ঢাকা, রবিবার ২০ জুলাই ২০২৫
৫ শ্রাবণ ১৪৩২, ২৪ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, রবিবার ২০ জুলাই ২০২৫
৫ শ্রাবণ ১৪৩২, ২৪ মহররম ১৪৪৭
সাক্ষাৎকার

যান্ত্রিকীকরণই কৃষিতে অবারিত সাফল্য এনেছে

কালের কণ্ঠ অনলাইন
কালের কণ্ঠ অনলাইন
শেয়ার
যান্ত্রিকীকরণই কৃষিতে অবারিত সাফল্য এনেছে
ড. আনিসুর রহমান

স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের জনসংখ্যা ছিল প্রায় সাড়ে ৭ কোটি। তখন প্রতি বছর দেশে ছিল প্রচণ্ড খাদ্যাভাব। ক্ষুধা দুর্ভিক্ষে মারা যেত অসংখ্য মানুষ। বর্তমানে দেশের জনসংখ্যা প্রায় ১৮ কোটি ছাড়িয়ে গেছে।

বহুগুণে কমেছে আবাদী কৃষি জমির পরিমাণও। তারপরও বাংলাদেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণের কারণেই এসেছে কৃষির এত সাফল্য। যে লাঙল-জোয়াল আর ‘হালের বলদ’ ছিল কৃষকের চাষাবাদের প্রধান উপকরণ সে জায়গা এখন দখল করে নিয়েছে  ট্রাক্টর, পাওয়ার টিলার।
কৃষিতে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে চাষাবাদের কারণে একদিকে যেমন সময়, শ্রম ও অর্থ সাশ্রয় হচ্ছে তেমনি ফসলের উৎপাদনও বেড়েছে। ফলে আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকের। কেবল জমি চাষই নয়, জমিতে নিড়ানি, সার দেওয়া, কীটনাশক ছিটানো, ধান কাটা, মাড়াই, শুকানো ও ধান থেকে চাল সবই আধুনিক যন্ত্রের মাধ্যমে। ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি)-এর হিসাব মতে, বর্তমানে দেশের  মোট আবাদি জমির ৯০ ভাগ চাষ হচ্ছে যান্ত্রিক পদ্ধতিতে।
তবে অন্যান্য কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহারে এখনো অনেক পিছিয়ে দেশের কৃষকরা। কিছু কিছু সমস্যার কারণে যান্ত্রীকীকরণের বাধা তৈরি হয়েছে। দৈনিক কালের কণ্ঠের কাছে একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) কৃষি প্রকৌশল ও কারিগরি অনুষদের কৃষি শক্তি ও যন্ত্র বিভাগের গবেষক ও সহযোগী অধ্যাপক ড. আনিসুর রহমান। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন দৈনিক কালের কণ্ঠের বাকৃবি প্রতিনিধি আবুল বাশার মিরাজ

কালের কণ্ঠ : কৃষিতে আধুনিক প্রযুক্তি কেন ব্যবহার করব আমরা?
ড. আনিসুর রহমান : দিন দিন আমাদের জমি কমে যাচ্ছে, কিন্তু খাদ্যের চাহিদা বাড়ছে।

সময়, শ্রম ও অর্থ সাশ্রয় উপুর্যপুরি কৃষিতে বিপ্লব ঘটাতে চাষাবাদের সব পর্যায়ে আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করতে হবে।

কালের কণ্ঠ : বাংলাদেশের কৃষিতে কি কি যন্ত্র ব্যবহার হচ্ছে? 
ড. আনিসুর রহমান : সেচ পাম্প, ট্রাক্টর, থ্রেসার, কম্বাইন হারভেস্টর, রিপার, ট্রান্সপ্লানটার, উইডার প্রভৃতি। তবে শুধু যন্ত্র আবিষ্কার করণেই হবে না, কৃষক যদি সেটি গ্রহণ না করে তাহলে তো এটা কোনো কাজে আসবে না। কাজেই উদ্ভাবন বা নতুন আবিষ্কার এমন হতে হবে যেন তা ক্ষুদ্র ও মাঝারি কৃষক সহজে ব্যবহার করতে পারে সেদিকেও আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে।

