ছোট পর্দার জনপ্রিয় মুখ জয় রাজ। তার উপস্থিতি মানেই দর্শকদের বাড়তি কিছু প্রাপ্তি। একটু আনন্দ কিংবা চরিত্রের ভেতরের স্বরূপ প্রকাশ হলেই দর্শকদের ঠোঁটে ঝুলে থাকে হাসি। জয় রাজ দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছেন দেশের অভিনয় প্ল্যাটফর্মগুলোতে। কিন্তু সেই অর্থে মেলেনি প্রাপ্তি। গণমাধ্যমগুলোও জয়রাজকে সেভাবে সামনে আনেনি।
এর কারণ হিসেবে জয়রাজ কোনোকিছুইকেই দায়ী করছেন না। বললেন, 'সংবাদ কিংবা সাংবাদিকদের পেছনে কখনোই ছুটিনি। যার ফলে হয়তো খবরের কাগজে আমার চেহারা দেখা যায়নি। আমি অভিনয়ের পেছনেই ছুটেছি। অভিনয়টাই করতে চেয়েছি শুধু।'
১৯৮৮ সালে নাটকের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। এখন অবধি নাটকে কাজ করে যাচ্ছেন অভিনেতা জয় রাজ। পড়াশোনার সুবাদে চট্টগ্রামের এমইএস কলেজের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হন। কলেজ নাটোক দিয়েই শুরু। ৮৮ সালের শুরুর দিকে চট্টগ্রামের একটি থিয়েটারের সঙ্গে যুক্ত হন জয় রাজ। ১৯৯০ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রামে ছিলেন। ১৯৯১ সালে ঢাকার নাট্যদল আরণ্যকে যোগ দেন। এখন পর্যন্ত আরণ্যকেই কাজ করে যাচ্ছেন জয় রাজ।
১৯৯২ সালে মামুনুর রশিদের স্বপ্নের শহর নাটকের মাধ্যমে বিটিভির নাটকে অভিনয় করেন। খুব ছোট চরিত্র বছিল সেটা, কিন্তু সেটাই প্রথম সে সময়টা স্পষ্ট মনে আছে। জয় রাজ নাটকে গুরু মানেন মামুনুর রশিদকে। তিনি বলেন, 'আমি গুরু মামুনুর রশিদের হাত ধরে ঢাকায় অভিনয় শুরু করেছি। আজকে আমি অভিনয়শিল্পী হিসেবে গড়ে উঠেছি বা আজকের আমাকে যা দেখছেন, যতখানি কাজ করার সুযোগ পেয়েছি তা শুধু সম্ভব হয়েছে উনার জন্যই।'
নব্বই দশক থেকে বর্তমান সময়ে নাটক বা চলচ্চিত্রের অনেক পরিবর্তুন দেখেছেন জয় রাজ। এক সময় দেশের নাটক চলচ্চিত্রই ছিল মানুষের প্রধান বিনোদনের জায়গা। সে জায়গায় পরিবর্তন ঘটেছে। এই পরিবর্তনের মাঝেও নিজেদের নাটক ভালো জায়গায় রয়েছে বলে মনে করেন এই অভিনেতা।
জয় রাজ বললেন, 'এখন বসার ঘরে ঢুকে পড়েছে নেটফ্লিক্স কিংবা অ্যামাজন। রয়েছে অনেক অ্যাপস। এসব প্রতিষ্ঠানের নির্মাণের পেছনে যে বাজেট থাকে তার তুলনায় আমাদের বাজেট খুবই সীমিত। এই সীমিত বাজেট দিয়েই আমাদের দেশে যেসব নাটক বানানো হচ্ছে, তা সত্যিই অনেক ভালো মানের। বলতে গেলে সবাই কামা নিয়ে যুদ্ধ করতে গেছে, আমরা গিয়েছি ঢালা তলোয়ার নিয়ে। এই ঢাল তলোয়ার দিয়ে আমরা হয়তো তুলনামূলক ভালো করছি।'
অভিনয়শিল্পীদের যে কোনো প্ল্যাটফরমেই মানিয়ে নিতে হবে মমতামত দিয়ে জয় বলেন, আমরা অভিনয়শিল্পী। যেখানে অভিনয় করার জায়গা তৈরি হবে আমাদের সেখানে অভিনয় করতে হবে। টেলিভিশন ছিল আগে, সিনেমা হল, অনলাইন প্ল্যাটফরমের জন্য আমরা অভিনয় করে যাচ্ছি। সামনে হয়তো আরো পরিবর্তন আসবে, আমাদেরকে সেসবের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।'
তবে দর্শকদের জন্য ঝুঁকিও আছে উল্লেখ করে জয়রাজ বলেন, অনলাইন প্ল্যাটফরম সকলের জন্য উন্মুক্ত। এখানে যে কেউ যে কোনও সময় অদ্ভুত কাণ্ডকারখানা করে যারা ভাইরাল হচ্ছে, সেসবকে আমাদের এড়িয়ে যেতে হবে। অর্থাৎ দর্শককে বেছে নিতে হবে কোনটা ভালো আর কোনো মন্দ। না হলে মন্দ জিনিসগুলোই জায়গা দখল করে নেবে। এটি সম্পূর্ণ নির্ভর করছে দর্শকদের ওপর।
জয় রাজ স্ত্রী ও এক সন্তানকে নিয়ে রাজধানীর উত্তরায় বসবাস করেন। নাটকের সূত্র ধরেই পরিচয়। একমাত্র সন্তান ষষ্ঠশ্রেণীতে পড়ে। জয় রাজের সমসাময়িক কাজের মধ্যে রয়েছে 'লাল মোরগের ঝুটি' 'মীর সাব্বিরের রাত জাগা ফুল' এই দুটি চলচ্চিত্রের কাজ নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন জয়। এছাড়াও সানী সানোয়ার ও শাহীন সুমনের দুটো ওয়েব সিরিজে কাজ শেষ করলেন, বেশকিছু একক ও ধারাবাহিক নাটকে কাজ করছেন। জয় বললেন, 'সম্প্রতি করলাম একটা শর্টফিল্ম, এটির নাম ঢল। এই ধ্রনের ছোটখাটো কাজগুলো অনুপ্রেরণা তৈরি করে। বলা যেতে পারে সামনের পথ আরো সম্প্রসারণ হচ্ছে।'
মন্তব্য