<p>বিড়িশিল্পকে কুটির শিল্প ঘোষণা করেছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই শিল্পের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য ন্যূনতম শুল্কহার ধার্যের পাশাপাশি নানা ধরনের প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার বিড়ি শ্রমিকদের কল্যাণে সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প চালু করেছে। প্রতিবছর দুই দফায় সরকার ১০ হাজার টাকা করে বিড়ি শ্রমিকদের আর্থিক অনুদান দেয়। এ ছাড়া বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য দুই হাজার ৫০০ টাকা ও গৃহ নির্মাণ অনুদান হিসেবে ৪০ হাজার টাকা দিচ্ছে। অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গের চেয়ে বাংলাদেশে বিড়ির ওপর শুল্ক ১৮ গুণ বেশি। ভারতে এক হাজার হাতে তৈরি বিড়িতে শুল্ক মাত্র ১৪ টাকা। মেশিনে তৈরি বিড়িতে শুল্ক ২৬ টাকা। কিন্তু বাংলাদেশে এক হাজার হাতে তৈরি বিড়িতে শুল্ক ২৫২ টাকা ৫০ পয়সা।</p> <p>বাংলাদেশ বিড়িশিল্প শ্রমিক ফেডারেশন সূত্রে জানা যায়, ২০০১ সালে দেশে বিড়ি কারখানা ছিল ২১৮টি। শ্রমিকের সংখ্যা ছিল ৪৮ লাখ। দফায় দফায় শুল্কহার বৃদ্ধির কারণে বর্তমানে কারখানার সংখ্যা কমে ৯০টিতে দাঁড়িয়েছে। শ্রমিকের সংখ্যা এখন ২০ লাখ। নদীভাঙন ও অভাবী এলাকার প্রতিবন্ধী অসহায় দুস্থ বিধবা মহিলারাই বিড়ি তৈরি করে। একের পর এক কারখানা বন্ধ হওয়ায় এই শ্রমিকরা বর্তমানে বেকার হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। বিড়িশিল্প মালিক সমিতি সূত্রে জানা যায়, ২০০৩-০৪ অর্থবছরে প্রতি হাজারে বিড়ির ওপর শুল্ক ছিল ৩০ টাকা ৯০ পয়সা। বর্তমানে সেই শুল্ক বৃদ্ধি করে ২৫০ টাকা ধরা হয়েছে। ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১১-১২ অর্থবছরে হাতে তৈরি বিড়ির শুল্ক ধরা হয় প্রতি হাজারে ১৪ টাকা। আর মেশিনে তৈরি প্রতি হাজার বিড়িতে শুল্ক ধরা হয় ২৬ টাকা। ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প হিসেবে সরকার বিড়ি শ্রমিকদের সহায়তা হিসেবে হাতে তৈরি বিড়ির ওপর কম শুল্ক নির্ধারণ করেছে। এ ছাড়া যেসব কারখানা ২০ লাখ স্টিকের নিচে বিড়ি তৈরি করে তাদের ওপর কোনো শুল্ক ধরা হয় না।</p> <p>এ ব্যাপারে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক এস নিউজের সিনিয়র এডিটর পার্থ মুখোপাধ্যায় বলেন, বিড়িশিল্পের সঙ্গে একধরনের দেশপ্রেম জড়িত রয়েছে। এখানকার কবি-সাহিত্যিক, শিল্পীরা বিড়ি পান করে। সরকার বিড়িশিল্পকে সুরক্ষা দেওয়ায় এখন গ্রামের লাখ লাখ মহিলা বিড়ি তৈরি করে স্বাবলম্বী হচ্ছে।</p> <p>এ ব্যাপারে বাংলাদেশ বিড়িশিল্প মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শেখ মহিউদ্দিন বলেন, ‘গরিব অসহায় মানুষরাই বিড়ি শ্রমিক হিসেবে কাজ করে। আমরা শ্রমিকদের মানোন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। কিন্তু অযৌক্তিক শুল্কহার বৃদ্ধির কারণে একের পর এক বিড়ি কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আমরা সরকারের কাছে বিড়ির ওপর যৌক্তিক শুল্ক আরোপের আহ্বান জানাচ্ছি।’</p> <p>এ ব্যাপারে বিড়ি শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক এম কে বাঙ্গালী বলেন, ‘সিগারেট কম্পানিগুলোর স্বার্থ রক্ষার জন্য প্রতিবছর বিড়ির ওপর বাড়তি শুল্ক ধরা হচ্ছে। তাতে বিড়ি কারখানা বন্ধ হয়ে আমাদের লাখ লাখ শ্রমিক বেকার হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। আমরা এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে অসহায় বিড়ি শ্রমিকদের বাঁচানোর দাবি জানাচ্ছি।’</p>