কালের কণ্ঠ : কৃষি যন্ত্রের অত্যাধিক দাম, কৃষক তো কিনতেই পারছেন না, তাহলে যান্ত্রিকীকরণ হবে কিভাবে?
ড. আনিসুর রহমান : কিছু কিছু যন্ত্রের দাম সত্যিই অনেক বেশি। কিন্তু সব যন্ত্র যে সবারই কিনতে হবে, তা কিন্তু নয়। ধরুন, মিনি কম্বাইন হারভেস্টর, এটির দাম ৭ থেকে ৮ লাখ। এটি দিয়ে একটি গ্রামের চাহিদা মেটানো সম্ভব। সমবায় পদ্ধতিতে এটি কিনে কৃষকরা ব্যবহার করতে পারে। এছাড়াও সরকারের কৃষি ভতুর্কিও চালু আছে এ যন্ত্রগুলো কেনার জন্য, সেটিও গ্রহণ করতে পারেন তারা।

কালের কণ্ঠ : কৃষি যন্ত্রের ভতুর্কির বিষয়ে যদি কিছু বলতেন?
ড. আনিসুর রহমান : বর্তমানে সরকারের ভর্তুকিতে কৃষি যন্ত্রপাতি জনপ্রিয়করণ প্রকল্প চালু রয়েছে। যন্ত্র আর অঞ্চলভেদে ২৫ থেকে ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত ভতুর্কি দিচ্ছে সরকার। তবে কৃষি ভতুর্কি সঠিক কৃষক পর্যন্ত পৌঁছাচ্ছে কিনা সেটাও সরকারের নজদারিতে রাখা দরকার।

কালের কণ্ঠ : পোস্ট হারভেস্ট ক্ষতি পোষাতে কিভাবে প্রযুক্তি ব্যবহার করা যেতে পারে?
ড. আনিসুর রহমান : গবেষণায় উঠে এসেছে গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরে চাল, গম, ভুট্টা, পেঁয়াজ, আলু, সব ধরনের ফল ও সবজির উৎপাদন ছিল প্রায় ৬ কোটি টন। এসব খাদ্যশস্য উৎপাদক থেকে শুরু করে ভোক্তা পর্যায়ে পৌঁছাতেই নষ্ট হয়েছে প্রায় ৭৭ লাখ ৫০ হাজার টন। যার বাজার মূল্য প্রায় ৩০ হাজার ৪ শত কোটি টাকা। কিন্তু প্রযুক্তি ব্যবহার করে এটি করতে পারলে এ ক্ষতি অর্ধেকে আনা যাবে। তবে আমাদের এখন শুধু খাদ্য শস্য উৎপাদনেই মনোযাগী নয় বরং খাদ্য শস্য সংরক্ষণেও মনোযোগী হতে হবে। দেশের এ অপচয় রোধ করা গেলে খাদ্যশস্য আমদানি শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা সম্ভব বলেও মনে করেন এই গবেষক।

কালের কণ্ঠ : খাদ্যশস্যের এ অপচয় কিভাবে রোধ করা যেতে পারে?
ড. আনিসুর রহমান : খাদ্যশস্যের অপচয় দেশের প্রবৃদ্ধিকে খেয়ে ফেলছে। অপচয়ের মাধ্যমে মানুষের অধিকার ও খাদ্য নিরাপত্তাকে বাধাগ্রস্ত করছে। খাদ্যশস্যের এ ধরনের অপচয় খাদ্য নিরাপত্তার জন্য যেমন হুমকি, তেমনি খাদ্য অধিকারকেও বঞ্চিত করছে। সার্বিকভাবে পুষ্টি নিরাপত্তাকে করছে বাধাগ্রস্ত করছে। আর দেশের অর্থ ও সম্পদের অপচয়ও হচ্ছে। খাদ্যের এ অপচয়রোধে রাষ্ট্রের উদ্যোগের পাশাপাশি সামাজিক আন্দোলন প্রয়োজন। শস্য সংরক্ষণ ও পরিবহনের ক্ষেত্রে ছোট ছোট প্রযুক্তি দ্রুত কৃষকের কাছে পৌঁছাতে হবে। আর কৃষকের ভর্তুকি বাড়াতে হবে।

