<p>বিগত ১২-১৩ বছর ধরেই একা থাকেন কলকাতার অভিনেত্রী রূপা ভট্টাচার্য। প্রথম যখন বিনোদন জগতে পা রাখেন, তখন তিনি কলেজের ফার্স্ট ইয়ারে। পরিবার এ পেশাকে মেনে নেয়নি। বাড়ি ছাড়তে পিছ পা হননি রূপা। মাথা উঁচু করে সিদ্ধান্তে অনড় থেকেছেন। সম্প্রতি শহরে মেয়েদের একা থাকা প্রসঙ্গে সোশ্য়াল মিডিয়াতে বিশেষভাবে সরব হয়েছেন তিনি। এই নিয়ে কথোপকথনে উঠে এল তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের কিছু অভিজ্ঞতার কথা।</p> <p>‘এখনও পর্যন্ত এদেশে মেয়েদের একা থাকা নিয়ে যে ট্যাবু রয়েছে তা নেহাৎই হাস্যকর! আমি ১৯ বছর বয়স থেকে একা ফ্ল্যাট ভাড়া করে থাকি। ছোটবেলা থেকেই আমার আত্মসম্মান খুব প্রখর ছিল। আমি যে পরিবেশে বড় হয়েছি ছোটবেলায়, সেখানে মারাত্মক লিঙ্গবৈষম্য় ছিল। এমনকি সেই বৈষম্য খাবারের থালাতেও দেখা যেত! সেই যে বেরিয়ে এসেছিলাম, তার পরে আর কোনও যোগাযোগ নেই’, বলে চলেন রূপা, ‘বাবা মারা গিয়েছেন, সে খবরও আমার কাছে সরাসরি এসে পৌঁছায়নি… প্রথম প্রথম খুব কষ্ট হতো। রোজ রাত্তিরে এত কাঁদতাম যে পাশের ফ্ল্য়াটের লোকজন কমপ্লেন করেছিল যে তাদের ঘুমোতে অসুবিধা হয়! একা থাকা নিয়েও প্রতিবেশীদের সমস্যা ছিল। তবে তখন থেকেই আমাকে ‘টিভি’তে দেখা যেত বলে খুব একটা কিছু শুনতে হয়নি! কিন্তু সব মেয়েদের ক্ষেত্রে তো সেটা হয় না।’</p> <p>রূপা জানালেন তাঁর এক বান্ধবীর কথা, যাঁকে অত্যন্ত অনিচ্ছাসত্ত্বেই তাঁর শ্বশুরবাড়ি থেকে বেরিয়ে এসে একা থাকতে হচ্ছে কিছু কারণবশত। তিনি তাঁর স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ একেবারেই চাইছেন না। যেহেতু বাপের বাড়িতে গিয়ে থাকলে তাঁর স্বামীর নিয়মিত সেখানে যেতে অসুবিধা হতে পারে, তাই এই সিদ্ধান্ত। অথচ এই একা থাকা নিয়ে নানা ধরনের বিরূপ মন্তব্য তাঁকে শুনতে হচ্ছে সেই মেয়েটিকে। </p> <p>রূপা সেই প্রসঙ্গ টেনে বললেন, ‘একটি মেয়ে অর্থনৈতিকভাবে স্বাধীন। সে একা থাকতে চাইছে। কিন্তু কোনও মেয়ে একা থাকছে বলেই এমনটা ভাবার কোনও কারণ নেই যে সে রোজ ফ্ল্য়াটে ছেলে ডেকে ফুর্তি করতে চাইছে! এমনটাও হয় যে সে আসলে সারাদিনের কাজের পরে একদম একা থাকতে চাইছে। কারও সঙ্গে কথা বলতেও চাইছে না। শুধু নিজের সঙ্গে সময় কাটাতে চাইছে।’