<p>বাংলাদেশের বিখ্যাত থ্রিলার সাহিত্য লেখক মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিনের গল্প, নাজিম উদ দৌলার চিত্রনাট্য এবং ভিকি জাহেদের নির্মাণ। একটি চমৎকার সিরিজ দেখতে হয়ত এই তিনটি নামই যথেষ্ট! বাংলাদেশের জনপ্রিয় স্ট্রিমিং প্লাটফর্ম চরকিতে সদ্য রিলিজ পাওয়া ‘টিকিট’ সিরিজটি মূলত নির্মিত হয়েছে মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিনের ‘লটারি’ নামের একটি গল্প থেকে। সিরিজটির চিত্রনাট্য লিখেছেন নাজিম উদ দৌলা এবং নির্মাণ করেছেন বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় নির্মাতা ভিকি জাহেদ।</p> <p>ট্রেলার রিলিজের পর থেকেই আলোচনায় চলে আসে ‘টিকিট’ সিরিজটি। ট্রেলার দেখার পর থেকেই দর্শকরা আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছিল। অবশেষে চরকিতে স্ট্রিমিং হচ্ছে সিরিজটি। <strong>তো কেমন হলো ‘টিকিট?’</strong></p> <p>গল্পের মূল উপজীব্য বিষয়বস্তু একটি লটারির টিকিট এবং একটি যাত্রীবাহী বাস। সিরিজের গল্পে দেখা যায়, এক বয়োজ্যেষ্ঠ লোক বাসে উঠে একদম শেষের সারিতে বসেন দুইজন লোকের সাথে; একজন বখাটে মনোজ প্রামাণিক এবং আরেকজন দেখতে জেন্টেলম্যান সিয়াম আজমেদ। তো বয়োজ্যেষ্ঠ লোক তাঁর লটারির টিকিট হাতে নিয়ে পত্রিকায় প্রকাশিত বিজয়ী লটারির নাম্বার মেলাতে গিয়ে দেখেন তিনি ৫০ লাখ টাকার লটারি জিতে গেছেন! সেটা তাঁর পাশে থাকা সেই দুইজন জানতে পারে এবং সেটা জানার পর সেই বয়োজ্যেষ্ঠ লোককে লোভে পড়ে খুন করে ফেলা হয়। তারপর থেকেই সিরিজের মূল কাহিনি শুরু। কে হবে এই ৫০ লাখ টাকার লটারির টিকিটের মালিক এবং সেই লোকের লাশটি তারা কিভাবে আড়াল করবে, পাশাপাশি আরও কে কে তাদের সঙ্গে জড়িয়ে যাবে এই টিকিটের লোভে- এই নিয়েই সিরিজের গল্প।</p> <figure class="image"><img alt="1" height="281" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/saikot/Dev 2/news_370611_1.jpg" width="500" /> <figcaption><sup><em>‘টিকিট’ ওয়েব সিরিজে সিয়াম আহমেদ ও সাফা কবির (ছবি: চরকি)</em></sup></figcaption> </figure> <p>শুরু থেকেই এই সিরিজ নিয়ে দর্শকদের আগ্রহ ছিল তুমুল। তবে সিরিজটি অনেক ক্ষেত্রেই হতাশ করবে দর্শকদের। প্রথমত এই সিরিজের গল্পটা বেশ ভাল। একটি দারুণ গল্পকে অনেকটাই দূর্বল করে ফেলেছে সিরিজের চিত্রনাট্য। সিরিজে কোনো চরিত্রেরই কাঠামো ঠিকঠাকভাবে উপস্থাপন করা হয়নি বলে মনে হয়েছে। যে কারণে দর্শকরা চরিত্রের সাথে মানসিকভাবে যুক্ত হতে অনেকটাই ব্যর্থ হবেন। এমনকী কমেডি দৃশ্যগুলো অনেকটাই আরোপিত মনে হতে পারে। যে টুইস্ট এন্ড টার্নগুলো দেখানো হয়েছে সেগুলো ততটা ইমপ্যাক্ট ফেলতে পারবেনা দর্শকদের মস্তিস্কে। সিরিজটি মূলত শুরুতেই হোটচ খেয়ে গেছে। </p> <p>অভিনয়ের কথা বলতে গেলে সিরিজে সিয়াম আহমেদ, মনোজ প্রামাণিক, সাফা কবির, আব্দুল্লাহ আল সেন্টু এবং এ কে আজাদ সেতু’র পাশাপাশি অন্যান্য অভিনয় শিল্পীরাও অভিনয় করেছেন। তবে সিয়াম এবং মনোজ ভাল অভিনয় করতে সক্ষম হয়েছেন। সাফা কবির তাঁর চরিত্র ফুটিয়ে তুলতে অনেকটাই ব্যর্থ বলা যায়। সেন্টু এবং এ কে আজাদ সেতু ঠিকঠাক ছিলেন। তবে টিকিট জয়ী বয়োজ্যেষ্ঠ লোকের চরিত্রে অভিনয় করা অভিনেতা অনবদ্য ছিলেন তাঁর ছোট ভূমিকায়।</p> <p>সিরিজের সবচেয়ে পজিটিভ দিক হচ্ছে এর আবহ সংগীত। আবহ সংগীত দারুণ ছিল পাশাপাশি চিত্রগ্রহণ ভাল হয়েছে। তবে শিল্প নির্দেশনায় কিছুটা কৃত্তিমতা চোখে লেগেছে। এমনকী বাস চলাচলের দৃশ্যটাও অনেক সময় চোখে লেগেছে। ভিকি জাহেদের মেকিং অনেকটাই দূর্বল ছিল 'টিকিট' সিরিজে। একটি ভাল গল্পকে ঠিকঠাকভাবে চিত্রায়িত করতে ব্যর্থ হয়েছেন ভিকি জাহেদ। চিত্রনাট্য টেনে লম্বা করতে গিয়ে অনেকটাই দূর্বল করে ফেলেছেন সিরিজটি। গল্পটাকে ভালভাবে এক্সিকিউশন করতে পারলে ভাল একটি কাজ হওয়ার সুযোগ ছিল তবে এবার তাতে ব্যর্থ হয়েছেন ভিকি জাহেদ।</p> <p>পরিশেষে বলতে হয়, দর্শক প্রত্যাশা ঠিকমতো পুরণ করতে পারেনি ‘টিকিট।’ তবে হাতে সময় থাকলে দেখে নিতে পারেন। সিনেমাপ্রেমী হিসেবে একবারের জন্য দেখাই যায় ‘টিকিট।’</p>