কালের কণ্ঠ : কৃষি যন্ত্রের প্রদর্শনী এ ক্ষেত্রে কিভাবে ভূমিকা রাখতে পারবে?
ড. আনিসুর রহমান : অবশ্যই, কৃষি প্রযুক্তি ও যন্ত্রের ব্যবহার এক্ষেত্রে ব্যাপক ভুমিকা রাখতে পারবে। আর সেটি হচ্ছে না তাও বলা যাবে না। তবে একটি বিষয় গ্রাম পর্যায়ে সে প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করতে হবে। কেবল তখনি এর সুফল কৃষকরা পাবেন।

কালের কণ্ঠ : মেকানাইজেশন ভিলেজ কৃষির যান্ত্রিকীকরণে কতখানি ভ‚মিকা রাখতে পারবে বলে মনে করেন?
ড. আনিসুর রহমান : সত্যি কথা পরীক্ষামূলক মেকানাইজেশন ভিলেজ কৃষিতে বিপ্লব ও নব দিগন্ত উম্মোচন করছে। মেকানাইজেশন ভিলেজে ধান উৎপাদনে কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে কৃষক বীজ, সার ও শ্রমিক খরচ সাশ্রয় করছে। ধানে উৎপাদন খরচ কমেছে ৩০ থেকে ৪০ ভাগ। কৃষক ধানের অধিক ফলন পেয়ে লাভবান হচ্ছেন। প্রচলিত পদ্ধতিতে যে জমিতে ধান রোপনে ১২ জন শ্রমিকের ৫ ঘন্টা লাগতো সেখানে এ পদ্ধতিতে ২ জন শ্রমিক মাত্র দু’ ঘণ্টায় সে ধান রোপণ করেছেন। এ ছাড়াও উইডার, দানাদার ইউরিয়া প্রয়োগ যন্ত্র ও ধান কাটার রিপার ব্যবহার করে ধান উৎপাদনের খরচ কমেছে প্রায় ৪০ ভাগ। বাংলাদেশের সকল ইউনিয়নে এটি করতে পারলে এর সুফল আর বিস্তৃত হবে বলে আমি করি।

কালের কণ্ঠ : কৃষি ক্ষেতে ড্রোনের ব্যবহার সম্পর্কে কিছু বলবেন কি?
ড. আনিসুর রহমান : সাধারণত আপনার চোখ যতদূর যাবে আপনি তার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। এ ছাড়া সময়েরও একটা ব্যাপার আছে। এই দুটি বিষয়ের উপর নির্ভর করবে আপনি দিনে আপনার বাগানের নির্দিষ্ট কতটুকুর উপর নজর রাখতে পারবেন। কিন্তু ধরুন বাগানের অন্য কোনো অংশে আপনার যাওয়া হলো না আর সেখানে কোনো সমস্যা হয়ে গেল, এখন আপনি কি করবেন। এক্ষেত্রে ড্রোন ব্যবহার করতে পারবেন। এর মাধ্যমে খামারের বেড়া কোথাও ভেঙে গেল, কোথায় পানি কমে ফসল শুষ্ক হয়ে গেছে, খামারের কোন অংশে ফসল কম হয়েছে অথবা কোথায় মাটির চেহারা দেখতে কেমন সবই উঠে আসবে। এক কথায় ড্রোনের ব্যবহার কৃষির চেহারা বদলে দিতে পারে।