</p> <p>এই কথার সূত্র ধরেই আবার নিজের কথায় ফিরে আসেন রূপা। পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পরে দীর্ঘ সময় ডিপ্রেশনের সঙ্গে যুঝতে হয়েছে তাঁকে। একা থাকতেই চাইতেন অথচ একাকিত্ববোধ তাঁকে অস্থির করে তুলেছিল। রূপা জানালেন যে স্নায়ু শিথিল করার বেশ কিছু ওষুধে আসক্ত হয়ে পড়েছিলেন তিনি। সেই আসক্তি থেকে বেরিয়ে আসেন নতুন এক আসক্তিতে ভর করে। যা নেশা হলেও আসলে তাঁর পেশাতে বিপুলভাবে সাহায্য করেছে।</p> <p>ছয় বছর আগে আমি পুরোপুরি সব ধরনের আসক্তি থেকে বেরিয়ে আসি। সম্পর্কও তো এক ধরনের আসক্তিই। খুব বেশি জিম করতে শুরু করি, কিকবক্সিং শুরু করি। সেটা আমার স্বাস্থ্যের পক্ষে যেমন ভাল হয়েছে আমার পেশাগত জীবনেও সুবিধা হয়েছে’, জানালেন রূপা। বাংলা বিনোদন জগতে খুব কম অভিনেত্রীই রয়েছেন যাঁরা অ্যাকশন বা ফাইট সিকোয়েন্সে দক্ষ। রূপা তাঁদের মধ্যে একজন। বড়পর্দা এবং ছোটপর্দা মিলিয়ে এখনও পর্যন্ত অন্ততপক্ষে ১২টি পুলিশের চরিত্র করেছেন তিনি।</p> <p>২০০৬ সালে ‘রাত ভোর বৃষ্টি’ ধারাবাহিক দিয়ে টেলি-অভিনয়ের সূত্রপাত। ‘কৃষ্ণকলি’, ‘বিজয়িনী’, ‘বউ কথা কও’, ‘কোন কাননের ফুল’, ‘চেকমেট’, ‘ইচ্ছেডানা’ আর এখন সম্প্রতি ‘জয় বাবা লোকনাথ’ ও ‘আমি সিরাজের বেগম’। পাশাপাশি টেলিভিশনে প্রচুর নন-ফিকশন শো করেছেন তিনি। ‘আমার অ্য়াঙ্করিং স্ক্রিপ্ট লাগে না। আমি ভীষণ কথা বলতে ভালবাসি। ক্যামেরা রোল করতে শুরু হলেই অনর্গল কথা বলে যেতে পারি’, জানালেন রূপা। এছাড়া বাংলা ফার্স্ট-এর ওয়েবসিরিজ ‘প্রোপোজাল’-এ কাজ করেছেন। আর অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন একটি অসমাপ্ত ছবির মুক্তির জন্য়।</p> <p>‘বাপ্পাদিত্য বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘কলকাতা ২০১২’-তে একটি অসাধারণ চরিত্র পেয়েছিলাম। একজন মহিলা বাস কন্ডাক্টারের জীবনের উত্তরণ। অল্প কিছু প্যাচওয়ার্ক বাকি শুধু। ছবিটা সম্পূর্ণ না করেই বাপ্পাদা মারা যান। ওঁর ভাই, রাজাদিত্যদা চেষ্টা করছেন ছবিটি যাতে শেষ করে রিলিজ করা যায়’, রূপা জানান। ওই ছবি নিয়ে কথা বলতে বলতেই আবার ফিরে যাওয়া সেই একা মেয়েদের লড়াই করে বেঁচে থাকার প্রসঙ্গে।</p> <p>রূপা বলেন, ‘আমি অনেকদিন ভয়ে ভয়ে বেঁচেছি। তার পরে সেখান থেকে বেরতে পেরেছি। এখন আমি কাজের প্রতি এত আসক্ত, ওটাই আমার সবচেয়ে বড় সুখ। আমার মতো অনেকেই নিজের কাজটুকু নিয়ে একা বাঁচতে চান। আমার প্রশ্ন, এই সমাজ তাঁদের কেন অসম্মানের চোখে দেখবে?’</p>