আমাদের বুকের ভেতর নিয়মিত হৃৎপিণ্ড স্পন্দিত হচ্ছে অবিরাম। কিন্তু নিয়মিত ঘটনায় যদি ছন্দঃপতন ঘটে তাহলেই বিপদ। অনিয়মিত হৃদস্পন্দন বা ‘এরিদমিয়া’ আর এট্রিয়াল ফিব্রিলেশন আজকাল বেশ হচ্ছে, আর তা আগেভাগে ধরা না পড়লে প্রাণ যাওয়াটাও বিচিত্র নয়। এ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য পালিত হয় বিশ্ব হৃদস্পন্দন সপ্তাহ।
বিজ্ঞাপন
এরিদমিয়ার কারণে প্রতিবছর মৃত্যু ঘটে ১৫-২০ শতাংশ মানুষের। হাতের মুষ্টি আকৃতি হৃৎপিণ্ড পাম্প করে রক্ত পৌঁছে দেয় সারা শরীরে। হার্টের চারটি প্রকোষ্ঠ, দুটি অলিন্দ আর দুটি নিলয়। প্রতিদিন এটি স্পন্দিত হয় এক লাখ বার। আর সারা শরীরে পাম্প করে সাত হাজার লিটার রক্ত।
হার্টের পেশল নিলয় দেয় রক্ত পাম্প করার শক্তি। হার্টের পাম্পকর্ম বা হৃদস্পন্দন পরিচালনা করে এক জটিল বিদ্যুৎ সিস্টেম। তাই এই বিদ্যুতের ব্যবস্থায় সমস্যা হলে হার্ট হারাতে পারে স্বাভাবিক ছন্দ। হার্টের এই স্বাভাবিক ছন্দের চ্যুতি হলে মনে হবে হঠাৎ যেন একটি স্পন্দন হারিয়ে গেল, নয়তো একটি স্পন্দন যোগ হলো। বুকের ভেতর শুরু হয় ছটফটানি। মনে হতে পারে খুব দ্রুত হচ্ছে স্পন্দন (চিকিৎসাবিদ্যায় টেকিকারডিয়া) বা খুব ধীর স্পন্দন (ব্রাডি কার্ডিয়া)।
আগাম লক্ষণ
মনে হলো বুকে হৃদযন্ত্র দৌড়াচ্ছে, বুকে ধুকপুক, পাখা ঝাপটানো, দ্রিমি দ্রিমি শব্দ। মনে হবে মূর্ছা যাচ্ছেন, মাথা ঝিমঝিম, মাথা হালকা ভাব আর প্রবল ক্লান্তি।
এবার সময় ডাক্তার দেখানোর
ডাক্তার বের করবেন কেন এমনটা ঘটছে আর কী করা উচিত।
উপসর্গ
পালপিটেশন: মনে হবে একটি স্পন্দন হারিয়ে গেছে, বুকে ছটপটানি, হচ্ছে ডিগবাজি।
বুক ধড়ফড়: ধাক্কা দিচ্ছে মনে হয়।
মাথা ঝিমঝিম, হালকা লাগে।
মূর্ছা যাওয়া, শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা আর আঁটসাঁট ভাব, দুর্বলতা, ক্লান্তি, দুশ্চিন্তা, ঝাপসা দৃষ্টি, ঘাম।
কী কারণে হতে পারে
♦ হৃদরোগ
♦ রক্তে ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্যহানি
♦ হার্ট অ্যাটাক, রক্ত চলাচল কমা, সংক্রমণ, জ্বর
♦ নির্দিষ্ট কিছু ওষুধের প্রভাব
♦ হার্টের বিদ্যুত্সংকেতে সমস্যা
♦ জোরালো আবেগ
♦ অ্যালকোহল, ধূমপান
ঝুঁকি কী কী
বয়স: বয়স বেশি হলে
জিন: পরিবার পরম্পরা
জীবনযাপন: অ্যালকোহল, ধূমপান, মাদক বাড়ায় ঝুঁকি
অন্য অসুখ: উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, লো ব্লাড সুগার, স্থূলতা, স্লিপ এপনিয়া।
পরিবেশ: বায়ুদূষণ।
কী করে হয় রোগ নির্ণয়
♦ ইকোজি
♦ হলটার মনিটার
♦ ইকো
♦ কার্ডিয়াক কেথেটারাইজেশন
♦ ইলেকট্রোফিজিওলজি স্টাডি।
জটিলতা
চিকিৎসা না হলে একটি ছন্দচ্যুত হৃদস্পন্দন থেকে হতে পারে আলঝেইমারস আর ডিমেনশিয়া, হার্টফেইলিওর, স্ট্রোক, কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট।
প্রতিরোধ
সব সময় প্রতিরোধ করা যায় না, তাই নিয়মিত চেকআপ দরকার। বদলাতে হবে জীবনশৈলী। ডায়েট হতে হবে স্বাস্থ্যসস্মত। খেতে হবে প্রচুর ফল, সবজি, মাছ, উদ্ভিজ্জ খাবার। পাশাপাশি বর্জন করতে হবে স্যাচুরেটেড ফ্যাট আর ট্রান্সফ্যাট। সামলে রাখতে হবে রক্তচাপ আর সুগার। বর্জন করতে হব ধূমপান আর মদপান।
লেখক : সাবেক অধ্যক্ষ, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