এই তেল এক-দুই মাস পর্যন্ত ব্যবহার করা যায়। এতটা করার সময় না পেলে নারকেল তেলের সঙ্গে সমপরিমাণ গোটা কালিজিরা ও মেথি মিশিয়ে নিয়ে বয়ামে তুলে রাখতে পারেন। এটিও এক-দুই মাস ব্যবহারের উপযোগী থাকে।</p> <p><strong>আমলকী</strong><br /> আমলকী ফুটিয়ে তার রস চুলের গোড়ায় দিলে তা মজবুত হয়। চুলে অল্প বয়সেই পাকা হয়ে যাওয়ার সমস্যা থেকে মুক্তি মেলে আমলকীর রসে। এ ছাড়া চুল পড়া বন্ধ করে। খুশকি কমিয়ে দেয় আমলকীর রস। এমনকি উকুনও কমিয়ে দেয় এই রস।</p> <p><strong>মেথি</strong><br /> এটি একটি সাধারণ রান্নার উপাদান। মেথি সারা বছরই পাওয়া যায়। মেথির অসাধারণ ঔষধি গুণাবলি রয়েছে এবং চুলের জন্য এটি অত্যন্ত উপকারী। এতে আয়রন, প্রোটিন এবং প্রয়োজনীয় পুষ্টি রয়েছে, যা চুলকে পুষ্টি দেয় এবং বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এতে নিকোটিনিক এসিড পাওয়া যায়, যা খুশকি ও চুল পড়া কমায়। মেথিতে ভিটামিন ‘এ’, ‘সি’, ‘কে’, ফলিক এসিড, ফ্ল্যাভোনয়েড ও স্যাপোনিনে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং অ্যান্টি-ফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা চুলের শুষ্কতার মতো মাথার ত্বকের সমস্যা নিরাময় করতে সহায়তা করে। এটি  টাক পড়া এবং চুল পাতলা হয়ে যাওয়াও রোধ করে। মেথি চুলের দ্রুত ও স্বাস্থ্যকর বৃদ্ধির জন্য চুলের ফলিকলকেও পুষ্ট করে।</p> <p><strong>ঘৃতকুমারী</strong><br /> অ্যালোভেরা চুলের বিভিন্ন চিকিত্সায় কাজে লাগে। এতে ফ্যাটি এসিড উপাদান রয়েছে, যা মাথার ত্বকের সংক্রমণ এবং শুষ্কতা নিরাময় করে। অ্যালোভেরায় ভিটামিন ‘এ’, ‘সি’ এবং ‘ই’ রয়েছে, যা চুলের বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করে এবং চুলের ফলিকলগুলোকে ভেতর থেকে মেরামত ও পুনরুজ্জীবিত করে। এটি ভিটামিন ‘বি’ ১২ এবং ফলিক এসিডের একটি সমৃদ্ধ উত্স, যা চুল পড়া রোধ করতে পারে এবং মাথার ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা যেমন চুলকানি, সেবোরিক ডার্মাটাইটিস এবং অতিরিক্ত তেল নিঃসরণকে কমাতে পারে। এ ছাড়া অ্যালোভেরায় শীতল করার গুণাবলি রয়েছে, যা মাথার ত্বককে হাইড্রেট এবং ময়েশ্চারাইজ করে।</p>