কালের কণ্ঠ : শ্রমিক সংকট নিরসনে যান্ত্রিকীকরণের বিষয়ে যদি কিছু বলতেন?
ড. আনিসুর রহমান : কৃষি শ্রমিকের একটি বড় অংশ শিল্প ও পরিবহন খাতে স্থানান্তরিত হচ্ছে এবং অনেক শিক্ষিত বেকার যুবকরা শহরমুখী হয়ে যাচ্ছে। শ্রমিক সংকট ও কৃষি উৎপাদনশীলতা ধরে রাখতে হলে কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণের বিকল্প নেই। যেভাবে একদিকে কৃষি জমির পরিমাণ দিন দিন কমছে, অন্যদিকে কৃষি শ্রমিক শহরমুখী হচ্ছে, সেক্ষেত্রে শুধু উন্নত জাত ও সার ব্যবহার করে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা ধরে রাখা সম্ভব হবে না। সেজন্য ফসল উৎপাদন, ধান কাটা ও কর্তন পরবর্তী কাজগুলোয় সঠিক যন্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে অপচয় রোধ করা সম্ভব বলে আমি মনে করি।

কালের কণ্ঠ : কৃষির অন্য সেক্টরে মেকানাইজেশনে এখনো পিছিয়ে আছে, এ বিষয়ে কি পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে বলে আপনি মনে করেন?
ড. আনিসুর রহমান : কৃষি বলতে শুধু শস্য উৎপাদন নয়। মৎস্য, লাইভস্টক প্রভৃতি কৃষি সেক্টরের মধ্যেই পড়ে। সকল সেক্টরেই যান্ত্রিকীরণ দরকার। বহিবিশ্ব সকল সেক্টরেই বিষয়টি এগিয়েছে। বাংলাদেশের মতো কৃষি প্রধান দেশে আমাদের এ বিষয়টি আরো বেশি গুরুত্ব দিলে কৃষিতে আমাদের আমূল পরিবর্তন আসবে বলে আমার মনে হয়।

কালের কণ্ঠ : বিসিএসে কৃষি প্রকৌশলী (টেকনিক্যাল ক্যাডারে) নিয়োগের দাবি গ্রাজুয়েটদের, এটা কতটা যৌক্তিক বলে মনে করেন আপনি?
ড. আনিসুর রহমান : খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারের আরো বহুলাংশে কৃষি যন্ত্রাংশের ওপর বিশেষ জোর দিতে হবে। যা বর্তমান সরকারের অগ্রগণ্য বিষয়ও বটে। সেটা করতে হলে অবশ্যই প্রতিটি উপজেলায় দক্ষ কৃষি প্রকৌশলী এবং সেই সঙ্গে দক্ষ মেকানিকের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। কিন্তু বিসিএসে টেকনিক্যাল ক্যাডারে এ সুযোগ না থাকায় কৃষি প্রযুক্তি ও যান্ত্রীকরণের সুযোগ পাচ্ছে না কৃষকরা। কৃষি প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের এটি চালুর বিষয়ে বার বার রাস্তায় নামেতে দেখেছি। আমি মনে করি কেবল আশ্বাস নয়, সরকার ও কৃষিমন্ত্রীর বিষয়টি আমলে নিয়ে দেশের কৃষিকে এগিয়ে নেওয়ার সময় এখনই।

কালের কণ্ঠ : কৃষিতে শতভাগ যান্ত্রিকীকরণ হলে বাংলাদেশের কৃষিতে কেমন পরিবর্তন হবে বলে আপনি মনে করেন?
ড. আনিসুর রহমান : দেখেন শতভাগ যান্ত্রিকীকরণ যদিও সম্ভব নয়, তবুও আমাদের সেটির জন্য চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। আমাদের সবসময় চিন্তা করতে হবে কম ব্যয়ে যেন অধিক ফসল ফলানো যায়। আর উৎপাদন ব্যয় কমানো সম্ভব কেবল যান্ত্রিকীরণের মাধ্যমেই। আমাদের সোনার দেশ, আমরা যেখানেই বীজ ফেলি সেখানেই ফসল ফলে। পৃথিবীর কোনো দেশে এমনটি হয় না। এ কারণে কৃষি নিয়ে আমরা স্বপ্ন দেখতেই পারি। যান্ত্রিকীরণের মাধ্যমেই কৃষিতে আমাদের সাফল্য আসছে। ভবিষ্যতের কথা বলা দুরুহ তবে ধারণা করতে পারি, যান্ত্রিকীকরণ সঠিকভাবে বিস্তৃত হলে কৃষিজাত পণ্য রপ্তানিতে বিশ্বে এক নম্বর দেশ হবে বাংলাদেশ।

