<p>পরিকল্পিত বাংলাদেশের জন্য ছাত্রসমাজের পক্ষ থেকে জনকল্যাণমূলক, গোষ্ঠীস্বার্থ ও বৈষম্যবিরোধী, পরিবেশবান্ধব নগর ও জনবসতির জন্য পরিকল্পনার নতুন ইশতেহার প্রকাশ করা হয়েছে। জনকল্যাণমূলক, গোষ্ঠীস্বার্থ ও বৈষম্যবিরোধী, পরিবেশবান্ধব নগর ও জনবসতির জন্য পরিকল্পনার নতুন ইশতেহার ঘোষণা করেছে সচেতন ছাত্র ও নাগরিক সমাজ। </p> <p>বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত এক মানববন্ধনে ‘পরিকল্পিত বাংলাদেশের জন্য ছাত্র সমাজ'-এর পক্ষ থেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইয়াসির মোহাম্মদ আমিন এসব ইশতেহার ঘোষণা করেন।</p> <p>পরিকল্পনার নতুন ইশতেহারে সমগ্র দেশের পরিকল্পিত উন্নয়ন নিশ্চিত করতে সমগ্র দেশের জন্য জাতীয় স্থানিক পরিকল্পনা তৈরি করার পাশাপাশি নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা আইন প্রণয়ন করার দাবি করে ছাত্রসমাজ। পাশাপাশি ঢাকার বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) বাতিলের দাবির মাধ্যমে পরিকল্পনাবিহীন উন্নয়নের পেছনে স্বার্থসংশ্লিষ্ট মহলের ব্যবসায়িক ও গোষ্ঠীস্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কার্যকর অনুসন্ধানের মাধ্যমে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানায় তারা।</p> <p>ছাত্রসমাজের পক্ষ থেকে বলা হয়, বহুদিন ধরে গোষ্ঠীস্বার্থে প্রস্তুত কৃত ও সুযোগসন্ধানীদের দ্বারা অপব্যবহৃত, দেশের মাটি ও মানুষকে ধারণ করে না এমন পরিকল্পনা ও উন্নয়ন এর ভ্রান্ত ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। পরিকল্পিত সমাজ সৃষ্টিতে পরিকল্পনাবিদদের যথাযথ সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করে, শিক্ষক, বিশেষজ্ঞ, বিভিন্ন অংশীজনদের প্রতিনিধি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনেযুক্ত ছাত্র-জনতার প্রতিনিধি নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আলোচনা আয়োজনের জন্য আহ্বান জানান তারা।</p> <p>এ সময় বক্তারা বলেন, স্বাধীনতার অর্ধ শতক পরেও বাংলাদেশের পরিকল্পনা ও উন্নয়নের সুফল দেশের সকল নগর কিংবা গ্রামীণ এলাকায় সুষমভাবে পৌঁছাতে পারেনি; নাগরিক সুবিধাদি, আবাসন, পরিবহন, পরিসেবা গণমানুষের জন্য সার্বজনীন হয়নি। নগর ও গ্রামীণ এলাকার সঠিক পরিকল্পনার অভাবে এবং স্বার্থান্বেষী মহলের আগ্রাসনের কারণে হয়েছে অপরিকল্পিত নগরায়ন, পরিবেশ বিধ্বংসী শিল্পায়ন, জলাশয়-জলাভূমি ধ্বংস করে আবাসন, নির্বিচারে গাছ কাটা, কৃষিজমি উজাড় প্রভৃতি অপরিণামদর্শী কর্মকাণ্ড। স্বার্থগোষ্ঠীর চাপে মহাপরিকল্পনা কিংবা নগর উন্নয়ন ও ইমারত নির্মাণ সংক্রান্ত আইন-বিধিমালা বারংবার পরিবর্তিত হয়েছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর নতুন বাংলাদেশে এগুলো পুনরাবৃত্তির কোন সুযোগ নেই। ফলে পরিকল্পিত, বৈষম্যহীন, সমৃদ্ধ ও উন্নত বাংলাদেশ গড়তে জাতির প্রয়োজন পরিকল্পনার নতুন ইশতেহার। </p> <p>পরিকল্পনার নতুন ইশতেহারে সমগ্র দেশের পরিকল্পিত উন্নয়ন নিশ্চিত করতে সমগ্র দেশের জন্য জাতীয় স্থানিক পরিকল্পনা তৈরি করার পাশাপাশি নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা আইন' প্রণয়ন করবার দাবী করে ছাত্র সমাজ। পাশাপাশি ঢাকার বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) বাতিলের দাবির মাধ্যমে পরিকল্পনাবিহীন উন্নয়নের পেছনে স্বার্থসংশ্লিষ্ট মহলের ব্যবসায়িক ও গোষ্ঠীস্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে  কার্যকর অনুসন্ধানের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে।  </p> <p>ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ২০০৮, বেসরকারি আবাসিক প্রকল্পের ভূমি উন্নয়ন বিধিমালা ২০১৫ এর সংশোধনী, ঢাকার বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনার ইতিপূর্বে নেয়া বিভিন্ন সংশোধনী  প্রভৃতি ক্ষেত্রে আবাসন সংশ্লিষ্ট মহল এবং গোষ্ঠীস্বার্থ সংশ্লিষ্ট পেশাজীবীদের ভূমিকা তলিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা আহবান জানায় ছাত্র সমাজ। অবৈধভাবে খোলা জায়গা, খাল, জলাশয় ও নদী ভরাটের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করা, জলাভূমি, জলাশয় দখল করে যে সকল আবাসন প্রকল্প গড়ে উঠেছে সেগুলোর ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা, পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে পরিকল্পনাবিদসহ সংশ্লিষ্টদের স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ করে দেয়ার দাবীও ইশতেহারে বিশেষ গুরুত্ব পায়।</p> <p>মানববন্ধনে অংশ নিয়ে বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব প্ল্যানার্স  (বিআইপি)'র সভাপতি অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, দেশের সুষম উন্নয়ন করতে নগর, গ্রাম ও বিশেষায়িত অঞ্চলের জন্য কৌশলগত পরিকল্পনা, মহাপরিকল্পনা ও বিশদ পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। রংপুর এলাকার মানুষকে কেন স্বাস্থ্যসেবা নিতে ঢাকায় আসতে হবে - স্বাস্থ্য সুবিধাদিসহ সকল নাগরিক সুবিধাদির ঢাকাকেন্দ্রিকতা পরিহার করতে হবে। নগর এলাকায় শিশুদের খেলার মাঠ, হাটা দূরত্ব স্কুল প্রভৃতি সুযোগ তৈরি করে দিতে হবে। শিশুদের স্বাস্থ্যকর ভাবে বেড়ে উঠবার জন্য বাসার ভেতর আলো-বাতাস যেন ঢুকতে পারে এমন পরিকল্পনা ও নকশা করার দাবি করেন তিনি।</p> <p>এইচবিআরআই এর সাবেক পরিচালক প্রকৌশলী আবু সাদেক বলেন, পরিকল্পনাবিদদের পরামর্শ নিয়েই শহরের পরিকল্পনা করা দরকার, অন্য কেউ পরিকল্পনা করলে শহর আর বাসযোগ্য হবে না।</p> <p>বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ছাত্রনেতা সাজিদ ইকবাল বলেন, দেশের বিভিন্ন পরিকল্পনা ও আইনের বাস্তবায়নের বিরুদ্ধে সম্পৃক্ত আবাসন ব্যবসায়ী, শিল্প কারখানার মালিক, রাজনীতিবিদ, আমলা, স্বার্থসংশ্লিষ্ট পেশাজীবি, উন্নয়ন কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সরকারি সংস্থাসমুহের দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।</p> <p>বুয়েটের সাবেক বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক মোসলেহউদ্দিন হাসান বলেন, পরিকল্পনা দলিলকে অনুসরণ করেই যেন অবকাঠামো উন্নয়ন, আবাসন তৈরি, নাগরিক সুবিধাদির সংস্থান হয়; সেটা নিশ্চিত করতে হবে।</p> <p>ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী মো. নূরুল্লাহ বলেন, ভৌত পরিকল্পনা কমিশন গঠনের মাধ্যমের বিগত আমলের অবকাঠামো ও প্রকল্পসমূহের মূল্যায়ন করা দরকার।</p> <p>অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন ডব্লিউবিবি ট্রাস্টের পরিচালক গাউস পিয়ারী, পরিবেশবিদ ইবনুল সাইদ রানা, লুৎফুন্নাহার লোপা, সানজিদা আক্তার, পরিকল্পনাবিদ আবু নইম সোহাগ প্রমুখ।</p>