<p>চিত্রনায়ক শাকিব খানের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগের পর শাকিব মামলা করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু সে মামলা হয়নি। পরেরদিন শাকিব বললেন প্রযোজক বাটপার।</p> <p>আলোচনা-সমালোচনা। শাকিব ওই প্রযোজকের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিচ্ছেন। তবে তিনি পাল্টা অভিযোগ করেছেন, ওই প্রযোজক একজন মিথ্যাবাদী। একজন প্রতারক। সে নায়কের সুনাম নষ্ট করে দেশ থেকে পালিয়েছে। </p> <p>তবে প্রযোজক বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ায় আছেন তা নিশ্চিত করেছেন নিজেই। তবে তিনি পালিয়ে যাননি বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, ‘শাকিব খান বলছে, আমি পালিয়ে এসেছি। এগুলো হাস্যকর। আমি অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক। কাজ শেষ করে নিয়ম অনুযায়ী ঘরে ফিরেছি। আমি ১৫ মার্চে বলেছিলাম সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে যে আমার হাতে সময় কম। অস্ট্রেলিয়ায় বেশ কিছু কাজ আছে। দ্রুত ফিরতে হবে। বিষয়টি আমি শাকিব খান ও চলচ্চিত্রের বিভিন্ন সমিতিগুলোর কাছেও বলেছি।’</p> <p>রহমত উল্লাহ বলেন, ‘আমি কাজের টানেই এসেছি। কারো ভয়ে পালিয়ে আসিনি। আমি আবার আসব। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই হয়তো সকল প্রমাণ নিয়ে দেখা হচ্ছে। শাকিব বিষয়টি সমঝোতার চেষ্টা করেছে। কিন্তু সে যৌক্তিক কোনো সমাধানে আসে না। আমি দেশ ছেড়েছি নিশ্চিত হবার পর এখন নাটক করছে। সে যেহেতু আমাকে ভুয়া-মিথ্যেবাদী বলছে তাই লড়াইটা এবার আইনিভাবে হবে।’</p> <p>রহমত উল্লাহ আরও বলেন, শাকিব বলছে আমি ভুয়া প্রযোজক ও প্রতারক। এর জবাব তাকে আইনিভাবেই দেব আমি। সব কাগজপত্রসহ দেশে এসে পুলিশের কাছে যাব। তখন আইন ঠিক করবে কে প্রতারক। আমি যে ‘অপারেশ অগ্নিপথ’ সিনেমার প্রযোজক এটা শাকিব ভালো করেই জানে। আমার সঙ্গে সিনেমাটি নিয়ে লিখিত চুক্তি আছে। আমার অর্থও লগ্নি হয়েছে শুটিংয়ে। আমার প্রশ্ন, আমি প্রতারক হলে, ভুয়া প্রযোজক হলে শাকিব আমার সঙ্গে সমঝোতার জন্য বসেছিল কেন? জটিলতাগুলোর সমাধান না করে লোক হাসাচ্ছেন তিনি। </p> <p>তিনি বলেন, আমি যেসব অভিযোগ এনেছি তার বিরুদ্ধে, একটাও মিথ্যে না। আমি আমার আইনজীবীর সঙ্গে এখানে কথা বলছি। কীভাবে কি করা যায়, আইনজীবী সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। আমি কিছুদিনের মধ্যেই আইনিভাবে লড়তে বাংলাদেশে আসছি। অল্প কিছুদিন অপেক্ষা করুন।’</p> <p>রহমত উল্লাহ লিখিত আকারে বিস্তর অভিযোগ জমা দেন প্রযোজক-পরিবেশক, পরিচালক, শিল্পী সমিতি ও ক্যামেরাম্যান সমিতিতে। এরপর বিষয়টি সমঝোতার চেষ্টায় ১৬ মার্চ ঢাকার একটি রেস্তোরাঁয় বসেন শাকিব খান ও রহমত উল্লাহ। সেখানে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রযোজক নেতা খোরশেদ আলম খসরু, চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাসও। কিন্তু সেখানে কোনো সমঝোতার হয়নি।</p> <p>শাকিবের অভিযোগে ফেসবুকে সোমবার তিনি কয়েকটি বিষয় পয়েন্ট আকারে তুলে ধরেছেন- সেসব হলো- </p> <p>গতকাল স্থানীয় সময় রাত ৮টায় আমি অস্ট্রেলিয়ায় পৌঁছেছি। এখানে আসার পর জানতে পারলাম অভিনেতা সাকিব খান আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে প্রথমে গুলশান থানায় যান। সেখানে অভিযোগ দায়েরে ব্যর্থ হয়ে তিনি ডিবি পুলিশের কাছে অভিযোগ দেন। তিনি বলেছেন আমি নাকি প্রযোজকদের একজন ছিলাম না। তিনি সাংবাদিকদের কাছে বলেন যে আমি চাঁদাবাজি এবং প্রতারণা করছি। এই ব্যাপারে আমার জবাব