মন্তব্য

ফেসবুক ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য চুরি, গোপনে সমঝোতায় পৌঁছালেন জাকারবার্গ

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
ফেসবুক ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য চুরি, গোপনে সমঝোতায় পৌঁছালেন জাকারবার্গ
মেটার প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গ। ছবি : এএফপি

ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষায় অবহেলার দায়ে দায়ের করা আট বিলিয়ন ডলারের ক্ষতিপূরণ মামলা নিয়ে গোপন সমঝোতায় পৌঁছেছেন মার্ক জাকারবার্গ ও মেটা প্ল্যাটফরমের বর্তমান ও সাবেক পরিচালকরা। বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের ডেলাওয়ার চ্যান্সারি কোর্টে মামলার শুনানির দ্বিতীয় দিনে এ তথ্য জানান বাদীপক্ষের আইনজীবী।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, সমঝোতার শর্তগুলো আদালতে প্রকাশ করা হয়নি। এমনকি বিবাদীপক্ষের আইনজীবীরাও এই বিষয়ে মুখ খোলেননি।

শুনানি শুরুর ঠিক আগে হঠাৎ বিচারক ক্যাথলিন ম্যাককরমিক মামলাটি মুলতবি ঘোষণা করেন এবং উভয় পক্ষকে অভিনন্দন জানান।

বাদীপক্ষের আইনজীবী স্যাম ক্লসিক জানিয়েছেন, সমঝোতায় পৌঁছাতে তাদের খুব বেশি সময় লাগেনি। ওই দিনই আদালতে সাক্ষ্য দেওয়ার কথা ছিল মেটার পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ও ধনকুবের বিনিয়োগকারী মার্ক অ্যান্ড্রিসেনের। 

এই মামলায় মূল অভিযুক্ত ছিলেন মেটার প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গ, সাবেক প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা শেরিল স্যান্ডবার্গসহ বর্তমান ও সাবেক মিলিয়ে মোট ১১ জন কর্মকর্তা।

বাদী শেয়ারহোল্ডারদের অভিযোগ, এসব ব্যক্তি কোম্পানির গোপনীয়তা লঙ্ঘনের দায়ে ফেসবুককে বিপুল অঙ্কের জরিমানার মুখে ফেলেছেন। ফলে তাদের ব্যক্তিগত সম্পদ থেকেই সেই ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। যদিও অভিযুক্তরা অভিযোগগুলো ‘অযৌক্তিক’ বলে দাবি করেছেন।

উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ট্রেড কমিশন (এফটিসি) ফেসবুককে পাঁচ বিলিয়ন ডলার জরিমানা করে।

২০১২ সালে ব্যবহারকারীদের তথ্য সুরক্ষাসংক্রান্ত যে চুক্তি হয়েছিল, তা লঙ্ঘনের অভিযোগেই এই জরিমানা। এই মামলায় মেটা করপোরেশনকে সরাসরি আসামি করা হয়নি।

মামলার বিষয়ে মেটা কোনো মন্তব্য করেনি। এমনকি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেননি বিবাদীপক্ষের আইনজীবীরাও।

ডিজিটাল কনটেন্ট নেক্সটের প্রধান জেসন কিন মনে করেন, এই সমঝোতা হয়তো সংশ্লিষ্টদের কিছুটা স্বস্তি দেবে, কিন্তু জনস্বার্থে দায় স্বীকার করার সুযোগ হারাল।

