<p>শিশুরা উৎসাহ পেলে কাজে আরো আগ্রহী হয়। এ জন্য শিশুদের যেকোনো ভালো কাজে তাদের উৎসাহ দিন। এ বিষয়ে লিখেছেন চাইল্ড এক্সপার্ট <strong>মেরিনা চৌধুরী</strong><br /> অফিসে যাওয়ার জন্য তাড়াতাড়ি প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তাহমিনা। এ সময় তাঁর তিন বছরের শিশুকন্যা রিংকুকে বলেন, যাও তো সোনা, বিছানার ওপর থেকে আমার ব্যাগটি এনে দাও। তাহমিনা যে ব্যাগটির চেইন লাগাননি, খেয়াল ছিল না। শিশুটি  ব্যাগটি আনার সময় হাত থেকে ব্যাগটি পড়ে সব জিনিস ছত্রখান। এটি দেখে রিংকু ভয়ে চিৎকার করে কেঁদে ওঠে। ব্যস্ত তাহমিনা ব্যাগ গোছাবেন, না রিংকুর কান্না থামাবেন- বুঝতে পারছিলেন না। এমন পরিস্থিতিতে তাহমিনা কী করবেন? ধমক দিয়ে রিংকুর পিলে চমকে দেবেন, না থাপ্পড় লাগাবেন। এর কোনোটিই কিন্তু সুফল দেবে না।<br /> এতে রিংকু আরো জোরে চিৎকার শুরু করবে অথবা মাকেও আঘাত করতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে একজন মা কী করতে পারেন? অনেক মা হয়তো বলেন—এসো সোনা, এখনই তোমাকে একটি সুন্দর পুতুল কিনে দেব। মায়ের আদরের মিষ্টি কথায় আর পুতুল পাওয়ার আশায় শান্ত হয়ে অপেক্ষা করে।</p> <p>আজ একটি পুতুলের লোভে শিশুটিকে শান্ত করলেন। কিন্তু আগামীকাল কী করবেন বা তার পরদিন? আদতে এগুলোর কোনোটিই ঠিক নয়। শিশুকে কোনো দিন এ ধরনের উৎকোচের মতো কিছু দেওয়ার চেষ্টা করবেন না। বলতে হবে, এসো, আমরা দুজনে মিলে ব্যাগটি গুছিয়ে নিই। গোছানো হলে হাসিমুখে মেয়েকে শাবাশ দিন। বলুন, তুমি তো খুব ভালোভাবে আমাকে সাহায্য করেছ। তা ছাড়া অফিসে যাওয়ার আগে শিশুকে এমন কিছু কাজ দিন (যেটি ওর পক্ষে করা সম্ভব) এবং বলুন, তুমি এই কাজগুলো করে রাখবে। অফিসফেরত আপনি এসে দেখলেন—সে তা-ই করে রেখেছে। এতে খুশি হয়ে বললেন, তোমাকে আজকে শিশু পার্কে নিয়ে যাব। আপনাকে খুশি করতে পেরেছে, এতে সে-ও খুশি। সুতরাং শিশুকে লোভ দেখাবেন না। এতে সে লোভ অথবা উৎকোচের আশায় কাজ করবে। শিশুকে দিয়ে নিজের কাজ করতে দিন। তার খেলনা গুছিয়ে রাখা, রং পেনসিল ও ছড়ার বই গুছিয়ে রাখা। তাকে বলুন এগুলো তারই করণীয়।</p> <p>এ ছাড়া বাবার রুমাল, মানিব্যাগ এনে দেওয়ার মতো ছোট ছোট কাজ শিশুকে করতে দিন। কাজের পর প্রশংসা করুন এবং তাকে শাবাশ দিন, আদর করুন। এতে সে নিজেকে কাজের মানুষ হিসেবে ভাববে এবং আপনাকে খুশি করতে পেরেছে দেখে নিজেও গর্ব অনুভব করবে।<br /> তবে যেসব কাজে শিশুর অনাগ্রহ, তা জোর করে করাতে চেষ্টা করবেন না। এতে হিতে বিপরীত হবে। সে ক্ষেত্রে একটু কৌশলের আশ্রয় নিন। দুধ খেতে না চাইলে বলুন—তুমি তো লক্ষ্মী মেয়ে, এক চুমুকে দুধটুকু খেয়ে নাও। পাশের বাসার মিতু তো তোমার মতো দুধ খেতে পারে না। আমি চোখ বন্ধ করছি। আপনি চোখ খুলে দেখলেন শিশু দুধ খেয়ে শেষ করেছে, তৎক্ষণাৎ শাবাশ দিন।</p> <p>অনেক শিশুর মধ্যে ছোট থেকেই অর্থাৎ দু-তিন বছর বয়স থেকে একটু প্রতিবাদ ও বিদ্রোহ করার প্রবণতা দেখা যায়। ‘না’ শব্দটি খুব জোরেশোরে উচ্চারণ করে। স্কুলে যাওয়ার সময় শিশু নিজে নিজে জুতা পরতে পারলে শাবাশ দিন। এতে শিশুর আত্মবিশ্বাস গড়ে ওঠে। শিশু ‘না’ বললে অধৈর্য হবেন না বা হতাশ হবেন না। মনে রাখবেন, তাদের মনে আত্মবিশ্বাস আপনাকে গড়ে দিতে হবে।</p> <p>জেদি শিশুদের সঙ্গে বন্ধুত্বসুলভ মনোভাব নিয়ে আচরণ করুন। এতে সুফল পাবেন। দেখবেন, আস্তে আস্তে ওর স্বভাবের পরিবর্তন হয়েছে। অর্থাৎ শিশুকে সঠিকভাবে গড়ে তুলতে হলে একজন মা ও বাবাকে সহনশীল ও ধৈর্যশীল হতে হবে। তাহলে শিশু আপনার মতো করে গড়ে উঠবে। শিশুরা আমাদের শ্রেষ্ঠ সম্পদ। তাকে পরবর্তী জীবনের জন্য পরিপূর্ণভাবে তৈরি করা আমাদের দায়িত্ব।</p>