এবং বক্তব্য নিচে তুলে ধরা হলঃ </p> <p>১) বিগত ছয় বছর ধরে আমি নানা ভাবে যোগাযোগে ব্যর্থ হয়ে এক রকম নিরুপায় হয়েই বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্প সমিতিতে অভিযোগ দিয়েছিলাম। আমার অভিযোগটি খুবই সিম্পল। অভিনেতা সাকিবকে অভিনয় করার জন্যে অস্ট্রেলিয়াতে আনা হয়েছিলো। এই জন্যে তো তাকে পারিশ্রমিক দেয়া হয়েছিলো। পেশাগত কাজে মনোনিবেশ না করে তিনি এমন কিছু অনৈতিক এবং অবৈধ কাজ করেছিলেন যে গুলোর কারণে ঐ চলচ্চিত্রটিড় কাজ আর শেষ হলো না। একটি প্রজেক্টে অর্থ লগ্নি করে যদি অন্য ব্যাক্তির কারণে আমার সেই বিনিয়োগ নষ্ট হয়, তাহলে সেই ব্যাক্তিকে এই ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করতে পারার নৈতিক এবং আইনি অধিকার আমার আছে। </p> <p>২) নিজের নাম, পরিচয় এবং যোগাযোগের মাধ্যম সঠিক ভাবে উল্ল্যেখ করে, প্রকাশ্য দিনের আলোয় বাংলাদেশ শিল্পী সমিতিতে স্বশরীরে হাজির হয়ে আমি লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলাম। গভীর রাতের অন্ধকারে চুপিসারে এমনটি করিনি। ঐ অভিযোগে যদি একটুও মিথ্যা থাকতো, অথবা আমার যদি অসৎ কোন উদ্দেশ্য থাকতো, তাহলে কি আমি এমন সাহস দেখাতে পারতাম বলে আপনাদের মনে হয়? আমার সাথে কথা বলে কি আপনাদের কখনো মনে হয়েছে যে আমার মধ্যে মিথ্যে বলার প্রবণতা আছে? বিগত প্রায় দুই যুগের মতো সময়ে ধরে আমি অগনিতবার বাংলাদেশী শিল্পীদের অস্ট্রেলিয়ায় পারফর্ম করার ব্যাপারে স্পন্সর করেছি। কেউ কি বলতে পারবেন আমি কখনো কোনদিন কারো সাথে প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছিলাম? অভিনেতা, অভিনেত্রী, গায়ক, গায়িকা, এমন কেউ কি আছেন আমার সততা নিয়ে একটি অভিযোগ করতে পারবেন? </p> <p>৩) আমি অভিযোগ জমা দিয়েছিলাম ১৫ মার্চ ২০২৩ তারিখের দুপুর বেলা। সেইদিন ছিল বুধবার। এটি ছিল একটি কার্যদিবস। এর পরদিন, বৃহস্পতিবারও একটি কার্যদিবস ছিলো। সাকিব খান একজন বুদ্ধিমান ব্যাক্তি। তাঁর তো লিখিত অভিযোগ দেখেই বুঝে যাওয়ার কথা এখানে কোন মিথ্যা বলা হয়েছিল কিনা। যদি সাকিব খানের সেই সৎ সাহস থাকতো, এই দুইটি কার্যদিবসের মধ্যেই তিনি আমার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যাবস্থা নিতে পারতেন। </p> <p>৪) আইনের আশ্রয় না নিয়ে তিনি আমার কাছে পাঠালেন প্রাক্তন স্ত্রী অপু বিশ্বাস কে। সেই অপু আমাকে জানালেন সাকিব মধ্যস্ততা করতে চায়। আমি সরল বিশ্বাসে সাকিবের সাথে দেখা করতে রাজি হলাম। ১৬ মার্চ ২০২৩ তারিখে গুলশানের একটি রেস্তরায় সাকিবের সাথে আমার দেখা হয়। তিনি আমাকে লগ্নিক্রিত অর্থে ফিরিয়ে দেয়ার ব্যাপারে ব্যাবস্থা নেবার প্রস্তুতি দেন। সাকিব ছাড়াও, সেই আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক সমিতির প্রাক্তন সভাপতি খোরশেদ আলম খসরু, অপু বিশ্বাস, সাকিবের চাচাত ভাই মনির এবং অন্য একজন ব্যাক্তি, যার নাম আমার জানা নেই। </p> <p>৫) ১৬ মার্চের সেই মিটিং -এ আমি সাকিব খানকে জানাই যে ১৯ মার্চ ২০২৩ তারিখ ভোর ১ টা বাজে আমি ক্যাথে প্যাসিফিক এয়ার লাইনের ফ্লাইটে অস্ট্রেলিয়ার উদ্দ্যেশ্যে বাংলাদেশ ত্যাগ করছি। </p> <p>৬) আমি পালিইয়ে যাইনি। সেই প্রয়োজনও আমার নেই। প্রয়োজনে আমি আবার দেশে আসব। </p> <p>৭) আমাকে যারা সহযোগিতা করেছেন আমি তাদের সবার কাছে কৃতজ্ঞতা জানাই। বিশেষ করে সাংবাদিক বন্ধুদের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা। চলচ্চিত্র প্রযোজক, পরিচালক এবং শিল্পী সমিতির সকল শুভানুধ্যায়ীদের জন্যে রইলো আন্তরিক ভালোবাসা এবং ধন্যবাদ।<br /> জয় হউক বাংলা চলচিত্র</p>