তার মতে, মামলাটি চালিয়ে নেওয়া হলে ফেসবুকের ভেতরের অনেক অজানা তথ্য প্রকাশ্যে আসত।

মামলার পরবর্তী পর্যায়ে সাক্ষ্য দেওয়ার কথা ছিল জাকারবার্গের (সোমবার) ও স্যান্ডবার্গের (বুধবার)। এ ছাড়া সাবেক বোর্ড সদস্য পিটার থিল ও রিড হেস্টিংসেরও সাক্ষ্য দেওয়ার সম্ভাবনা ছিল।

বাদীপক্ষের অভিযোগ, মেটার পরিচালনা পর্ষদ ২০১২ সালের এফটিসি চুক্তির শর্ত মানা হচ্ছে কি না, তা পর্যবেক্ষণে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। এমনকি জাকারবার্গ ও স্যান্ডবার্গের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা ফেসবুককে পরিকল্পিতভাবে একটি ‘অবৈধ তথ্য সংগ্রাহক প্ল্যাটফরমে’ পরিণত করেছেন।

২০১৬ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় ব্রিটিশ পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা কোটি কোটি ফেসবুক ব্যবহারকারীর তথ্য হাতিয়ে নেয়। এরপরই এই কেলেঙ্কারির সূত্র ধরে মামলার সূত্রপাত হয়।

গতকালের শুনানিতে বাদীপক্ষের একজন বিশেষজ্ঞ বলেন, ফেসবুকের গোপনীয়তা নীতিতে গুরুতর ঘাটতি রয়েছে। যদিও তিনি নিশ্চিত করে বলতে পারেননি, প্রতিষ্ঠানটি ২০১২ সালের চুক্তি ভেঙেছে কি না।

ফেসবুক জানিয়েছে, ২০১৯ সালের পর থেকে ব্যবহারকারীদের গোপনীয়তা রক্ষায় তারা বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে।

তবে প্রযুক্তি বিশ্লেষক জেসন কিন মনে করেন, ফেসবুক কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা কাণ্ডকে ‘খারাপ কিছু ব্যক্তির কাজ’ হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করেছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, পুরো প্রতিষ্ঠানটির নজরদারিমূলক ব্যাবসায়িক মডেলই ভেঙে পড়েছে এবং সেটি এখনো সংশোধিত হয়নি।

তার মতে, মামলাটি অব্যাহত থাকলে আদালতে হয়তো ফেসবুকের আসল চেহারাটা দেখা যেত—কিন্তু সেই সুযোগটা হারিয়ে গেল। 

মন্তব্য

ব্রিস্টলে চালু যুক্তরাজ্যের শক্তিশালী সুপার কম্পিউটার ‘ইসামবার্ড-এআই’

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
ব্রিস্টলে চালু যুক্তরাজ্যের শক্তিশালী সুপার কম্পিউটার ‘ইসামবার্ড-এআই’
সংগৃহীত ছবি

ব্রিস্টলে আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হলো যুক্তরাজ্যের অত্যাধুনিক সুপার কম্পিউটার ‘ইসামবার্ড-এআই’। দেশটির প্রযুক্তিসচিব পিটার কাইল এটি চালু করেন সরকারের নতুন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা পরিকল্পনার অংশ হিসেবে।

এই কম্পিউটারটি কেমব্রিজের ‘ডন’ নামের আরেকটি সুপার কম্পিউটারের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যুক্তরাজ্যের পাবলিক এআই শক্তিকে আরো উন্নত করবে। এর লক্ষ্য—ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের অপেক্ষমাণ তালিকা কমানো, জলবায়ু পরিবর্তন রোধে নতুন উপায় খোঁজা, ওষুধ উদ্ভাবনসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যবহার করা।

