<p>ঢাকাই চলচ্চিত্রের গল্পে নেই কোনো বৈচিত্রতা, আর এই বৈচিত্রতা আনার জন্য বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি উদ্যোগ নিয়েছে নতুন গল্প অনুসন্ধানের। ইতোমধ্যে পরিচালক সমিতি ছটকু আহমেদকে আহবায়ক করে একটি কমিটি গঠন করেছে। সংগঠনটি গল্পকারদের নিকট গল্পও চেয়েছে। একইসাথে গল্প জমা দেয়ার সময় গল্পকারদের নিকট থেকে 'সার্ভিস চার্জ' বাবদ ৫০০ টাকাও চেয়েছে। বিষয়টি বেশ সমালোচনার সৃষ্টি করেছে। এটাকে অনেকে 'দৃষ্টিকটূ' হিসেবেও উল্লেখ করছেন।</p> <p>চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি বলছে, ইদানীং প্রায়শই প্রযোজক পরিচালক অভিনেতা কলাকুশলী সাংবাদিক ও চলচ্চিত্রমোদীদের কাছ থেকে একটা অনুযোগ শোনা যায় যে সিনেমা বানাবার উপযোগী ভালো ও উন্নতমানের মৌলিক গল্পের প্রচণ্ড অভাব। ভালো গল্পের অভাবে ছবির প্রযোজক টাকা লগ্নি করতে চান না, পরিচালক ছবি বানিয়ে তৃপ্তি পান না, অভিনেতা অভিনয়ে কোনও কুশলীতা প্রদর্শন করতে পারেন না, কলা কুশলীরা কাজ করে আস্থা পান না আর দর্শকরা একই গল্পের পুনঃ রূপান্তর দেখে হল বিমুখ হয়ে পরেছেন।  </p> <p>প্রেরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, 'বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি বিশ্বাস করে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিষ্ঠিত, অপ্রতিষ্ঠিত, পরিচিত, অপরিচিত অনেক ভালো মৌলিক গল্পকার, চিত্রনাট্যকার, সংলাপ রচয়িতা আছেন যারা তাদের প্রতিভা বিকাশের যথাযথ সুযোগ পাচ্ছেন না। প্রযোজক ও পরিচালকদের সাথে সহজ মাধ্যমে যোগাযোগ করতে পারছেন না। সহজ যোগাযোগের মাধ্যম ও তাদের প্রতিভা বিকাশের সুযোগ সৃষ্টি করার জন্যে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির উদোগ্যে গল্পকার, চিত্রনাট্যকার, সংলাপ রচয়িতা অন্বেষনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।'</p> <p>এতে আরো বলা হয়, '১লা জুন থেকে ৩১শে অগাস্ট ২০১৯ ইংরাজি এই তিন মাস সময়ের মধ্যে গল্পকার বা চিত্রনাট্যকারকে তার নাম, ঠিকানা টেলিফোন নাম্বার এবং জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটো কপি সহ গল্প বা চিত্রনাট্য অ ফোর সাইজ পেপারে টাইপ কৃত অবস্থায় পরিচালক সমিতিতে জমা দিতে হবে। পরিচালক সমিতির ঠিকানায় রেজিস্টারিকৃত ডাক যোগে বা পরিচালক সমিতির ই-মেইলেও গল্প পাঠানো যাবে। সেই সাথে গল্প যাচাই বাছাই এর সার্ভিস চার্জ বাবদ মাত্র ৫০০ (পাঁচশো) টাকা জমা দিয়ে রশীদ নিতে হবে। পরিচালক সমিতির বিকাশ নাম্বারেও সার্ভিস চার্জ প্রেরণ করা যাবে।'</p> <p>সৃজনশীল লেখকদের নিকট টাকা নেওয়া প্রসঙ্গে কথা হয়, তরুণ লেখক সাদাত হোসাইনের সঙ্গে। তিনি বলেন, 'গল্প আহবানের সঙ্গে টাকা আহবান করার বিষয়টি আমার কাছে হাস্যকর মনে হয়েছে। চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য ভালো গল্প সংগ্রহ করার যে উদ্যোগ তা অবশ্যই ধন্যবাদ পাওয়ার মতো বিষয়। কিন্তু চলচ্চিত্র নির্মাণ যে হতে যাচ্ছে, বা প্রযোজনা করার জন্য প্রযোজকরা প্রস্তুত বা কতটি চলচ্চিত্র নির্মিত হতে যাচ্ছে বিষয়গুলো পরিস্কার থাকলে অনেক ভালো গল্পকাররাই বিষয়টিতে আগ্রহী হবে।'</p> <p>তিনি বলেন, 'তবে এটাও সত্য যে আমাদের দেশে গল্পের অভাব হবে না, টাকা দিয়ে ভালো গল্প আসবে কি না তবে সেটা ভাববার বিষয়। সারাবিশ্বে প্রতিষ্ঠিত বা ভালো লেখকেরা নাটক ও সিনেমার গল্প লিখতে টাকা নেন, পারিশ্রমিক নেন। আর আমাদের দেশে এরকম অসংখ্য উদাহরণ পাওয়া যাবে যারা টাকাও দেবে গল্পও দেবে। তারা শুধু চান তার গল্পে নির্মাণ হোক। এমনটা আর কোনো দেশে দেখতে পাওয়া যায় কি না আমি জানি না। সেক্ষেত্রে আমাদের সেইসব গল্পের মান কেমন হবে সেটা সহজেই অনুমেয়।' </p> <p>এ বিষয়ে তরুণ চিত্রনাট্যকার সুদীপ্ত সাঈদ বলেন,'আমার কাছে বিষয়টি দৃষ্টিকটূ মনে হয়েছে। তরুণদের নিকট থেকে লেখা, গল্প বা চিত্রনাট্য আহবান করলে তাদের উৎসাহ প্রদান করতে হবে তাদের সৃজনশীলতা সম্মান করতে হবে। এক্ষেত্রে টাকা চাওয়াটা চাকরির আবেদনের মতো হয়ে যায়। তরুণদের জন্য এটা ব্যয়সাপেক্ষ। আর আয়োজক গোষ্ঠীর অবশ্যই ফান্ডিং থাকা প্রয়োজন, যেহেতু তারা বাণিজ্যিক কাজ করতে যাচ্ছে।'</p> <p>তবে চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির কোষাধ্যক্ষ মোহাম্মদ সালাউদিন কালের কণ্ঠকে বললেন, 'টাকা হয়তো সবার কাছে নেওয়া হবে তবে যাদের গল্প নির্বাচিত হবে না, তাদের টাকা ফেরত দেওয়া হবে। আর টাকা নেওয়ার জন্য আমরা বিকাশ নম্বর চালু করলেও সেটা নিচ্ছি না। আমরা টাকা নিচ্ছি আমাদের অফিসে রশিদের মাধ্যমে। যাতে গল্প নির্বাচিত না হলেও রশিদ দেখিয়ে তিনি টাকাটা ফেরত নিতে পারেন।'</p> <p>কিন্তু সৃজনশীল লেখকের নিকট থেকে টাকা নেওয়াটা কেন? এ প্রসঙ্গে  মোহাম্মদ সালাউদিন বলেন, 'আসলে পুরো প্রোগ্রামটায় আমাদের কিছু খরচ আছে। যারা নির্বাচিত হবে তাদের নিয়ে একটা ওয়ার্কশপ করবো, গল্প যাচাই-বাছাই কিংবা লেখকদের ট্রেইন-আপ করতে হবে, যার কারণে আমাদের এই খরচটা নিতে হচ্ছে।' </p>