<p>আজ ৩০ নভেম্বর। মাসের শেষ দিন। বেলা গড়াতেই মেঘলা আকাশ দেখেছে দেশবাসী। কিছু জায়গায় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিও হয়েছে। আর এই আবহাওয়া যেন আভাস দিচ্ছে, শীত এসে গেছে! তাতেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেয়ে যাচ্ছে একটি বহুল পরিচিত লাইন, ‘নভেম্বর রেইন’। প্রতিবছর নভেম্বর মাসেই শোনা যায় চিরাচরিত লাইনটি। কারণ নভেম্বরের এই ‍বৃষ্টির ছোঁয়া দিয়ে যায় শীতের আগমনী বার্তা। নভেম্বরের এক পশলা বৃষ্টি যেন নতুন করে প্রাণ এনে দেয় ‘নভেম্বর রেইন’ নামক শব্দটিকে। অনেকেরই কৌতূহলী মনে প্রশ্ন জাগে ‘নভেম্বর রেইন’ নিয়ে। আসলে কি এই ‘নভেম্বর রেইন’? যা ঘিরে মানুষের এত আগ্রহ, অনুভূতি। চলুন, জেনে নেওয়া যাক ‘নভেম্বর রেইন’-এর গল্প।</p> <p>‘নভেম্বর রেইন’ লাইনটি এসেছে বিশ্বখ্যাত রক ব্যান্ড ‘গানস অ্যান্ড রোজেস’-এর অমর সৃষ্টি নভেম্বর রেইন গান থেকে। গানটি ১৯৯২ সালে মুক্তি পায়। গানটি একই ব্যান্ডের সদস্য এক্সেল রসের লেখা। ১৯৮৩ সাল থেকে গানটি লেখা শুরু করেছিলেন এক্সেল রস।</p> <p>৯ বছর পর সম্পূর্ণ মনে হওয়ায় গানটিকে মুক্তি দেওয়া হয় ‘ইউজ ইয়োর ইল্যুশন : ১’ অ্যালবামে। গানটি সেই সময় টপচার্টের শীর্ষ তিনে উঠে আসে। গানটিকে অসম্ভব জনপ্রিয়তা এনে দেয় এর মিউজিক ভিডিওটি। প্রায় ১.৫ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে নির্মিত ভিডিওটি এখন অবধি সবচেয়ে ব্যয়বহুল মিউজিক ভিডিওগুলোর তালিকায় রয়েছে। মিউজিক ভিডিওটি এমটিভির সর্বাধিক অনুরোধ প্রাপ্ত ভিডিওতে পরিণত হয় ওই বছর। এ ছাড়া এমটিভির শ্রেষ্ঠ সিনেমাটোগ্রাফির পুরস্কার জিতে নেয় একই বছর।</p> <p>‘নভেম্বর রেইন’ গানের মিউজিক ভিডিওটিতে অভিনয় করেন এক্সেল রসের প্রেমিকা স্টেফানি সেমুর। ভিডিওটির বিয়ের দৃশ্যে যে পোশাক পরেছিলেন স্টেফানি সেমুর তার দাম ছিল ৮০ হাজার ডলার। ভিডিওটিতে একটি হেলিকপ্টার শটে ব্যান্ডের লিড গিটারিস্ট স্ল্যাশের দুই পা মেলে দাঁড়িয়ে গিটারে ঝড় তোলার দৃশ্যটি ভিডিওটিকে অমরত্বের পথে নিয়ে গেছে। ডেল জেমস এর ছোটগল্প ‘উইদাউট ইউ’-কে ভিত্তি করে মিউজিক ভিডিওটি তৈরি। মিউজিক ভিডিওটি দীর্ঘদিনের জন্য টপচার্টের ১ নম্বরে অবস্থান করেছিল।</p> <p><iframe frameborder="0" height="400" sandbox="allow-scripts allow-same-origin" scrolling="no" src="https://www.youtube.com/embed/8SbUC-UaAxE" width="600"></iframe></p> <p>সেই সময়ে বিশ্বব্যাপী তুমুল জনপ্রিয়তা পাওয়া ‘নভেম্বর রেইন’ গানটি বাংলাদেশেও বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করে। বিশেষত আশির দশকের প্রজন্মের কাছে। নব্বইয়ের দশক ছাড়িয়ে একবিংশ শতাব্দীর শুরুতেও গানটি বাংলা শিক্ষিত ও আধুনিক তরুণদের কাছে জনপ্রিয়তা পায়। প্রেমিকার রহস্যময় মৃত্যু, শোক এবং ভালোবাসার অপূর্ণতা এই গানের পরতে পরতে পাওয়া যায়। মনে হয়, এসব বোধ হয় আমাদেরই ব্যর্থ প্রেমের অব্যক্ত মনের কথা। খুব সহজ কিছু শব্দে মানুষের জীবনের এত জটিল একটা সময়কে আর একই সাথে দুটো মানুষের মনস্তাত্ত্বিক লড়াই আর ভালোবাসা ব্যাখ্যা করা হয়েছে গানটিতে। অসাধারণ ভাবে গানটিতে উঠে এসেছে- কোনো কিছুই চিরস্থায়ী নয়,এমনকি নভেম্বর রেইনের মতো জটিল সময় ও একসময় শেষ হয়। এই সময়টা পাড়ি দেওয়া কষ্টের কিন্তু অসম্ভব নয়। হাজারটা জটিলতার মাঝেও মানুষ জিতে যায়, বেঁচে থাকার শক্তি পায়, সেটা শুধু আশা থাকে বলেই। নভেম্বর রেইন আমাদের সেই গল্পই বলে।</p> <p>বাংলাদেশের আবহাওয়া অনুসারে, নভেম্বর মাসেও সাধারণত বৃষ্টি হয়ে থাকে। বিশেষ করে সাগরে নিম্নচাপ থেকে এই বৃষ্টির উৎপত্তি হয়। নভেম্বর মাস শুরু হলেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাই স্মরণ করা হয় নভেম্বর রেইনকে। শীতের শুরু নভেম্বরের এই বৃষ্টির পর থেকেই। তাই শীতের আগমনী বার্তায় সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় ‘নভেম্বর রেইন’। এ সময় হঠাৎ কারো মনে পড়ে যেতে পারে প্রিয় মানুষের কথা। মনে পড়ে যেতে পারে বিষন্ন বিকেল, বৃষ্টিস্নাত বিষাদ আর হারানো মানুষের হাজারও স্মৃতি। নভেম্বর রেইন যেন বার বার স্মৃতিচারণা হয়েই ফিরে আসে আমাদের জীবনে। শীতের চাদরে এক পশলা বৃষ্টির ছোঁয়া নিয়ে।</p>