ইসামবার্ড-এআই ইতিমধ্যে জানুয়ারিতে একটি ওষুধ গবেষণা প্রকল্পে ব্যবহার শুরু হয়। এখন এটি সম্পূর্ণরূপে চালু হওয়ায় আরো অনেক সরকারি প্রকল্পে ব্যবহার করা যাবে। এই মেশিনে রয়েছে ৫,৪০০-এরও বেশি এনভিডিয়া গ্রেস হপার সুপারচিপ। এটি হিউলেট-প্যাকার্ডের প্রযুক্তিতে তৈরি এবং সরকারি অর্থায়নে ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয় এটি নির্মাণ করেছে।

যুক্তরাজ্য সরকার জানিয়েছে, আগামী পাঁচ বছরে এ ধরনের সুপার কম্পিউটার ব্যবস্থার সক্ষমতা ২০ গুণ বাড়ানো হবে।

পাশাপাশি স্কটল্যান্ড ও ওয়েলসেও এআই উন্নয়নে বিশাল অঙ্কের বিনিয়োগ করা হবে। সরকার বলছে, ১০ লাখ শিক্ষার্থীকে এআই শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে এবং আরো ৭৫ লাখ মানুষকে এটি নিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। বিশ্বজুড়ে এআই প্রতিযোগিতার মধ্যে যুক্তরাজ্য নিজেকে শুধু ব্যবহারকারী নয়, বরং উদ্ভাবক হিসেবেও গড়ে তুলতে চাইছে।

ইতিমধ্যেই ‘ইসামবার্ড-এআই’ বিশ্বের শীর্ষ ৫০০ সুপার কম্পিউটারের তালিকায় ১১তম স্থানে উঠে এসেছে।

সূত্র : বিবিসি

মন্তব্য

স্পেসএক্সের প্রতিনিধিদল ঢাকায় আসছে কাল

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
স্পেসএক্সের প্রতিনিধিদল ঢাকায় আসছে কাল

বিশ্বখ্যাত মহাকাশ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্সের সহযোগী প্রতিষ্ঠান স্টারলিংকের ব্যবসা পরিচালনা বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট লরেন ড্রেয়ারের নেতৃত্বে একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল আগামীকাল শুক্রবার (১৮ জুলাই) ঢাকায় আসছেন। প্রতিনিধিদলের অন্য সদস্য হলেন আন্তর্জাতিক কৌশল ও সরকারি সম্পর্ক পরিচালক রিচার্ড গ্রিফিথস।

বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানায় ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়।

প্রতিনিধিদলটি বাংলাদেশ সফরে তথ্যপ্রযুক্তি ও যোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়নে স্টারলিংকের সম্ভাব্য বিনিয়োগ ও অংশীদারিত্বের দিকগুলো মূল্যায়ন করবে এবং সরকার ও নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেবে।

পাশাপাশি তারা বাংলাদেশে স্টারলিংকের অফিসিয়াল যাত্রা শুরুর ঘোষণা দেবে।

লরেন ড্রেয়ারের নেতৃত্বে আগত দলটি ব্যবসায়িক সম্ভাবনা যাচাই, নতুন প্রযুক্তির স্থানীয় বাস্তবায়ন এবং গ্রামীণ ও দুর্গম অঞ্চলে ইন্টারনেট পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগে বাংলাদেশকে একটি গুরুত্বপূর্ণ বাজার হিসেবে দেখছে।

স্পেসএক্স ও স্টারলিংকের এই সফর বাংলাদেশের ডিজিটাল ট্রান্সফর্মেশনের লক্ষ্য পূরণে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

আগামীকাল প্রতিনিধিদলটি প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে।

পরে হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টালে প্রেস কনফারেন্সে বক্তব্য রাখবে। রাতে ঢাকার হাতিরঝিলে অনুষ্ঠিত জুলাই পুনর্জাগরণ অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন এবং আগামী ১৯ জুলাই প্রতিনিধিদল দেশে ফিরে যাবেন।

মন্তব্য

তথ্য অধিকার নিয়ে নতুন অভিযোগের মুখে টিকটক

এএফপি
এএফপি
শেয়ার
তথ্য অধিকার নিয়ে নতুন অভিযোগের মুখে টিকটক
ফাইল ছবি : এএফপি

ইউরোপীয় ইউনিয়নের জেনারেল ডেটা প্রটেকশন রেগুলেশনের (জিডিপিআর) বিধি-নিষেধ না মানার অভিযোগে অনলাইন গোপনীয়তা নিয়ে কাজ করা কর্মীরা বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম জায়ান্ট টিকটক ও আরো চীনা মালিকানাধীন দুই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নতুন অভিযোগ করেছেন। বিধি-নিষেধ অনুযায়ী একজন ব্যবহারকারী তার ব্যক্তিগত তথ্য কিভাবে প্রক্রিয়া করা হচ্ছে তা জানার অধিকার রাখেন। তবে প্রতিষ্ঠানগুলো এ বিধি-নিষেধ অনুসরণ করে নি বলে জানিয়েছে অভিযোগকারীরা। 

অস্ট্রিয়াভিত্তিক প্রখ্যাত গোপনীয়তা সংগঠন নোইব (নান অব ইওর বিজনেস) জানুয়ারিতেও এই তিনটি প্রতিষ্ঠানসহ ছয়টি চীনা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিল।

তাদের অভিযাগ ছিল—‘অবৈধভাবে’ ইউরোপীয় নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্য চীনে পাঠানো হয়েছে।

নোইব জানিয়েছে, শেইন, টেমু ও শাওমি অভিযোগকারীদের বাড়তি তথ্য সরবরাহ করলেও টিকটক, আলিএক্সপ্রেস ও উইচ্যাট ইউরোপীয় ইউনিয়নের জিডিপিআর বিধি-নিষেধ লঙ্ঘন করেই চলেছে। টিকটকের বিরুদ্ধে গ্রিসে, আলিএক্সপ্রেসের বিরুদ্ধে বেলজিয়ামে ও উইচ্যাটের বিরুদ্ধে নেদারল্যান্ডসে ডেটা সুরক্ষা কর্তৃপক্ষের কাছে নতুন অভিযোগ করা হয়েছে। অভিযোগে তাদের ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্য কিভাবে প্রক্রিয়া হচ্ছে তা জানানো ও জরিমানা করার নির্দেশ দেওয়ার কথা বলা হয়।

নোইব বলেছে, ‘এই তিনটি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানই ব্যক্তিগত তথ্য কিভাবে প্রক্রিয়া হচ্ছে সেই তথ্য প্রদানের অনুরোধ মানেনি। এতে করে ইউরোপীয় ব্যবহারকারীদের মৌলিক গোপনীয়তার অধিকার চর্চা ও তাদের ব্যক্তিগত ডেটা কিভাবে প্রক্রিয়া হচ্ছে তা জানার সুযোগ নেই। টিকটক অভিযোগকারীর তথ্যের শুধু কিছু অংশ এলোমেলো ভাবে সরবরাহ করেছে, যা বোঝা অসম্ভব।’

ইউরোপে তদন্ত শুরু হওয়ার পর গত সপ্তাহে বেইজিং দাবি করেছে, তারা কোনো প্রতিষ্ঠানকে অবৈধভাবে ব্যবহারকারীর তথ্য সংগ্রহ কিংবা সংরক্ষণের নির্দেশ দেয়নি।

ব্যক্তিগত ডেটা চীনে পাঠানোর দায়ে গত মে মাসে আয়ারল্যান্ডের ডেটা সুরক্ষা কমিশন টিকটককে ৫৩০ মিলিয়ন ইউরো জরিমানা করেছিল।

নোইব জিডিপিআর লঙ্ঘনের কারণে মেটা ও গুগলের মতো বহু মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও মামলা করেছে। তারা বৃহস্পতিবার মন্তব্য করেছে, ‘চীনা অ্যাপগুলো মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলোর চেয়েও খারাপ।’

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